Central Banking and Monetary Policy (Bangla) - Banking Diploma Education

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, March 10, 2015

Central Banking and Monetary Policy (Bangla)


প্রশ্ন ১। অর্থ সরবরাহের সংজ্ঞা দিন। ‘‘উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রা’’ এবং ‘‘ব্যাপক মুদ্রার’’ মধ্যে পার্থক্য কি? একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিভাবে অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? নভেম্বর-২০১০


মুদ্রানীতির হাতিয়ারসমূহ অথবা মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণঃ 

খোলাবাজার কর্মকান্ডঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়কে খোলাবাজার কর্মকান্ড বলে। এই হাতিয়ারের সাহায্যে কেন্দ্রীয় ব্রাংক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র ক্রয় করে তখন বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়ে। আর এই রিজার্ভ হচ্ছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রার প্রধা্ন অংশ। উল্লেখ্য যে, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রাকে আর্থিক ভিত্তি বলা হয় এবং তা বাড়লে ব্যাংক সমূহের আমানত বাড়ে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র বিক্রয়করে তখন আর্থিক ভিত্তি হ্রাস পায় এবং ব্যাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার পরিমাণ সংকোচিত হয়।



ব্যাংক হার পরিবর্তনঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হারে বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দেয় সে হারকে ব্যাংক হার বলে। ব্যাংক হার বাড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দান হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার স্টক হ্রাস পায়। আবার ব্যাংক হার কমালে বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা বাড়ে।



রিজার্ভ হার পরিবর্তনঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের কত শতাংশ রিজার্ভ রাখবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে। এ রিজার্ভ হার বাড়িয়ে দিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দা ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার যোগান হ্রাস পায়। আবার রিজার্ভ হার কমিয়ে দিলে মুদ্রার যোগান বাড়ে।



কারেন্সী নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক উস্যুকৃত নোটের পরিমাণ পরিবর্তন করে মোট অর্থের স্টক পরিবর্তন করা যায়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্রাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত নোট সমূহ আর্থিক ভিত্তির উপাদান।



উপরোক্ত হাতিয়ার ছাড়াও নৈতিক চাপ, ঋণ রেশনিং ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক কর্তৃপক্ষ মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।






প্রশ্ন ২। অর্থের চাহিদা বলতে কি বুঝায়? কোন্ কোন্ উপাদানগুলো অর্থের চাহিদা নিরূপন করে? জুন-২০১০

অর্থের চাহিদাঃ সাধারণতঃ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সরকার স্বীকৃত সকল প্রকার ধাতব ও কাগজী মুদ্রাকে অর্থ বলা হয়। তবে বিনিময়ের মাধ্যম ছাড়াও অর্থ সঞ্চয়ের বাহন, ঋণ পরিশোধ, দ্রব্য ও সেবার দাম নির্ধারণ- প্রভৃতি প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। আধুনিক অর্থনীতিতে অর্থ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক ভুমিকা পালন করে থাকে । মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখতে চায় আবার সঞ্চয় আকারেও অর্থ জমা রাখতে পারে। তবে নগদ অর্থ হতে ধরে রাখার প্রবণতাকেই অর্থের চাহিদা বলা হয়। এক কথায়, কোন নির্দিষ্ট সময়ে সমাজের জনগন বিভিন্ন প্রয়োজনে যে পরিমাণ নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখতে চায়, তাকে অর্থের চাহিদা বলে।

অর্থের চাহিদাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

1. লেনদেন জনিত অর্থের চাহিদা 
২. সতর্কতামূলক অর্থের চাহিদা এবং 
৩. ফটকা কারবার জনিত অর্থের চাহিদা।



অর্থের চাহিদার নির্ধারকঃ

অর্থের লেনদেন চাহিদা, সতর্কতামুলক চাহিদা এবং ফটকা চাহিদা অনেকগুলো উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থের চাহিদার নির্ধারক সমূহ হলো -

1. আয়ঃ আয়ের উপর অর্থের চাহিদা বিশেষ করে অর্থের লেনদেন ও সতর্কতামুলক চাহিদা নির্ভর করে। আয় বেশী হলে অর্থের চাহিদা বেশী হয় আবার আয় কম হলে অর্থের চাহিদা কম হয়।

2. ভোগ প্রবণতাঃ ভোগ প্রবণতা অর্থের লেনদেন চাহিদাকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। আয় বেশী হলে নগদ অর্থের চাহিদা বেড়ে যায়। পক্ষান্তরে, ভোগ প্রবণতা কম হলে নগদ অর্থের চাহিদা কমে।

3. সঞ্চয় প্রবণতাঃ মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা নগদ অর্থের চাহিদাকে প্রভাবিত করে। সঞ্চয় প্রবণতা বেশী হলে বর্তমানে লেনদেনসহ অন্যান্য সকল প্রয়োজনে নগদ অর্থের চাহিদা কম হয়। আবার সঞ্চয় প্রবণতা কম হলে বিভিন্ন প্রয়োজনে নগদ অর্থের চাহিদা বেশী হয়।

4. আয় প্রাপ্তির ধরণঃ আয় উপার্জন বা প্রাপ্তির মেয়াদের উপর নগদ অর্থের চাহিদা নির্ভর করে। আয় প্রাপ্তির মেয়াদ বেশী হলে নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখার প্রবণতা বেশী হয়। আবার আয় প্রাপ্তির মেয়াদ কম হলে অর্থের চাহিদা কম হয়। যেমন মাসিক বেতন কাঠামোর অধীনে একজন কর্মচারীকে মাসের প্রথমেই বেতনের একটি বড় অংশ হাতে নগদ রেখে দিতে হয়। আবার সাপ্তাহিক বেতন কাঠামোর অধীনে কম অর্থ রাখলেই চলে।

5. উন্নত মুদ্রাবাজারঃ অর্থের চাহিদা মুদ্রাবাজরের উপর নির্ভর করে। উন্নত মুদ্রাবাজার তথা ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থা উন্নত হলে নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখার প্রবণতা মানুষের কমে যায় তথা অর্থের চাহিদা কমে। আবার মুদ্রা বাজার অনুন্নত হলে অর্থের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

6. সুদের হারঃ সুদের হারের উপর অর্থের চাহিদা বিশেষ করে অর্থের ফটকা চাহিদা নির্ভর করে। সুদের হার কমলে অর্থের ফটকা চাহিদা বাড়ে আবার সুদের হার বাড়লে অর্থের ফটকা চাহিদা কমে। তাছাড়া সুদরে হার বেশী হলে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ে, নগদ অর্থের চাহিদা কমে। আবার সুদরে হার কমলে সঞ্চয় প্রবণতা কমে-নগদ অর্থের চাহিদা বাড়ে।

7. দামস্তরঃ দামস্তর নগদ অর্থের চাহিদাকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। দামস্তর বাড়দে থাকলে তথা মুদ্রাস্ফীতর সময়ে অর্থের চাহিদা বাড়ে। আবার দামস্তর কমতে থাকলে তথা মুদ্রাসংকোচনের বেলায় অর্থের চাহিদা হ্রাস পায়।

8. সামাজিক নিরাপত্তাঃ নাগরিক সুবধিা বা সামজিক নিরাপত্তা অর্থের চাহিদাকে বিশেষ করে অর্থের সতর্কতামূলক চাহিদাকে প্রভাবিত করে। সামাজিক নিরাপত্তা থাকলে বর্তমানে লেনদেন চাহিদা বাড়ে - ভবিষ্যতের জন্য অর্থ জমিয়ে রাখার প্রবণতা কমে। আবার সামাজিক নিরাপত্তার অভাব হলে বর্তমানে লেনদেন চাহিদা কমে-ভবিষ্যতের জন্য অর্থ জমা রাখার প্রবণতা বাড়ে।

9. প্রত্যাশাঃ প্রত্যাশা অর্থের চাহিদাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। দাম বৃদ্ধির প্রত্যাশা, আয় বৃদ্ধির প্রত্যাশা, ব্যবসায়ে লোকসানের প্রত্যাশা ইত্যাদি নানা বিষয় অর্থের নগদ চাহিদাকে প্রবাবিত করে।

10. ব্যাংক ব্যবস্থাঃ উন্নত ব্যাংক ব্যবস্থা নগদ অর্থের চাহিদাকে আধুনিককালে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ক্রেডিট কার্ড, ভিসা কার্ড ইত্যাদি সুবিধিা প্রদানের ফলে নগদ অর্থ হাতে রাখার প্রবণতা হ্রাস পায়। পক্ষান্তরে, ব্যাংক ব্যবস্থা অনুন্নত ও ব্যাংকিং সুবিধা কম থাকলে মানুষ বাধ্য হয়ে নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখে।




