বিনিয়োগ মূল্যায়নঃ বিনিয়োগের সাথে বিপুল
পরিমান অর্থ জড়িত। বিনিয়োগ লাভজনক হলেই তার রিটার্ন ফেরত পাবার সম্ভাবনা থাকে।
এজন্য কোন প্রকল্পে অর্থায়নের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ প্রকল্পটি
লাভজনক হবে কিনা বা তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সে বিষয়ে বিবেচনা করে থাকে। এ জন্য
সঠিক বিনিয়োগ নির্বাচনের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প সম্পর্কে
বিশদভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়। বিনিয়োগ মূল্যায়ন এক ধরণের একটি বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে
বোঝায় যার মাধ্যমে একটি প্রকল্প প্রস্তাবের বাস্তবানুগতা এবং লাভযোগ্যতা যাচাই করে সেটির গ্রহণযোগ্যতা বা
তাতে বিনিয়োগ সংক্রাত
সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। সাধারণত অর্থসংসহানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ নতুন প্রকল্পে ঋণদান
বা বিনিয়োগের পূর্বে প্রকল্পে মূল্য নিরূপণ করে থাকেন। বিনিয়োগ মূল্যায়নের সময় তার
কারিগরি, আর্থিক ও অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনাগত সম্ভাব্যতা
পরীক্ষা করে দেখা হয়।
বিনিয়োগ মূল্যায়নের
প্রধান প্রধান দিকসমূহঃ কোন প্রকল্পে অর্থায়নের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ
বিনিয়োগ প্রকল্পটি লাভজনক হবে কিনা বা তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সে বিষয়ে বিবেচনা
করে থাকে। এ জন্য সঠিক বিনিয়োগ নির্বাচনের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প
সম্পর্কে বিশদভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়। সাধারণত অর্থসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ
নতুন প্রকল্পে ঋণদান বা বিনিয়োগের পূর্বে প্রকল্পে মূল্য নিরূপণ করে থাকেন। এই মূল্যায়ন
বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে নিমেণ তা বর্ণনা করা হলঃ
ক) কারিগরি সম্ভাব্যতা
মূল্যায়নঃ বিনিয়োগের কারিগরি মূল্যায়নের সময় তা প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত বিবেচনায়
যথাযথ কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এখানে
উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ধরণ ও পরিমান, উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া, উৎপাদনের
জন্য কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি
ইত্যাদি এবং ভৌত সুবিধাদি, ভবনাদি ও তদভ্যন্তরে যন্ত্রসরঞ্জামাদি বিন্যাস, আমদানীকৃত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির সাথে সহানীয় প্রযুক্তি ও কর্মীদক্ষতার সমন্বয়
ইত্যাদি পর্যালোচনা প্রধান বিষয়। কারিগরি মূল্যায়নের সময় সাধারণত - প্রকল্পের উদ্দেশ্য
ও নকশা, পন্য মিশ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা, প্রযুক্তি ও প্রিক্রয়া, ভূমি ও অবসহান,
দালান ও অবকাঠামো, মেশিন ও যমএপাতি, প্রযুত্তিু সেবা ও মান নিয়মএন, কাঁচামালের
উপযোগিতা, যোগাযোগ, যমএাংশের মূল্যায়ন ইত্যাদি বিবেচনায় আনতে হয়।
খ) বিপনন মূল্যায়নঃ বিনিয়োগের বিপনন মূল্যায়নে
দেখতে হয় বিনিয়োগ প্রকল্পে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা সামগ্রীর চাহিদা ও সরবরাহ পরিসিহতি
এবং সে সবের মূল্য ও বাজার বিবেচনায় বিপননের মাত্রা ও গুণগত বৈশিষ্ট্যসমূহ।
এক্ষেত্রে বিপননের লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রসতাবিত বিপনন কৌশলসমূহ পরীক্ষা করে দেখতে
হয়। পণ্য ও সেবা সামগ্রীসমহের চাহিদা যেহেতু জনসংখ্য ও জনসাধারণের আয়, দেশের
সামগ্রিক ও বিশেষ বিশেষ এলাকায় উন্নয়নের ধারা, পণ্য বা সেবার মূল্য, প্রযুত্তিু,
রতচি ও ভোগ অভ্যাস, বিকল্প ও সম্পূরক পণ্যাদির মূল্য সরবরাহ, আমদানী ও রফতানী
পরিসিহতি ও ভবিষৎ অর্থনৈতিক অবসহা সম্পর্কে পূর্বানুমান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের
উপর নির্ভরশীল সে কারণে চাহিদা বিশ্লেষন একটি অত্যমত জটিল বিষয়। এ কারণে বিপনন
মূল্যায়নে চাহিদা বিশ্লেষণ কতখানি তথ্যনির্ভর এবং কি মাত্রায় যথাযথ তা যাচাই করা
একামত অপরিহার্য। বিপনন মূল্যায়নে ভোত্তুা সনাত্তুকরণ, পণ্য চাহিদা, যোগান
বিশ্লেষণ, চাহিদা-যোগানের পার্থক্য নিরদপন, কাঁচামালের প্রাপ্যতা, রপ্তানী বাজার
মূল্য ইত্যাদি বিবেচনায় আনতে হয়।
গ) ব্যবসহাপনাগত
