অনলাইন ব্যাংকিং: অনলাইন ব্যাংকিং বোঝার
আগে কম্পিউটার পরিভাষায় অনলাইন বলতে কি বুঝায় সেটি প্রথমে জানা দরকার। অনলাইন বলতে
এমন একটি ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে অনেকগুলো আন্তঃসংযোগকৃত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
কম্পিউটার সিস্টেম এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদন করে। যেমন কোন
কম্পিউটারে যখন কোন ব্যক্তি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ব্যবহার করে তখন ঐ কম্পিউটার
অনলাইনে রয়েছে বলা হয়।
ব্যাংকিং জগতে
কম্পিউটারাইজেশনের সাথে সাথে অনলাইন ব্যাংকিং এর কথাও প্রচলিত হয়ে পড়েছে। অনলাইন
ব্যাংকিং এর প্রধান উপাদান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। আমরা জানি, কোন ব্যাংক শাখার
অনেকগুলো কম্পিউটার ল্যান এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। আবার একটি ব্যঅংকের প্রধান
কার্যালয় এবং এর শাখাগুলোর ল্যান এর মধ্যে বেতার তরঙ্গ, অপটিক্যাল ফাইবার বা অন্য
কোন মাধ্যমের সাহায্যে গোটা দেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ হতে পারে। মাল্টিন্যাশনাল
ব্যাংকগুলো খুবই উন্নতমানের যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বিশ্বের শাখাগুলোর
মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। আমরা ব্যাংকে বিদ্যমান এই গোটা ব্যবস্থাটিকে ব্যাপক অর্থে
অনলাইন ব্যাংকিং বলতে পারি। অর্থাৎ ব্যাংকে ল্যান এবং ওয়ান এর সাহায্যে যে সমস্ত
ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হয় তাকে অনলাইন ব্যাংকিং বলে। অনলাইন ব্যাংকিং এর এমন
কতগুলো উদাহরণ হচ্ছে- এটিএম, অটোমেটেড ফান্ড ট্রান্সফার, ইলেকট্রনিক চেক,
ইলেকট্রনিক মানি ইত্যাদি। ক্ষুদ্র পরিসরে ল্যান এবং বৃহত্তর পরিসরে ওয়ান যে
ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করুক না কেন তা অনলাইন ব্যাংকিং এর আওতাভূক্ত।
অনলাইন ব্যাংকিং এর
সুবিধাঃ- অনলাইন ব্যাংকিং ব্যাংকিং জগতে আশীর্বাদ স্বরূপ। এটি ব্যাংকিং জগতে এক
বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। নিম্নে অনলাইন ব্যাংকিং এর সুবিধা উল্লেখ করা হল-
ক) চব্বিশ ঘন্টা অর্থাৎ যে কোন
সময়ে এটিএম এর সাহায্যে অর্থ উত্তোলন করা যায়। খ) অতি অল্প সময়ে যে কোন স্থানে যে
কোন পরিমান অর্থ প্রেরণ করা সম্ভব। গ) ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মান উন্নত করা যায়। ঘ)
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। ঙ) ব্যাংকের
সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মুনাফাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। চ) অনলাইন
ব্যাংকিং চালুর ফলে গ্রাহকের অযথা হয়রানি বন্ধ করা যায়। ছ) আন্ত শাখা ও আন্ত
ব্যাংক লেনদেন সমন্বয় সহজতর হয়। জ) ইলেকট্রনিক ফান্ড ও ইলেকট্রনিক মানি ব্যবহারের
ফলে গ্রাহকের ব্যবসায়িক লেনদেন সহজতর হয়।
অনলাইন ব্যাংকিং এর
অসুবিধাঃ আমরা
জানি অনলাইন ব্যাংকিং পদ্ধতি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত কম্পিউটার
নেটওয়ার্ক এর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা। আজকাল আধুনিক মানের প্রত্যেকটি ব্যাংকই
অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দেবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই ব্যবস্থার অসংখ্য সুবিধার
পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
ক) যেহেতু এটি
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত একটি ব্যবস্থা তাই এর সংস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচও
অনেক বেশি যা আর্থিকভাবে দুর্বল কোন ব্যাংকের পক্ষে বহন করা কষ্টকর। খ) এই