প্রশ্ন ৩। ‘‘মূল্যস্ফীতি হচ্ছে মূলতঃ মুদ্রাজনিত বিষয়’’- এ উক্তির পক্ষে আপনার যুক্তি প্রদর্শন করুন। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমনে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যায়? জুন-২০১০


মুদ্রাস্ফীতিঃ  মুদ্রাস্ফীতির সর্বজনগ্রাহ্য সঙ্গা প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন সঙ্গা প্রদান করেছেন তেব সাধারণভাবে মুদ্রাস্ফীতি বলতে এমন একটা পরিস্থিতি বুঝায় যখন দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে অর্থাৎ অর্থের মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। অর্থনীতিবিদ কেমারার (Kemmerer) এর মতে ‘‘যখন দেশে মোট মুদ্রার যোগান চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করে তখন মুদ্রাস্ফীতি ঘটে’’। অর্থনীতিবিদ পল আইনজিগ (Paul Enizig) বলেন ‘‘ মুদ্রাস্ফীতি হল ক্রয়ক্ষমতার প্রসারমূখী গতি যা দামস্তরের বৃদ্ধি ঘটায়। ’’ অধ্যাপক গ্রেগরী (Gregory)  বলেন, ‘‘ ক্রয়ক্ষমতার অস্বাভাবিক পরিমাণ বৃদ্ধিকেই মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়’’। অর্থনীতিবিদ কীনস বলেন ‘‘যখন দ্রব্যসামগ্রীর তুলনায় কার্যকর চাহিদা অধিক হয়ে পড়ে তখন সেই অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে’’।

এভাবে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন সঙ্গা প্রদান করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায়, যখন দেশে প্রচলিত অর্থের পরিমাণ উৎপাদিত মোট দ্রব্যসামগ্রীর তুলনায় অধিক হয় এবং এর ফলে দ্রব্যমুল্য বা মূল্যস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায়ঃ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে যে সব ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয় তাকে মোটামুটি তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে; যথাঃ 
(ক) আর্থিক ব্যবস্থা
(খ) রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যবস্থা এবং 
(গ) অন্যান্য ব্যবস্থা।



ক) আর্থিক ব্যবস্থাঃ মুদ্রাস্ফীতির প্রধান করাণই হল অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতি দুর করতে হলে অর্থের পরিমাণ কমাতে হবে। এ অর্থের পরিমান কমাতে হলে ব্যাংক আৃণের পরিমানও কমাতে হবে। কারণ বর্তমান অর্থ ব্যবস্থায় ব্যাংক সৃষ্ট ঋণের সাহায্যে বহু লেনদে হয়ে থাকে। এ ঋণের পরিমাণ কমাতে পারলে মোট প্রচলিত অর্থের পরিমাণ কমে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ উদ্দেশ্যে প্রত্যেক দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে থাকে তার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো প্রধানঃ



(১) ব্যাংক হার বৃদ্ধিঃ কেন্দ্রী ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংককে টাকা ধার দেয় তাকে ব্যাংক হার বলা হয়। কেন্দ্রী ব্যাংক এ ব্যাংক হার বাড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও তাদের সুদের হার সাধারণত বাড়িয়ে দেয়। ফলে ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ ব্যসাধ্য হয়ে পড়ে এবং ঋণের পরিমাও স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। এভাবে মুদ্রাস্ফীতির সময় কেন্দ্রী ব্যাংক ব্যাংক হার বাড়িয়ে দিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে।



(২) খোলাবাজারী কারবারঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক সময় খোলা বাজারে সরকারী ঋণপত্র বিক্রয় করে ব্যাংক সৃষ্ট অর্থের পরিমাণ কমাতে চেষ্টা করে। এরূপভাবে ঋণপত্র বিক্রয় করলে ক্রেতাগণ তাদের নিজ নিজ বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপর চেক কেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাওনা মিটিয়ে থাকে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণদান ক্ষমতা কমে যায় । এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজারে ঋণপত্র বিক্রয় করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের রিজার্ভের হার পরিবর্তন, নৈতিক চাপ প্রয়োগ, প্রত্যক্ষ ঋণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির সাহায্যে ব্যাংক সৃষ্ট ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতি দুর করার চেষ্ট করে।



খ) রাজস্ব সঙক্রান্ত ব্যবস্থাঃ বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আর্থিক ব্যবস্থা অপেক্ষা ফিসক্যাল বা সরকারী আয় -ব্যয় সংক্রান্ত নীতি অনেক বেশি কার্যকরী। মুদ্রাস্ফীতির মূল কারণ হল অতিরিক্ত ব্যয়। কাজেই অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমান কমাতে পারলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সরকার যদি আয় ব্যয় নীতি এমনভাবে প্রচরন করেন যাতে মোট ব্যয়ের পরিমান কমে যায় তা হলে মুদ্রাস্ফীতির চাপও কমে যাবে। রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যবস্থার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো প্রধান-



(১) সরকারী ব্যয় হ্রাসঃ সরকারী ব্যয় দেশের মোট ব্যয়ের পরিমানের একটা মোটা অংশ। কাজেই মুদ্রাস্ফীতির সময় সরকারী ব্যয় কমানো উচিত। সরকারী খাতে যথাসম্ভব অনাবশ্যক ব্যয় বন্ধ করা উচিত।



(২) অতিরিক্ত কর ধার্যঃ মুদ্রাস্ফীতি নিরোধের আর একটা প্রকৃত উপায় হল করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। বেশি করে কর দিতে হলে জনসাধারণের হাতে ব্যয়যোগ্য আয় কমে যায়। কাজেই মোট ব্যয়ের পরিমান কমে যায় । নতুন নতুন কর ধার্য করে এবং পুরাতন করের হার বাড়িয়ে লোকের ক্রয় ক্ষমতা কমানো যেতে পারে।



(৩) সরকারী কর্তৃক ঋণ গ্রহণঃ মুদ্রাস্ফীতি নিরোধের জন্য সরকারী জনসাধারণের নিকট হতে অধি পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে থাকে। এতে জনসাধারণের উদ্বৃত্ত আয় সরকারের হস্তগত হওয়ায় তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।


(৪) সঞ্চয়ে উৎসাহ প্রদানঃ  সরকার জনসাধারণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করেও মোট ব্যয়ের পরিমান হ্রাস করতে পারে।ভ সুদের হার বাড়িয়ে দিলে জনসাধারণ অধিক পরিমাণে সঞ্চয়ে আগ্রহান্বিত হবে। এর ফলে ব্যয়ের পরিমান কমে যাবে।



গ) অন্যান্য ব্যবস্থাঃ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আর্থিক ব্যবস্থা ও রাজস্ব ব্যবস্থাদি ছা[ড়াও কতগুলো ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়। এগুলোকে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ বলা হয়।



(১) উৎপাদন বৃদ্ধিঃ মুদ্রাস্ফীতির সময় দ্রব্যের উৎপাদন যথাসম্ভব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। দেশের অব্যবহৃত সম্পদগুলোকে ব্যবহার দ্রব্যের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। দেশের উৎপাদনশীল সম্পদকে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন হতে সরিয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।



(২) আমদানী বৃদ্ধিঃ মুদ্রাস্ফীতির সময় আমদানির পরিমাণ বাড়ালে বাজারে দ্রব্যের যোগান বাড়বে। ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমে যাবে।



(৩) মজুরি নিয়ন্ত্রণঃ মুদ্রাস্ফীতির সময় শ্রমিকগণ মজুরির হার বাড়ানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তাদের অধিক মজুরি দেয়ার ফলে উৎপাদন ব্যয় এবং মুল্যস্তর বেড়ে যায়। তখন শ্রমিকেরা পুনরায় মজুরী বৃদ্ধির দাবি করে। এভাবে ক্রমাগতভাবে মুল্যস্তর ও মজুরি বৃদ্ধি পেতে থাকে । সেইজন্য অনেক সময় আইন করে বা আপোসের মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধি বন্ধ রাখা হয়।



(৪) মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও রেশনিং ব্যবস্থাঃ অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও রেশনিং ব্যবস্থা চালূ করে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কমানো যেতে পারে।



(৫) মুদ্রা অবৈধকরণঃ মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করলে অনেক সময় পুরাতন মুদ্রা পরিত্যাগ করে নতুন মুদ্রার প্রচলন হয়। কোন কোন সময় বেশি মূল্যের নোটকে অচল করে দেয়া হয়।



