মানি লন্ডারিং: মানি লন্ডারিং হলো অবৈধ
বা কালো অর্থকে লেনদেন চক্রের মাধ্যমে বৈধ করা বা স্বচ্ছতাদান করার একটি
প্রক্রিয়া। অন্য কথায় সংগৃহিত অর্থের উৎস গোপন করে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
উক্ত তহবিলকে পর্যায়ক্রমে বৈধ আয় হিসেবে পরিগণিত করা। অর্থাৎ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে
যে সব অর্থ আসছে সেগুলিকে ব্যাংকের মাধ্যমে ডিডি, টিটি, এমটি করে অথবা বিভিন্ন
নামে এ্যাকাউন্ট খুলে তা পরবর্তীতে অন্য কোথাও বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করার যে
প্রক্রিয়া তাকে মানি লন্ডারিং বলে।
প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তাঃ এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন
যে যারা মানি লন্ডারিং করে থাকে তারা দেশ, অর্থনীতি তথা সমাজের উপর বিরূপ
প্রতিক্রিয়া ফেলে। সাধারণত চোরাচালানী, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ট্যাক্স ফাঁকি,
রাজনৈতিক দুর্নীতি, অস্ত্র চোরাচালান ইত্যাদি মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে করা হয়।
এতে দেশে আইন শৃংখলার অবনতি ঘটে। চোরাচালানীর ফলে রাজস্ব আয় হ্রাস ঘটে এবং
জনসাধারণ এ পথে আকৃষ্ট হয়, অর্থনীতিতে কালো টাকার প্রভাবে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা
দেয়, স্মাগলিং, বিনিয়োগে অসন্তুষ্টি, ট্যাক্স ফাঁকি ইত্যাদির প্রভাবে অর্থনীতি
দূর্বল হয়ে পড়ে। যা প্রতিরোধ করা অবশ্যই প্রয়োজন।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে
ব্যাংকারের ভূমিকাঃ মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রনে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই আইন প্রণয়ন করেছে।
বাংলাদেশ ও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ২০০২ সালের ৭ ই এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক মানি
লন্ডারিং সম্পর্কে গাইড লাইন তৈরি করে সমস্ত ব্যাংকগুলোকে তা মেনে চলার জন্য
পরামর্শ প্রদান করেছে। যেহেতু লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হয়ে থাকে সেজন্য
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী একজন ব্যাংক কর্মকর্তা নিম্নোক্তভাবে মানি
লন্ডারিং প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
ক) গ্রাহকদের পরিচয়ের
সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করবেন। হিসাবধারী গ্রাহক ব্যতিত অন্য কারো অনুরোধে
অর্থ প্রেরণের জন্য কোন ড্রাফট/টিটি/এমটি ইস্যুর ক্ষেত্রে অনুরোধকারী পক্ষের পূর্ণ
নাম ও ঠিকানার সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত
নির্দেশক অনুসরণ করতে হবে। খ) গ্রাহকের হিসাবের লেনদেন বন্ধ হওয়ায়ার ক্ষেত্রে
উক্তরূপ বন্ধ হওয়ার দিন হতে অনূন্য পাঁচ বৎসরকাল বিগত সময়ের লেনদেন হিসাবে সংরক্ষণ
করবেন। গ) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে প্রত্যেক
ব্যাংক একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রধান কার্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট
এবং শাখা পর্যায়ে একজন কর্মকর্তা অভ্যন্তরীন পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা করবে।
এক্ষেত্রে শাখায় কর্মরত ব্যক্তি লেনদেন পরিবীক্ষণ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রন নীতি ও
পদ্ধতিসমূহ দেখবেন। ঘ) অস্বাভাবিক লেনদেন সনাক্তকরণ ও গ্রাহকের হিসাবের সম্ভাব্য
লেনদেনের অনুমিত মাত্রা সম্পর্কে গ্রাহকের ঘোষণা সংগ্রহ করবেন। ঙ) অস্বাভাবিক
লেনদেন সংঘটিত হচ্ছে মনে করলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জ্ঞাত করানো যেতে পারে। মনোনীত
কর্মকর্তা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট পেশ করবেন। মোট কথা
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সার্কুলার মোতাবেক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে উক্ত
বিধানসমূহ সুষ্ঠুভাবে পালন করাই একজন ব্যাংক কর্মকর্তার মূল দায়িত্ব।
No comments:
Post a Comment