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর
সাহায্য ছাড়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মীর অভাব এবং তাদের
বিরাট অংকের মাইনে প্রদান ব্যাংকের জন্য একটি অসুবিধার কারণ। গ) যেহেতু অনলাই
ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্বলিত একটি ব্যবস্থা তাই হ্যাকারদের আক্রমনের সম্ভাবনা থাকে।
এতে করে গোপনীয়তা যেমন প্রকাশ হতে পারে তেমনি কম্পিউটার সিস্টেমেও দেখা দিতে পারে
গোলযোগ। ঘ) প্রাকৃতিক অথবা অন্য কোন কারণে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এই
ব্যবস্থা অসুবিধাগ্রস্ত হয়।
ক্রেডিট কার্ডঃ ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর
মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এটি ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত এক
ধরণের প্লাস্টিক কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক তার লেনদেন পরিশোধের জন্য এটি
ব্যবহার করে থাকে। সাধারণত ব্যাংক কোন মূল্যবান গ্রাহককে কোন নির্দিষ্ট কিছু জমার
বিপরীতে(যেমন সঞ্চয়পত্র , এফটিআর,) একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের লিমিট এ কার্ড
সরবরাহ করে থাকে। কার্ডে গ্রাহকের ছবি, নমুনা স্বাক্ষর ইত্যাদি সংযোজিত থাকে। সাধারণত
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে দোকানী/ব্যবসায়ী কার্ড সম্পর্কে
পরিপূর্ণ নিশ্চিত হবার পর কার্ডধারীর নাম, কার্ড প্রতিষ্ঠানের নাম, কার্ড নম্বর
এবং অন্যান্য তথ্য সম্বলিত বিল তৈরি করে কার্ডধারীর কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়
এবং পরে দোকানী বিলের কপি তার ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে নেয়। এই প্রক্রিয়ায়
লেনদেন সহজতর ও জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে এই কার্ডের নকল বের হওয়ায় অনেকেই বিব্রত বোধ
করছে।
রেডি ক্যাশ কার্ডঃ নগদ টাকার বিপরীতে
ব্যাংক হতে সরবরাহকৃত এক ধরণের প্লাস্টিক কার্ডকে রেডি ক্যাশ কার্ড বলে। এই
স্মার্ট কার্ডটি তৈরি করা হয়েছে সর্বাধুনিক মাইক্রো প্রসেসর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি
করে। নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি কার্ডে রয়েছে চার সংখ্যার একটি গোপন ব্যক্তিগত
নম্বর, এর ফলে কেবল গ্রাহকই পারবেন কার্ডটি ব্যবহার করতে। এছাড়াও কার্ডে রয়েছে
গ্রাহকের ছবি, নমুনা স্বাক্ষর ও মূদ্রিত নাম। ব্যাংকে জমা রাখা নগদ টাকা এই কার্ডের
মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা আর সেই সাথে ইউটিলিটি বিল
পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে রেডিক্যাশ কার্ডে। রেডিক্যাশ প্রতীক চিহ্ন সম্বলিত
দোকানপাট, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রতিষ্ঠানে এই কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটার পাশাপাশি
এসব বিল প্রদান করা যায় সংশ্লিষ্ট দোকান/প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত রেডিক্যাশ মেশিনের
মাধ্যমে। রেডিক্যাশ মেশিনে ইউটিলিটি বিল জমা দেয়ার পর মেশিন থেকে গ্রাহককে
প্রমাণস্বরূপ ছাপানো একটি রশিদ দেয়া হয়। মূলতঃ নির্দিষ্ট দোকান/প্রতিষ্ঠানের পণ্য
মূল্য পরিশোধের জন্য এই কার্ড ব্যবহার করা হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট
জায়গায় পণ্য বা সেবা ক্রয় করে বা অন্যান্যভাবে খরচ করে বিল পরিশোধ করা হয়। রেডি
ক্যাশ কার্ড হতে দোকানী মেশিনে ব্যালেন্স জানার পর কার্ডধারীর কাছ থেকে বিল এতে
স্বাক্ষর করে নেয় যা পরবর্তীতে দোকানী তার নিজেন হিসাবে জমা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে নেয়।
No comments:
Post a Comment