(৬) গচ্ছিত অর্থ আটকঃ মুদ্রাস্ফীতির সময় জনসাধারণ বিশেষ করে ধনী ব্যক্তিরা যাতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে না পারে সেজন্য অনেক সময় সরকার তাদের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের সম্পূর্ণ বা কিছু অংশ সাময়িকভাবে আটক করে রাখে। এর ফলে এ অংশ ব্যয় করা সম্ভবপর হয় না। ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমে।



মুদ্রাস্ফীতি নিঃসন্দেহে একটা জটিল ও গুরুতর সমস্যা। কোন একটা বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে তা দুর করা সম্ভব নয়। এজন্য উপরোক্ত পদ্ধতির সাহায্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।



প্রশ্ন ৪। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ব্যাপক হারে পুনঃ অর্থায়ন প্রকট মুদ্রাস্ফীতি ঘটাতে পারে। আর কি কি বিষয় অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে? ডিসেম্বর-২০০৯

১। কারণ ভিত্তিকঃ

ক) চাহিদা বৃদ্ধিজনিত বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতিঃ  চাহিদা বৃদ্ধিজনিত চাপের ফলে সমাজে যে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয় তাকে চাহিদা-প্রণোদিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। যখন বর্তমান উৎপাদনের পরিমাণের চেয়ে সামগ্রিক চাহিদা বেশি হয়ে পড়ে তখন চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়। সাধারণত অর্থের যোগান বাড়লে সুদের হার হ্রাস পায় এবং সুদের হার হ্রাস পাওয়ার দরূন বিনিয়েঅগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং অধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়। এর ফলে কোকের হাতে অতিরিক্ত আর্থিক আয় সঞ্চারিত হয়। আর্থিক আয় বৃদ্ধি পেলে ভোগ্যদ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যে অনুপাতে ভোগ্যদ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় সেই অনুপাতে ভোগ্যদ্রব্যের যোগান বৃদ্ধি না পাওয়াতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়। এভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা অন্য কোন কারণে সামাজে আয় বৃদ্ধি পেলে ভোগব্যয় বৃদ্ধি পায় । এর ফলে সামজের সাগ্রিক চাহিদার বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু সেই অনুপাতে দ্রব্য সামগ্রীর যোগান বৃদ্ধি না পাওয়াতে মূল্যস্তরের যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে চাহিদা-বৃদ্ধিজনিত বা চাহিদা প্রণোদিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



খ) ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতিঃ উৎপাদনের উৎপাদনসমূহের মূল্য,  যেমন শ্রমিকের মজুরি, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি প্রভৃতির মূল্য বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন ব্যয় স্বভাতঃই বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীকের দামও বৃদ্ধি পায়। এভাবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে যে মুদ্রাস্ফীতি  দেখা দেয় তাকে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।


গ) ঘাটতি ব্যয় জনিত মুদ্রাস্ফীতিঃ  সরকার আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ অধিক নির্ধারণ করলে তাকে ঘাটতি ব্যয় নীতি বলে। ঘাটতি ব্যয়ের ফলে অর্থনীতিতে আয় প্রবাহ বাড়ে, দ্রব্য সামগ্রীও দাম বাড়ে। এর সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতিকে ঘাটতি ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি  বলে।


ঘ) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ঃ অর্থনীতিতে সরকার মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করলে দ্রব্য সামগ্রী ও সেবার দাম বাড়ে। এর ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতিকে মুদ্রা সরবরাহজনিত মুদ্রাস্ফীতি  বলে।


ঙ) ঋণ সরবরাহ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ঃ অর্থনীতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক সহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ সরবরাহ বৃদ্ধি করলে এবং সরকারের কেন্দ্রী ব্যাংক সহজ ঋণনীতি গ্রহণ করলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ে, পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়ে। এরূপ দাম বৃদ্ধিকে ঋণ সরবরাহ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি  বলা হয়।


চ) মজুরী বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি ঃ শ্রমিক সংঘের চাপে বা অন্য কোন কারণে শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি পেলে যে মুদ্রাস্ফীতি   দেখা দেয় তাকে মজুরী বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি  বলে।



২। গতি ভিত্তিকঃ

) মৃদু মুদ্রাস্ফীতি ঃ এ অবস্থায় দামস্তর খুব ধীর গতিতে পিপিলিকার চলার গতিতে বৃদ্ধি পায়। এধরণের মুদ্রাস্ফীতি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটায় তথা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।


খ) পদসঞ্চারী মুদ্রাস্ফীতিঃ এক্ষেত্রে দামস্তর অপেক্ষাকৃত অধিকহারে হাটার গতিতে বাড়তে থাকে।


গ) ধাবমান মুদ্রাস্ফীতিঃ এক্ষেত্রে দামস্তর খুব দ্রুতগতিতে তথা দৌড় গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে।


ঘ) উল্লস্ফন মুদ্রাস্ফীতিঃ এ পরিস্থিতে দামস্তর অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।



৩। সময় ভিত্তিকঃ

ক) যুদ্ধকালীন মুদ্রাস্ফীতিঃ যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন ব্যয় মিটানোর জন্য অর্থের যোগান বাড়ে-দামস্তর বৃদ্ধি পায় । দামস্তর বৃদ্ধির এ প্রবণতাকে যুদ্ধকালীন মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।


খ) যুদ্ধ পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতি ঃ যুদ্ধ পরবর্তী কালীন সময়ে উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের জন্য অর্থের যোগান বৃদ্ধি পায়- দামস্তর বৃদ্ধি পায়। দামস্তর বৃদ্ধির এরুপ প্রবণতাকে যুদ্ধপরবর্তীকালীন মুদ্রাস্ফীতি  বলা হয়।


গ) শান্তিকালীন মুদ্রাস্ফীতিঃ দেশে শান্তি বজায় থাকলে বাণিজ্য চক্রের উর্দ্ধগতির ও অন্য কোন কারণে মুদ্রা সরবরাহ বাড়লে দামস্তর বাড়ে। দামস্তর বৃদ্ধির এরূপ প্রবণতাকে শান্তিকালীন মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



৪। এলাকা ভিত্তিকঃ

) স্থানীয় মুদ্রাস্ফীতিঃ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় স্থানীয় ভিত্তিতে এক বা একাধিক কারণে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে তাকে স্থানীয় মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।


খ) দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি

গ) আন্তর্জাতিক মুদ্রাস্ফীতিঃ আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের সকল দেশে দামস্তর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিলে তাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



৫। প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতিঃ অর্থনীতিতে একটি নির্দিষ্ট হারে প্রতিবছর দামস্তর বাড়বে বা বাড়তে থাকবে এরুপ প্রত্যাশা বা পূর্বানুমান সকলে মধ্যে বিরাজ করলে তাকে প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



৬। অপ্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতিঃ দামস্তর বৃদ্ধির হার কত হবে, আদৌ দামস্তর বাড়বে কিনা এ সম্পর্কে পূর্ব থেকেই কোন ধারণা বা প্রত্যাশা না থাকলে তাকে অপ্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



৭। মুক্ত মুদ্রাস্ফীতিঃ সরকারের কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া লাগামহীনভাবে দামস্তর বৃদ্ধি পেতে থাকলে তাকে মুক্ত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



৮। অবদমিত মুদ্রাস্ফীতি। দাম্স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য করকার নানারূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও যে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় তাকে অবদমিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। ‘



মুদ্রাস্ফীতির কারণঃ

ক্রমাগত দামস্তর বৃদ্ধি তথা মুদ্রাস্ফীতির কারণগুলোকে প্রধানতঃ দুটি ভাগে ভাগ  করা যায় । যথাঃ




১। চাহিদা বৃদ্ধিজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি; এবং

২। খরচ বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি।

১। চাহিদা বৃদ্ধির দিক থেকে মুদ্রাস্ফীতির কারণঃ

ক) আয় বৃদ্ধিঃ

খ) সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি

গ) কর হার হ্রাসঃ

ঘ) অর্থের যোগান বৃদ্ধিঃ

ঙ) সম্প্রসারণ মূলক ঋণ নীতিঃ

চ) বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, সাহায্য বৃদ্ধিঃ

ছ) ব্যবসসায়ে মুনাফা বৃদ্ধির সম্ভাবনাঃ

জ) দামস্তর আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনাঃ





২। খরচ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির কারণঃ

ক) উপকরণের দাম বৃদ্ধিঃ

খ) প্রকৃতিক দুর্যোগ

গ) অববকাঠামোগত দুর্বলতা

ঘ) সুদের হার বৃদ্ধি

ঙ) কৃত্রিম সংকটঃ

চ) সামাজিক বিশৃংখলা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঃ

ছ) আমদানি হ্রাসঃ






প্রশ্ন ৫। মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা লিখুন। ‘ব্যয়বৃদ্ধিজনিত’ মুদ্রাস্ফীতি এবং ‘চাহিদা বৃদ্ধিজনিত’ মুদ্রাস্ফীতি, ‘মৃদু’ মুদ্রাস্ফীতি এবং ‘উর্ধ্বমুখী’ মুদ্রাস্ফীতির ব্যাখ্যা করুন। মুদ্রাস্ফীতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? মে-২০০৯