সম্ভাব্যতা মূল্যায়নঃ বিনিয়োগ প্রকল্পের ব্যবসহাপনাগত সম্ভাব্যতা মুল্যায়নের সময় তাতে নিয়োজিত
শ্রমিক ও কর্মচারী, উৎপাদন ও বিত্রুয় পরিচালনা সামগ্রিক কর্মধারা সংগঠন ও নিয়মএন
এবং এক কথায় অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মী, অর্থ, মালামাল ও যমএপাতি ও বাজার
তৎপরতা ব্যবসহাপনার বিভিন্ন দিক যাচাই করা হয়। বিশেষ করে উদ্যোত্তু, কর্মকর্তা ও
শ্রমিকদের দক্ষতার বিষয়টিকে এ মূল্যায়নে
সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। ব্যবসহাপনা সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে
ব্যবসহাপনায় নিয়োজিত কর্মীবাহিনীর সক্ষমতা, তাদের কার্যকরী দক্ষতা এবং তাদের
মধ্যেকার ব্যত্তিুক সম্পক্য ইত্যাদি পর্যালোচনায় আনা হয়। এক্ষেত্রে ব্যবসহাপনার
অক্ষমতার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্ল্যানিং অবাসতব হওয়ার সাথে সাথে সাংগঠনিক দূর্বলতা
এবং কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়মএনে ফলপ্রসূ প্রভাবের উপর বিরদপ প্রতিত্রিুয়া সৃষ্টি
হয়। এ অবসহা হতে উত্তরণের জন্য ব্যবসহাপনাগত দিক থেকে ভালো জ্ঞানসম্পন্ন/দক্ষতা
সম্পন্ন ও প্রশিক্ষিত ব্যত্তিু নিয়োগের পাশাপাশি যাদের প্রশাসনিক দক্ষতা, দায়িত্ব
ও কর্তব্যবোধ এবং আইনকানুন সম্পর্কে প্রচুর ধারণা আছে তাদেরকে ব্যবসহাপনার
ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হলে বিনিয়োগের উন্নয়ন ঘটতে পারে।
ঘ) আর্থিক সম্ভাব্যতা
মূল্যায়নঃ আর্থিক সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমান
এবং এই অর্থের উৎসসমূহ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ যাচাইকল্পে বিনিয়োগের
তহবিল প্রবাহ বিশ্লেষণ এবং উদ্বৃত্তপত্রকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হয় এবং এখান
থেকে বিভিন্ন আর্থিক অনুপাত যেমন, ঋণ-সমমূলধন অনুপাত, ঋণ-নিরাপত্তার বিভিন্ন
অনুপাত, ঋণ কৃত্যক আবরণ অনুপাত, সিহরীকৃত আয় ও অসিহরীকৃত আয়ের ঋণপত্রাদির মূল্যের
অনুপাত, ব্যবসহাপনাগত দক্ষতা অনুপাত, মুনাফা-ক্ষমতা অনুপাত ইত্যাদি জানা যায়।
আর্থিক সম্ভাব্যতা
মূল্যায়নে আরও যেসব গুরতত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয় সেগুলি হচ্ছে প্রকল্পের
না-লাভ না-লোকসান বিশ্লেষণ, অভ্যমতরীন আয় হার এবং প্রকল্পের সেনসিটিভিটির
মাত্রাসমূহ।
আর্থিক সম্ভাব্যতা
মূল্যায়ন খুবই গুরতত্বের সাথে করতে হয়। এ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবচেয়ে বেশি
লাভজনক ও আকর্ষণীয় প্রকল্পটি নির্বাচন করা। যাতে করে বিনিয়োগের মাধ্যমে
প্রতিষ্ঠানের আর্থিক আয় সম্ভব হয়। এ জন্য আর্থিক সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের সময়
প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়াবলী ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
ঙ) অর্থনৈতিক দিক
মূল্যায়নঃ অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা বিচারের সময় বিনিয়োগ প্রকল্পটি সামগ্রিকভাবে জাতীয়
অর্থনীতির জন্য তথা সমাজের জন্য কতখানি লাভজনক সেটি বিবেচনা করা হয়। এই লক্ষ্যে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে বিনিয়োগ প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা পরীক্ষা
করে। বিনিয়োগ প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতাকে সামাজিক ব্যয়-আয় বিশ্লেষণও বলা হয়।
এক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় উপাদান ও সামগ্রীসমূহের মূল্য ব্যয় এবং উৎপাদিত
পণ্য ও সেবাসামগ্রী থেকে প্রাপ্ত আয় বাজার দরে না করে একটি সামাজিক হিসাব দরে গণনা
করা হয়। অর্থনৈতিক মূল্যায়নের
ক্ষেত্রে কতগুলো পরীক্ষা বা
বিশ্লেষণ করতে হয়। যেমন - ক) অর্থনৈতিক উপযোগের হার খ) বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি গ)
জিডিপি তে অবদান ঘ) কর্মসংসহানের সুযোগ ঙ) সংযোগ প্রভাব ইত্যাদি।
বিনিয়োগ মূল্যায়ন একটি
অত্যমত গুরতত্বপূর্ণ বিষয়। এ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবচেয়ে বেশি লাভজনক ও
আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রকল্প নির্বাচন করা। যাতে করে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের
আর্থিক আয় সম্ভব হয়। এ জন্য বিনিয়োগ মূল্যায়নের সময় উপরোত্তু দিকগুলি সঠিকভাবে
পরীক্ষা/বিশ্লেষণ করে দেখতে হয়।
No comments:
Post a Comment