মুদ্রাস্ফীতিঃ  মুদ্রাস্ফীতির সর্বজনগ্রাহ্য সঙ্গা প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন সঙ্গা প্রদান করেছেন তেব সাধারণভাবে মুদ্রাস্ফীতি বলতে এমন একটা পরিস্থিতি বুঝায় যখন দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে অর্থাৎ অর্থের মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। অর্থনীতিবিদ কেমারার (Kemmerer ) এর মতে ‘‘যখন দেশে মোট মুদ্রার যোগান চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করে তখন মুদ্রাস্ফীতি ঘটে’’। অর্থনীতিবিদ পল আইনজিগ (Paul Enizig) বলেন ‘‘ মুদ্রাস্ফীতি হল ক্রয়ক্ষমতার প্রসারমূখী গতি যা দামস্তরের বৃদ্ধি ঘটায়। ’’ অধ্যাপক গ্রেগরী (Gregory)  বলেন, ‘‘ ক্রয়ক্ষমতার অস্বাভাবিক পরিমাণ বৃদ্ধিকেই মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়’’। অর্থনীতিবিদ কীনস বলেন ‘‘যখন দ্রব্যসামগ্রীর তুলনায় কার্যকর চাহিদা অধিক হয়ে পড়ে তখন সেই অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে’’।

এভাবে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন সঙ্গা প্রদান করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায়, যখন দেশে প্রচলিত অর্থের পরিমাণ উৎপাদিত মোট দ্রব্যসামগ্রীর তুলনায় অধিক হয় এবং এর ফলে দ্রব্যমুল্য বা মূল্যস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



ক) চাহিদা বৃদ্ধিজনিত বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতিঃ  চাহিদা বৃদ্ধিজনিত চাপের ফলে সমাজে যে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয় তাকে চাহিদা-প্রণোদিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। যখন বর্তমান উৎপাদনের পরিমাণের চেয়ে সামগ্রিক চাহিদা বেশি হয়ে পড়ে তখন চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়। সাধারণত অর্থের যোগান বাড়লে সুদের হার হ্রাস পায় এবং সুদের হার হ্রাস পাওয়ার দরূন বিনিয়েঅগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং অধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়। এর ফলে কোকের হাতে অতিরিক্ত আর্থিক আয় সঞ্চারিত হয়। আর্থিক আয় বৃদ্ধি পেলে ভোগ্যদ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যে অনুপাতে ভোগ্যদ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় সেই অনুপাতে ভোগ্যদ্রব্যের যোগান বৃদ্ধি না পাওয়াতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়। এভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা অন্য কোন কারণে সামাজে আয় বৃদ্ধি পেলে ভোগব্যয় বৃদ্ধি পায় । এর ফলে সামজের সাগ্রিক চাহিদার বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু সেই অনুপাতে দ্রব্য সামগ্রীর যোগান বৃদ্ধি না পাওয়াতে মূল্যস্তরের যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে চাহিদা-বৃদ্ধিজনিত বা চাহিদা প্রণোদিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



খ) ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতিঃ উৎপাদনের উৎপাদনসমূহের মূল্য,  যেমন শ্রমিকের মজুরি, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি প্রভৃতির মূল্য বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন ব্যয় স্বভাতঃই বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীকের দামও বৃদ্ধি পায়। এভাবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে যে মুদ্রাস্ফীতি  দেখা দেয় তাকে ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।



) মৃদু মুদ্রাস্ফীতি ঃ এ অবস্থায় দামস্তর খুব ধীর গতিতে পিপিলিকার চলার গতিতে বৃদ্ধি পায়। এধরণের মুদ্রাস্ফীতি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটায় তথা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।



গ) ধাবমান মুদ্রাস্ফীতিঃ এক্ষেত্রে দামস্তর খুব দ্রুতগতিতে তথা দৌড় গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ঘ) উল্লস্ফন মুদ্রাস্ফীতিঃ এ পরিস্থিতে দামস্তর অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।





মুদ্রানীতি

৪।    প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মুদ্রানীতির পার্থক্যগুলো দেখান। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যবহৃত পরোক্ষ মুদ্রানীতি সম্পর্কে আলোচনা করুন। জুন-২০১০

মুদ্রানীতিঃ যে নীতির সাহায্যে দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা পরিচালনা এবং মুদ্রার যোগান ও ঋণের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জন করা হয় তাকে মুদ্রানীতি বলে। মুদ্রানীতি বলতে সংক্ষেপে সরকারের অর্থ সংক্রান্ত নীতিকেই বুঝায়। অধ্যাপক আর.পি.কেন্ট বলেন, ‘‘ পূর্ণ নিয়োগের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচলিত অর্থের যোগানের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধির পরিচালনার নীতিকে মুদ্রানীতি বলা হয়। অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে মুদ্রানীতি একটি অপরিহার্য্য হাতিয়ার। সকল দেশের মুদ্রানীতি একই রকম হয়না। মুদ্রানীতি প্রণয়ন দেশের ক) ভৌগলিক অবস্থান খ) সমাজ কাঠামো গ) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাই বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রানীতির বিভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলেছেন।



মুদ্রানীতি (পরোক্ষ) ও রাজস্বনীতির (প্রত্যক্ষ) পার্থক্যঃ (পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ)

1.      অর্থনীতিতে অর্থ ও ঋণের যোগান বাড়ানো এবং কামানের নীতিমালাকে আর্থিক নীতি বলা হয়। পক্ষান্তরে সরকারের আয়, ব্যয় ও ঋণ সংক্রন্ত নীতিমালাকে রাজস্ব নীতি বলা হয়।

2.     আর্থিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে অর্থ বাজার প্রভাবিত হয়। পক্ষান্তরে রাজস্ব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে অর্থনীতিতে উৎপন্ন বাজার প্রভাবিত হয়।

3.    আর্থিক নীতি নির্ধারণ ও কার্যকরী করার দায়িত্ব মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর ন্যস্ত থাকে। পক্ষান্তরে রাজস্ব নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব মূলত সরকারের অর্থমন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের উপর।

4.      আর্থিক নীতির হাতিয়ার হলো নোট প্রচলন বন্ধ রাখা কিংবা বৃদ্ধি করা, খোলা বাজার নীতি, ব্যাংক হারের পরিবর্তন, রিজার্ভের পরিবর্তন সহ গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ। পক্ষান্তরে রাজস্বনীতির হাতিয়ার হল সরকারের ব্যয়ের পরিবর্তন, কর হারের পরিবর্তন, ভর্তূকী ও হস্তান্তর ব্যয়ের পরিবর্তন, ঋণ নীতির পরিবর্তন, সঞ্চয় নীতির পরিবর্তন।

5.     মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, পূর্ণ নিয়োগ অবস্থা বজায় রাখা প্রভৃতি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে আর্থিক নীতি প্রয়োগ হয়। পক্ষান্তরে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা, পূর্ণ নিয়োগ ও আয়ের সুষম বন্টন নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা প্রভৃতি বিভিন্ন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য রাজস্বনীতি প্রয়োগ করা হয়।



উপসংহারে বলা যায় যে, আর্থিক নীতি ও রাজস্বনীতি দুটি স্বতন্ত্র বিভাগের উপর ন্যস্ত হলেও এবংনীতি দুটির প্রয়োগ -হাতিয়ার ভিন্ন হলেও উভয়ের উদ্দেশ্য মূলত এক। আর্থিক নীতি ও রাজস্ব নীতি দুটি পরস্পরের পরিপুরক।



খোলাবাজার কর্মকান্ডঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়কে খোলাবাজার কর্মকান্ড বলে। এই হাতিয়ারের সাহায্যে কেন্দ্রীয় ব্রাংক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র ক্রয় করে তখন বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়ে। আর এই রিজার্ভ হচ্ছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রার প্রধা্ন অংশ। উল্লেখ্য যে, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রাকে আর্থিক ভিত্তি বলা হয় এবং তা বাড়লে ব্যাংক সমূহের আমানত বাড়ে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র বিক্রয়করে তখন আর্থিক ভিত্তি হ্রাস পায় এবং ব্যাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার পরিমাণ সংকোচিত হয়।



ব্যাংক হার পরিবর্তনঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হারে বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দেয় সে হারকে ব্যাংক হার বলে। ব্যাংক হার বাড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দান হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার স্টক হ্রাস পায়। আবার ব্যাংক হার কমালে বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা বাড়ে।



রিজার্ভ হার পরিবর্তনঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের কত শতাংশ রিজার্ভ রাখবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে। এ রিজার্ভ হার বাড়িয়ে দিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দা ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার যোগান হ্রাস পায়। আবার রিজার্ভ হার কমিয়ে দিলে মুদ্রার যোগান বাড়ে।



কারেন্সী নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক উস্যুকৃত নোটের পরিমাণ পরিবর্তন করে মোট অর্থের স্টক পরিবর্তন করা যায়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্রাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত নোট সমূহ আর্থিক ভিত্তির উপাদান।



উপরোক্ত হাতিয়ার ছাড়াও নৈতিক চাপ, ঋণ রেশনিং ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক কর্তৃপক্ষ মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।



৫।    বাংলাদেশের মুদ্রানীতির অপারেটিং টার্গেট কি? ইহার উপাদানসমূহ আলোচনা করুন। বাংলাদেশ ব্যাংক কিভাবে এ টার্গেট অর্জন করে? জুন-২০১০

মুদ্রানীতির লক্ষ্যসমূহঃ মুদ্রানীতি হল একটা দেশের অর্থনৈতিক নীতির অপরিহার্য অঙ্গ। দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আর্থিক নীতি প্রয়োগ করা হয়। মুদ্রা নীতির স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রয়েছে। স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে সুষ্ঠু ও সাবলীল অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্পাদনের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অর্থের মূল্যের আকস্মিক পরিবর্তনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেন বিপর্যস্ত না হয় তা নিশ্চিত করা। পক্ষান্তরে, মুদ্রানীতির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়তা করা। সার্বিকভাবে এই লক্ষ্যকে সম্মুখে রেখে অর্থনীতিবিদগণ মুদ্রা নীতির যে উদ্দেশাবলী নির্ণয় করেছেন তা নিম্নরূপঃ                               



অর্থের বাহ্যিক মূল্য নিয়ন্ত্রণঃ যেকোন দেশের মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হারের ঘন ঘন পরিবর্তন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই বৈদেশিক বিনিময় হারের উপর রপ্তানি ও আমদানি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাছাড়া মুদ্রার আভ্যন্তরীণ মূল্যও তার বৈদেশিক বিনিময়ের হার দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই মুদ্রার বাহ্যিক মূল্যকে স্থিতিশীল রাখা বা প্রয়োজনে পরিবর্তিত করা মুদ্রা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ  উদ্দেশ্য।



অর্থের আভ্যন্তরীন মূল্য নিয়ন্ত্রণঃ অর্থের আভ্যন্তরীণ মূল্য বলতে দেশের ভেতরে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা বা তার বিপরীতে মূল্যস্তর বুঝায়। মূল্যস্তরের ব্যাপারে তিন প্রকারের নীতি হচ্ছেঃ স্থির মূল্যস্তর নীতি, ক্রমহ্রাসমান মূল্য স্তর নীতি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্তর নীতি। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনেকের মতে মৃদু হারে ক্রম বর্ধমান মূল্যস্তর মুদ্রা নীতির উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্চনীয়। তাঁদের মতে, দামস্তর যদি ক্রমশ অল্প অল্প বাড়তে থাকে তবে ব্যবসায়িক গন অধিক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয় । অধিক মুনাফা লাভের সম্ভাবনা থাকলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উৎসাহ বাড়ে। ফলে শিল্পে ও বাণিজ্যে বিনিয়োগের পরিমান বাড়ে, দেশে কর্মসংস্থান ও আয়স্তর প্রভৃতি বৃদ্ধি পায় এবং জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়।



নিরপেক্ষ অর্থ নিশ্চিত করাঃ নিরপেক্ষ অর্থ বলতে অর্থের এমন একটা ভূমিকা বুঝায় যে ভূমিকাতে অর্থ নিজস্ব কোন প্রভাব বিস্তার করবে না এবং অর্থের অনুপস্থিতিতে অনার্থিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর প্রভাবে যেভাবে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ হওয়ার কথা ছিল তাই নিশ্চিত করবে। এই ভূমিকা পালন করতে হলে অর্থের কার্যকর যোগান স্থির থাকতে হবে। তার জন্যে যখন  অর্থের প্রচলন গতি বৃদ্ধি পাবে আনুপাতিক হারে অর্থের পরিমাণ হ্রাস পেতে হবে বা প্রচলন গতি হ্রাস পেলে অর্থের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেতে হবে। আবার অর্থনীতির কাঠামো প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে হবে। এ ধরনের নিরপেক্ষ অর্থের পক্ষে অধ্যাপক হায়েক এবং আরও কয়েকজন অর্থনীতিবিদ জোরালো যুক্তি দিয়েছেন। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন অর্থের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, অর্থ কখনই নিরপেক্ষ নয়।



পূর্ণ নিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঃ আধুনিককালে উপকরণের পূর্ণ নিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মুদ্রা নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হিসাবে প্রায় সর্বত্র গৃহীত হচ্ছে। অনুন্নত দেশসমূহে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা ক্রমোন্নতিই আর্থিক নীতির লক্ষ্য বলে গৃহীত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চাহিদার অভাবে উপকরণের পূর্ণ নিয়োগ ব্যাহত হয়। তখন অর্থের যোগান বাড়িয়ে সুফল পাওয়া যায়। আবার উন্নয়নশীল দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য মুদ্রা নীতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।



উপসংহারঃ সকল দেশের আর্থিক নীতির লক্ষ্য উদ্দেশ্য এক নয়। আর্থিক নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত তা মূলত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে আর্থিক নীতির লক্ষ্য হওয়া উচি্ত অর্থের যোগন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণ বৃদ্ধি করা। অধ্যাপক S.K.Basu মনে করেন যে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক নীতির মূল লক্ষ হওয়া উচিত অর্থ সৃষ্টি এবং সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানিকরকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা। 



খোলাবাজার কর্মকান্ডঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়কে খোলাবাজার কর্মকান্ড বলে। এই হাতিয়ারের সাহায্যে কেন্দ্রীয় ব্রাংক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র ক্রয় করে তখন বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়ে। আর এই রিজার্ভ হচ্ছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রার প্রধা্ন অংশ। উল্লেখ্য যে, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রাকে আর্থিক ভিত্তি বলা হয় এবং তা বাড়লে ব্যাংক সমূহের আমানত বাড়ে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র বিক্রয়করে তখন আর্থিক ভিত্তি হ্রাস পায় এবং ব্যাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার পরিমাণ সংকোচিত হয়।



ব্যাংক হার পরিবর্তনঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হারে বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দেয় সে হারকে ব্যাংক হার বলে। ব্যাংক হার বাড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দান হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার স্টক হ্রাস পায়। আবার ব্যাংক হার কমালে বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা বাড়ে।



রিজার্ভ হার পরিবর্তনঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের কত শতাংশ রিজার্ভ রাখবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে। এ রিজার্ভ হার বাড়িয়ে দিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দা ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার যোগান হ্রাস পায়। আবার রিজার্ভ হার কমিয়ে দিলে মুদ্রার যোগান বাড়ে।



কারেন্সী নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক উস্যুকৃত নোটের পরিমাণ পরিবর্তন করে মোট অর্থের স্টক পরিবর্তন করা যায়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্রাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত নোট সমূহ আর্থিক ভিত্তির উপাদান।



উপরোক্ত হাতিয়ার ছাড়াও নৈতিক চাপ, ঋণ রেশনিং ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক কর্তৃপক্ষ মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।



১৪।   মুদ্রানীতির লক্ষ্যসমূহ এবং তা’ বাস্তবায়নের উপকরণসমূহ কি কি? সরকারের ‘ঘাটতি অর্থসংস্থান’ কার্যকর মুদ্রানীতি ব্যহত করে কি? ব্যাখ্যা করুন। মে-২০০৯

মুদ্রানীতির লক্ষ্যসমূহঃ মুদ্রানীতি হল একটা দেশের অর্থনৈতিক নীতির অপরিহার্য অঙ্গ। দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আর্থিক নীতি প্রয়োগ করা হয়। মুদ্রা নীতির স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রয়েছে। স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে সুষ্ঠু ও সাবলীল অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্পাদনের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অর্থের মূল্যের আকস্মিক পরিবর্তনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেন বিপর্যস্ত না হয় তা নিশ্চিত করা। পক্ষান্তরে, মুদ্রানীতির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়তা করা। সার্বিকভাবে এই লক্ষ্যকে সম্মুখে রেখে অর্থনীতিবিদগণ মুদ্রা নীতির যে উদ্দেশাবলী নির্ণয় করেছেন তা নিম্নরূপঃ                               



অর্থের বাহ্যিক মূল্য নিয়ন্ত্রণঃ যেকোন দেশের মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হারের ঘন ঘন পরিবর্তন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই বৈদেশিক বিনিময় হারের উপর রপ্তানি ও আমদানি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাছাড়া মুদ্রার আভ্যন্তরীণ মূল্যও তার বৈদেশিক বিনিময়ের হার দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই মুদ্রার বাহ্যিক মূল্যকে স্থিতিশীল রাখা বা প্রয়োজনে পরিবর্তিত করা মুদ্রা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ  উদ্দেশ্য।



অর্থের আভ্যন্তরীন মূল্য নিয়ন্ত্রণঃ অর্থের আভ্যন্তরীণ মূল্য বলতে দেশের ভেতরে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা বা তার বিপরীতে মূল্যস্তর বুঝায়। মূল্যস্তরের ব্যাপারে তিন প্রকারের নীতি হচ্ছেঃ স্থির মূল্যস্তর নীতি, ক্রমহ্রাসমান মূল্য স্তর নীতি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্তর নীতি। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনেকের মতে মৃদু হারে ক্রম বর্ধমান মূল্যস্তর মুদ্রা নীতির উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্চনীয়। তাঁদের মতে, দামস্তর যদি ক্রমশ অল্প অল্প বাড়তে থাকে তবে ব্যবসায়িক গন অধিক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয় । অধিক মুনাফা লাভের সম্ভাবনা থাকলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উৎসাহ বাড়ে। ফলে শিল্পে ও বাণিজ্যে বিনিয়োগের পরিমান বাড়ে, দেশে কর্মসংস্থান ও আয়স্তর প্রভৃতি বৃদ্ধি পায় এবং জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়।



নিরপেক্ষ অর্থ নিশ্চিত করাঃ নিরপেক্ষ অর্থ বলতে অর্থের এমন একটা ভূমিকা বুঝায় যে ভূমিকাতে অর্থ নিজস্ব কোন প্রভাব বিস্তার করবে না এবং অর্থের অনুপস্থিতিতে অনার্থিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর প্রভাবে যেভাবে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ হওয়ার কথা ছিল তাই নিশ্চিত করবে। এই ভূমিকা পালন করতে হলে অর্থের কার্যকর যোগান স্থির থাকতে হবে। তার জন্যে যখন  অর্থের প্রচলন গতি বৃদ্ধি পাবে আনুপাতিক হারে অর্থের পরিমাণ হ্রাস পেতে হবে বা প্রচলন গতি হ্রাস পেলে অর্থের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেতে হবে। আবার অর্থনীতির কাঠামো প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে হবে। এ ধরনের নিরপেক্ষ অর্থের পক্ষে অধ্যাপক হায়েক এবং আরও কয়েকজন অর্থনীতিবিদ জোরালো যুক্তি দিয়েছেন। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন অর্থের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, অর্থ কখনই নিরপেক্ষ নয়।



পূর্ণ নিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঃ আধুনিককালে উপকরণের পূর্ণ নিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মুদ্রা নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হিসাবে প্রায় সর্বত্র গৃহীত হচ্ছে। অনুন্নত দেশসমূহে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা ক্রমোন্নতিই আর্থিক নীতির লক্ষ্য বলে গৃহীত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চাহিদার অভাবে উপকরণের পূর্ণ নিয়োগ ব্যাহত হয়। তখন অর্থের যোগান বাড়িয়ে সুফল পাওয়া যায়। আবার উন্নয়নশীল দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য মুদ্রা নীতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।



উপসংহারঃ সকল দেশের আর্থিক নীতির লক্ষ্য উদ্দেশ্য এক নয়। আর্থিক নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত তা মূলত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে আর্থিক নীতির লক্ষ্য হওয়া উচি্ত অর্থের যোগন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণ বৃদ্ধি করা। অধ্যাপক S.K.Basu মনে করেন যে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক নীতির মূল লক্ষ হওয়া উচিত অর্থ সৃষ্টি এবং সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানিকরকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা। 



মুদ্রানীতির হাতিয়ারসমূহ অথবা মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণঃ 

খোলাবাজার কর্মকান্ডঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়কে খোলাবাজার কর্মকান্ড বলে। এই হাতিয়ারের সাহায্যে কেন্দ্রীয় ব্রাংক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র ক্রয় করে তখন বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়ে। আর এই রিজার্ভ হচ্ছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রার প্রধা্ন অংশ। উল্লেখ্য যে, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রাকে আর্থিক ভিত্তি বলা হয় এবং তা বাড়লে ব্যাংক সমূহের আমানত বাড়ে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ঋণপত্র বিক্রয়করে তখন আর্থিক ভিত্তি হ্রাস পায় এবং ব্যাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার পরিমাণ সংকোচিত হয়।



ব্যাংক হার পরিবর্তনঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হারে বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দেয় সে হারকে ব্যাংক হার বলে। ব্যাংক হার বাড়ালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দান হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার স্টক হ্রাস পায়। আবার ব্যাংক হার কমালে বাণিজ্যিক ব্রাংক সমূহের ঋণদান ক্ষমতা বাড়ে।



রিজার্ভ হার পরিবর্তনঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের কত শতাংশ রিজার্ভ রাখবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে। এ রিজার্ভ হার বাড়িয়ে দিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দা ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে মুদ্রার যোগান হ্রাস পায়। আবার রিজার্ভ হার কমিয়ে দিলে মুদ্রার যোগান বাড়ে।



কারেন্সী নিয়ন্ত্রণঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক উস্যুকৃত নোটের পরিমাণ পরিবর্তন করে মোট অর্থের স্টক পরিবর্তন করা যায়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্রাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত নোট সমূহ আর্থিক ভিত্তির উপাদান।



উপরোক্ত হাতিয়ার ছাড়াও নৈতিক চাপ, ঋণ রেশনিং ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক কর্তৃপক্ষ মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।



সরকারের ঘাটতি অর্থ সংস্থান কার্যকর মুদ্রানীতি ব্যহত করে কি?

সরকার যদি তার স্বাভাবিক আয় অপেক্ষা অধিক ব্যয় করে তা হলে এ অতিরিক্ত ব্যয়কে ঘাটতি ব্যয় বলা হয় । বাণিজ্য চক্রের সংকটের যুগে যখন বেসরকারী ব্যয় ও বিনিয়োগ হ্রাস পায় তখন সরকারকে ঘাটতি ব্যয়ের সাহায্যে কর্মসংস্থানের স্তর বজায় রাখতে হয়। বর্তমানকালে পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ঘাটতি ব্যয় পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এ ঘাটতি ব্যয় পুরনের জন্য সরকার বৈদেশিক সাহায্য, সরকারী ঋণ অথবা অতিরিক্ত কাগজের নোট ছাপিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে। কিন্তু এ ঘাটতি ব্যয়ের কতগুলো কুফলও আছে। ঘাটতি ব্যয়ের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। মুদ্রাস্ফীতি ও তজ্জনিত মূল্য বৃদ্ধি দেশের নিম্ন আয় ও নির্দিষ্ট আয়সম্পন্ন ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক দুর্দশা বৃদ্ধি করে। অপর পক্ষে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সংকোচনমুলক আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হয়।  সংকোচনমুলক আর্থিক নীতির মূল লক্ষ হল মুদ্রা সরবরাহ কমানো কিংবা সংকোচ মূলক ঋণনীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে বাজারে প্রচলিত অর্থের যোগান কমানো। অর্থের যোগান কমলে বাজারে দাম স্তর কমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কাজেই উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় সরকারের ঘাটতি অর্থসংস্থান কার্যকর মুদ্রানীতি কিছুটা হলেও ব্যহত করে।





বৈদেশিক লেনদেন

৮।    বাংলাদেশে বর্তমানে অনুসৃত বিনিময় হার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করুন। জুন-২০১০



বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিময় হার নীতিঃ

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তার নতুন মুদ্রা টাকার বিনিময় হার বাছাইয়ের ব্যাপারে এক সমস্যায় পড়েছিল। স্বাধীনতার পুর্বের Export Bonus Scheme  এবং House Remittance Bonus Scheme বাতিল করে একটি Unitary  বিনিময় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয। Intervention Currency হিসেবে বাংলাদেশ পাউন্ড স্টালিংকে বেছে নেয় এবং তখন থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আমাদের টাকা পাউন্ড স্টালিং এর সাথে সম্পর্কিত পেগিং অবস্থায় ছিলো। আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে পাউন্ডের মান ঘন ঘন উঠানামা করায় এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থায় পাউন্ড তার সুনাম হারিয়ে ফেলাতে ১৯৮৩ সনের পর টাকাকে মার্কিন ডলারের সাথে সম্পর্কিত পেগিং অবস্থায় আনা হয়। মার্কিন ডলারের সাতে বিনিময় হার বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে এবং অন্যান্য মুদ্রার বিনিময় হার লন্ডনের বিনিময় বাজারের ক্রস হারের ভিত্তিতে নির্ধরণ করা হয়।



বাস্তব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একাধিক বিনিময় হার চালু রয়েছে। (১) একটি সরকারী ও অন্যটি ওয়েজ আর্নাস রেট। পূর্বে ওয়েজ আর্নাস রেটটি নিলাম বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মাধ্যমে নির্ধারিত হতো। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হয়। পূর্বে সরকারী রেট ও ওয়েজ আর্নাস রেটের মধ্যে পাঁচ টাকা পার্থক্য থাকত। বর্তমানে পার্থক্যের পরিমান কমে আসছে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা ওয়েজ আর্নাস স্কীমের আওতায় আমদানির জন্য সমস্ত ডলার ওয়েজ আর্নস রেটে ক্রয় করা হয। আর বাকী সমস্ত লেনদেনের জন্য সরকারী রেটে ক্রয় করা হয।





৯।    বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের বিভিন্ন হিসাবগুলো আলোচনা করুন। বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি এবং উদ্বৃত্ত কিভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে? জুন-২০১০



ব্যালান্স অব পেমেন্টস- আন্তর্জাতিক লেনদেনের ফলে বহির্বিশ্বের সকল দেশের সাথে কোনো বিশেষ দেশের দেনা-পাওনার হিসাবকে লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টস বলা হয়। অন্য কথায়, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরিসরে এক দেশের সঙ্গে বাদ বাকি সব দেশের আমদানি-রপ্তানি এবং অন্য সব অর্থনৈতিক লেনদেনর ধারাবাহিক লিপিবদ্ধ হিসাবকে ঐ দেশের লেনদেনের ভারসাম্য বলা হয়। অর্থনীতিবিদ কিন্ডেল বার্জারের মতে, ‘‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে অন্য সব দেশের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক লেনদেনের ধারাবাহিক হিসাবকে সেই দেশের লেনদেনের ভারসাম্য বলা হয়।’’

এক কথায় বলা যায়, কোনো দেশের লেনদেনের ভারসাম্য সে দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র।



ব্যালেন্স অব পেমেন্টসকে প্রধানত তিনি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

1.      অনুকুল লেনদেন উদ্বৃত্ত; ((দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আমদানী ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানী আয় বেশী)

2.     প্রতিকুল লেনদেন উদ্বৃত্ত; এবং (দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আমদানীর চেয়ে রপ্তানী আয় কম)

3.    সুষম লেনদেন উদ্বৃত্ত । (দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আমদানী  ব্যয় ও রপ্তানী আয় সমান)



ব্যালেন্স অব ট্রেডঃ  আন্তর্জাতিক  বাণিজ্যে একটি দেশের নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারনত ১বছর) দৃশ্যমান বস্ত্তগত পণ্যের রপ্তানী আয় এবং আমদানি ব্যায়ের হিসাবকে ব্যালেন্স অব ট্রেড বলা হয়। বাণিজ্যে লিপ্ত হলে একটি দেশে বিদেশে যে সব দৃশ্যমান পন্য সামগ্রী রপ্তানী করে তার আয়কে দৃশ্যমান রপ্তানী আয় বলে । আবার যে সব দৃশ্যমান পণ্য সামগ্রী আমদানি করে তার ব্যয়কে দৃশ্যমান আমদানি ব্যয় বলে। এরূপ রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয়ের হিসাবকে ব্যালেন্স অব ট্রেড বলা হয়।



ব্যালেন্স অব ট্রেডকে প্রধানত ৩ভাবে ভাগ করা যায়। যেমন-

1.      অনুকুল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত; (দৃশ্যমান আমদানী ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানী আয় বেশী)

2.     প্রতিকুল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত; এবং (দৃশ্যমান আমদানী ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানী আয় কম)

3.    সুষম বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত । (দৃশ্যমান আমদানী ব্যয় ও রপ্তানী আয় সমান)



ব্যালেন্স অব ট্রেড এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টস  এর মধ্যে পাথ্যক্যঃ

বাণিজ্য ভারসাম্য  এবং লেনদেন ভারসাম এ দুটি ধারণার মধ্যে নিম্নলিখত পাথ্যর্ক পরিলক্ষিত হয়ঃ

1.      বাণিজ্য ভারসাম্য বলতে কেবল দৃশ্যমান আমদানি ও রপ্তানির পার্থক্যকে বুঝায়। পক্ষান্তরে, লেনদেন ভারসাম্য বলতে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় প্রকার আমদানি ও রপ্তানির পার্থক্যকে বুঝায়।

2.     বাণিজ্যের ভারসাম্য একটা দেশের আন্তর্জাতিক দেনা পাওনার একটা অর্শবিশেষ নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে, লেনদেনের ভারসাম্যে একটা দেশের আন্তর্জাতিক দেনা-পাওনার সামগ্রিক অবস্থা নির্দেশ করে। সুতরাং লেনদেনের ভারসাম্য একটা দেশের দেনা-পাওনার সামগ্রিক চিত্র এবং বাণিজ্যের ভারসাম্য হল তার একটা অংশ মাত্র।

3.    বাণিজ্যের ভারসাম্যে ও লেনদেনের ভারসাম্যের মধ্যে সম সময় সমমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে না। যেমন, বাণিজ্যের ভারসাম্য অনুকূল হলেও লেনদেনের ভারসাম্য প্রতিকুল হতে পারে। আবার বাণিজ্যের ভারসাম্য প্রতিকুল হলেও ঐ লেনদেনের ভারসাম্য অনুকুল হতে পারে।

4.      বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় দেনা ও পাওনার উপাদান থাকে। বাণিজ্যের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কেবল সক্রিয় পাওনা ও দেনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। পক্ষান্তরে লেনদেনের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে সক্রিয়  ও নিষ্ক্রিয় উভয় প্রকার দেনা -পাওনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।

5.     বাণিজ্যের ভারসাম্যের ক্ষেত্র হিসাবগত অর্থে সম সময় সমতা থাকে না। লেনদেনের ভারসাম্যের ক্ষ্রেত প্রত্যাশিত বা ঊী-ধহঃব অর্থে সমতা না থাকলেও হিসাবগত বা বী-ঢ়ড়ংঃ অর্থে সর্বদাই সমতা থাকে অর্থাৎ হিসাবগত দিক হতে বাণিজ্যের ভারসাত্যে সম সময় সমতা না থাকলেও লেনদেনের ভারসাম্যে সর্বদাই সমতা বিরাজ করে ।

সুতরাং বাণিজ্যের ভারসাম্যে ও লেনদেনের ভারসাম্যের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। লেনদেনের ভারসাম্য হল একটা দেশের দেনা পাওনার সামগ্রিক চিত্র এবং বাণিজ্যিক ভারসাম্য হলো একটা অংশ মাত্র। কেবল বাণিজ্যের ভারসাম্য দ্বরা কোন দেশের প্রকৃত অবস্থা জানা যায় না। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটা দেশের সঠিক অবস্থা জানতে হলে লেনদেনের ভারসাম্য সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে।  বস্ত্তত লেনদেনের ভারসাম্যের মাধ্যমেই একটা দেশের আন্তর্জাতিক দেনা পাওনার পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়।



১২।   জাতীয় মুদ্রার ‘‘মূল্যসংকোচন’’ এবং ‘‘অবমূল্যায়নের’’ পার্থক্য নির্দেশ করুন। ‘‘ভাসমান বিনিময় হার’’ ব্যবস্থার দ্বারা কি মুদ্রার অবমূল্যায়ন পরিহার করা সম্ভব? ডিসেম্বর-২০০৯

মুদ্রার অবমূল্যায়নঃ সরকার বিদেশী মুদ্রার তুলনায় দেশীয় মুদ্রার মূল্যমান কমানোর ঘাষণা করলে তাকে মুদ্রার অবমূল্যায়ন বলে। অর্থাৎ সরকারীভাবে বিদেশী মুদ্রার সংগে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার কমানোকে মুদ্রার অবমূল্যায়ন বলা হয়। মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে এক একক দেশীয় মুদ্রার বিনিময়ে পুর্বাপেক্ষা কম পরিমাণ বিদেশী মুদ্রা  পাওয়া যায়। বিষয়টি একটি উদগারণের মাধ্যমে বুঝা যায়।

ধরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ ডলারের সাথে বাংলাদেশের টাকার বিনিময় হার হল, ১ডলার= ৬০ টাকা। এখন, বাংলাদেশ সরকার যদি ডলারের তুলনায় দেশের মুদ্রার মূল্যমান কমিয়ে ১ডলার= ৭০ টাকা ধার্য করে তবে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে বলা যায়, বাংলাদেশের  মুদ্রার অবমূল্যায়ন  হয়েছে।

মুদ্রার অবমূল্যায়নের উদ্দেশ্যঃ

সরকার নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে থাকেন।

1.      লেনদেন ভারসাম্যের প্রতিকুলতা দূর করা;

2.     রপ্তানি বৃদ্ধি করা ;

3.    আমদানি কমানো।



(১) বিনিময় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতির আওতায় বিনিময় হার আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত হয় । আন্তর্জাতিক তহবিলে দুই উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই দুইট উপায় হচ্ছে (ক) মুলধন বিক্রয়ের মাধ্যমে এবং (খ) ঋণ গ্রহণ করে। এই দুই উপায়ে সদস্য রাষ্ট্রসমুহের মুদ্রা সংগ্রহ করে তহবিলে সংরক্ষিতহ রাখা হয়। যে কোন সদস্য রাষ্ট্র নির্দিষ্ট অনুপাত অনুযায়ী নিজের মুদ্রা তহবিলে জমা রেখে তার বিনিময়ে অন্য যে কোন সদস্য রাষ্ট্রের মুদ্রা গ্রহণ করতে পারে। প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার মুদ্রা এবং স্বর্ণের হিসাবে নিজেদের মূল্য ঘোষনা করতে হয়। এইভাবে নিরূপিত মুদ্রার নির্দিষ্ট মূল্য শতকরা ১০ ভাগ কমানো বা বাড়ানো যায়। কোনও দেওশের মুদ্রার নির্ধারিত মূল্য ১০ ভাগের বেশী বাড়াতে হলে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। প্রত্যেক দেশেরই মুদ্রার নির্দিষ্ট মূল্য স্বর্ণ বা ডলারের হিসাবে নিরূপিত হয় বলে অতি সহজেই এক দেশের মুদ্রার মূল্য অন্য দেশের মুদ্রা মূল্যের সাতে তূলিত হতে পারে এবং এইরূপেই বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত হয়ে থাকে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যেকেরই নিজস্ব মুদ্রার নির্দিষ্ট মুল্য উপরোক্তভাবে নির্ধরিত হওয়ায় আর একটি সুবিধে এই যে, এর ফলে অতি সহজেই এক দেশের মুদ্রাকে অন্য দেশের মুদ্রায় রুপান্তরিত করা চলে।

(২) মুক্ত বৈদেশিক বিনিময় বাজারঃ অন্যান্য সব মূল্যের ন্যায় বৈদেশিক বিনিময় হারও বিদেশী মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহ দ্বরা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা আমদানিকারকদের কারণে এবং সরবরাহ রপ্তানিকারকদের কারণে হয়ে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার দাম যতই কম হবে তার চাহিদা ততই বৃদ্ধি পাবে। আবার বৈদেশি মুদ্রার মূল্য যত বেশি হবে বা দেশীয় মুদ্রার মূল্য যত কম হবে রপ্তানী ততই অধিক হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহও অধিক হবে। বিনিময় হারের পরিবর্তন দেশের আন্তর্জাতিক বানিজ্যের গতি বেশ কিছু পরিমানে প্রভাবন্বিত করে। বিনিময় হারের ক্ষেত্রে কৌশল হস্তচালনা অনেক সময় করা হয়ে থাকে দেশের রপ্তানি ও আমদানি পরিমানকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে; অর্থাৎ লেনদেনের উদ্বৃত্তকে প্রবাবিত করার জন্য।



ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট (Floating Exchange Rate)- চাহিদা ও সরবরাহের পরিবর্তনের ফলে মুদ্রার বিনিময় হারে যে পরিবর্তন হয় তাকে সঞ্চরণশীল বিনিময় হার বলে। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশী হলে বিনিময় হার বেড়ে যাবে এবং বিপরীত অবস্থায় তা কমে যাবে। এ ব্যবস্থায় বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ স্বাধীনভাবে পরিবর্তনীয় মুদ্রা ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এ ব্যবস্থা বিদ্যমান। ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট তিন প্রকৃতির হতে পারে:

প্রথমতঃ বিনিময় হার নিজস্ব ভারসাম্য বিন্দুতে পৌঁছানোর ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখানে বিনিময় হার বৈদেশিক বিনিময় বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের দ্বারা নির্ধারিত হয়।

দ্বিতীয়তঃ বিনিময় হার বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার বিভিন্ন ধরনের নীতিমালার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

তৃতীয়তঃ বিনিময় হার একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্য থেকে স্বাধীনভাবে উঠানামা করতে পারে।



১৩। ‘‘বৈদেশিক বাণিজ্য-ভারসাম্য’’ এবং ‘‘বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের’’ পার্থক্য নির্দেশ করুন। সাম্প্রতিক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করুন। ডিসেম্বর-২০০৯

বাণিজ্য ভারসাম্য  এবং লেনদেন ভারসাম এ দুটি ধারণার মধ্যে নিম্নলিখত পাথ্যর্ক পরিলক্ষিত হয়ঃ

6.     বাণিজ্য ভারসাম্য বলতে কেবল দৃশ্যমান আমদানি ও রপ্তানির পার্থক্যকে বুঝায়। পক্ষান্তরে, লেনদেন ভারসাম্য বলতে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় প্রকার আমদানি ও রপ্তানির পার্থক্যকে বুঝায়।

7.     বাণিজ্যের ভারসাম্য একটা দেশের আন্তর্জাতিক দেনা পাওনার একটা অর্শবিশেষ নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে, লেনদেনের ভারসাম্যে একটা দেশের আন্তর্জাতিক দেনা-পাওনার সামগ্রিক অবস্থা নির্দেশ করে। সুতরাং লেনদেনের ভারসাম্য একটা দেশের দেনা-পাওনার সামগ্রিক চিত্র এবং বাণিজ্যের ভারসাম্য হল তার একটা অংশ মাত্র।

8.     বাণিজ্যের ভারসাম্যে ও লেনদেনের ভারসাম্যের মধ্যে সম সময় সমমুখী সম্পর্ক বিরাজ করে না। যেমন, বাণিজ্যের ভারসাম্য অনুকূল হলেও লেনদেনের ভারসাম্য প্রতিকুল হতে পারে। আবার বাণিজ্যের ভারসাম্য প্রতিকুল হলেও ঐ লেনদেনের ভারসাম্য অনুকুল হতে পারে।

9.     বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় দেনা ও পাওনার উপাদান থাকে। বাণিজ্যের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কেবল সক্রিয় পাওনা ও দেনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। পক্ষান্তরে লেনদেনের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে সক্রিয়  ও নিষ্ক্রিয় উভয় প্রকার দেনা -পাওনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।

10. বাণিজ্যের ভারসাম্যের ক্ষেত্র হিসাবগত অর্থে সম সময় সমতা থাকে না। লেনদেনের ভারসাম্যের ক্ষ্রেত প্রত্যাশিত বা ঊী-ধহঃব অর্থে সমতা না থাকলেও হিসাবগত বা বী-ঢ়ড়ংঃ অর্থে সর্বদাই সমতা থাকে অর্থাৎ হিসাবগত দিক হতে বাণিজ্যের ভারসাত্যে সম সময় সমতা না থাকলেও লেনদেনের ভারসাম্যে সর্বদাই সমতা বিরাজ করে ।

সুতরাং বাণিজ্যের ভারসাম্যে ও লেনদেনের ভারসাম্যের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। লেনদেনের ভারসাম্য হল একটা দেশের দেনা পাওনার সামগ্রিক চিত্র এবং বাণিজ্যিক ভারসাম্য হলো একটা অংশ মাত্র। কেবল বাণিজ্যের ভারসাম্য দ্বরা কোন দেশের প্রকৃত অবস্থা জানা যায় না। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটা দেশের সঠিক অবস্থা জানতে হলে লেনদেনের ভারসাম্য সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে।  বস্ত্তত লেনদেনের ভারসাম্যের মাধ্যমেই একটা দেশের আন্তর্জাতিক দেনা পাওনার পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়।




No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad