প্রশ্নঃ বিনিয়োগ মূল্যায়ন বলতে
কি বুঝেন? বিনিয়োগ মূল্যায়নের প্রধান প্রধান দিকগুলি আলোচনা করুন
বিনিয়োগ মূল্যায়নঃ বিনিয়োগের সাথে বিপুল
পরিমান অর্থ জড়িত। বিনিয়োগ লাভজনক হলেই তার রিটার্ন ফেরত পাবার সম্ভাবনা থাকে।
এজন্য কোন প্রকল্পে অর্থায়নের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ প্রকল্পটি
লাভজনক হবে কিনা বা তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সে বিষয়ে বিবেচনা করে থাকে। এ জন্য
সঠিক বিনিয়োগ নির্বাচনের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প সম্পর্কে
বিশদভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়। বিনিয়োগ মূল্যায়ন এক ধরণের একটি বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে
বোঝায় যার মাধ্যমে একটি প্রকল্প প্রস্তাবের বাস্তবানুগতা এবং লাভযোগ্যতা যাচাই করে সেটির গ্রহণযোগ্যতা বা
তাতে বিনিয়োগ সংক্রাত
সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। সাধারণত অর্থসংসহানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ নতুন প্রকল্পে ঋণদান
বা বিনিয়োগের পূর্বে প্রকল্পে মূল্য নিরূপণ করে থাকেন। বিনিয়োগ মূল্যায়নের সময় তার
কারিগরি, আর্থিক ও অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনাগত সম্ভাব্যতা
পরীক্ষা করে দেখা হয়।
বিনিয়োগ মূল্যায়নের প্রধান প্রধান দিকসমূহঃ কোন প্রকল্পে অর্থায়নের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ
বিনিয়োগ প্রকল্পটি লাভজনক হবে কিনা বা তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সে বিষয়ে বিবেচনা
করে থাকে। এ জন্য সঠিক বিনিয়োগ নির্বাচনের পূর্বে বিনিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প
সম্পর্কে বিশদভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়। সাধারণত অর্থসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ
নতুন প্রকল্পে ঋণদান বা বিনিয়োগের পূর্বে প্রকল্পে মূল্য নিরূপণ করে থাকেন। এই
মূল্যায়ন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে নিমেণ তা বর্ণনা করা হলঃ
ক) কারিগরি সম্ভাব্যতা মূল্যায়নঃ বিনিয়োগের কারিগরি
মূল্যায়নের সময় তা প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত বিবেচনায় যথাযথ কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
এখানে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ধরণ ও পরিমান,
উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া, উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি এবং ভৌত
সুবিধাদি, ভবনাদি ও তদভ্যন্তরে যন্ত্রসরঞ্জামাদি বিন্যাস, আমদানীকৃত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির সাথে সহানীয়
প্রযুক্তি ও কর্মীদক্ষতার সমন্বয়
ইত্যাদি পর্যালোচনা প্রধান বিষয়। কারিগরি মূল্যায়নের সময় সাধারণত - প্রকল্পের
উদ্দেশ্য ও নকশা, পন্য মিশ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা, প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া, ভূমি ও অবসহান,
দালান ও অবকাঠামো, মেশিন ও যন্ত্রপাতি,
প্রযুক্তি সেবা ও মান উন্নয়ন, কাঁচামালের উপযোগিতা,
যোগাযোগ, যন্ত্রাংশের
মূল্যায়ন
ইত্যাদি বিবেচনায় আনতে হয়।
খ) বিপনন মূল্যায়নঃ বিনিয়োগের বিপনন
মূল্যায়নে দেখতে হয় বিনিয়োগ প্রকল্পে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা সামগ্রীর চাহিদা ও
সরবরাহ পরিসিহতি এবং সে সবের মূল্য ও বাজার বিবেচনায় বিপননের মাত্রা ও গুণগত
বৈশিষ্ট্যসমূহ। এক্ষেত্রে বিপননের লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রসতাবিত বিপনন কৌশলসমূহ
পরীক্ষা করে দেখতে হয়। পণ্য ও সেবা সামগ্রীসমহের চাহিদা যেহেতু জনসংখ্য ও
জনসাধারণের আয়, দেশের সামগ্রিক ও বিশেষ বিশেষ এলাকায় উন্নয়নের ধারা, পণ্য বা সেবার
মূল্য, প্রযুত্তিু, রতচি ও ভোগ অভ্যাস, বিকল্প ও সম্পূরক পণ্যাদির মূল্য সরবরাহ,
আমদানী ও রফতানী পরিসিহতি ও ভবিষৎ অর্থনৈতিক অবসহা সম্পর্কে পূর্বানুমান ইত্যাদি
বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল সে কারণে চাহিদা বিশ্লেষন একটি অত্যমত জটিল বিষয়। এ
কারণে বিপনন মূল্যায়নে চাহিদা বিশ্লেষণ কতখানি তথ্যনির্ভর এবং কি মাত্রায় যথাযথ তা
যাচাই করা একামত অপরিহার্য। বিপনন মূল্যায়নে ভোক্তা সনাক্তকরণ, পণ্য চাহিদা, যোগান
বিশ্লেষণ, চাহিদা-যোগানের পার্থক্য নিরূপণ, কাঁচামালের প্রাপ্যতা, রপ্তানী বাজার মূল্য ইত্যাদি
বিবেচনায় আনতে হয়।
গ) ব্যবস্থাপনাগত সম্ভাব্যতা মূল্যায়নঃ বিনিয়োগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনাগত সম্ভাব্যতা মুল্যায়নের
সময় তাতে নিয়োজিত শ্রমিক ও কর্মচারী, উৎপাদন ও বিক্রয় পরিচালনা সামগ্রিক
কর্মধারা সংগঠন ও নিয়মএন এবং এক কথায় অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মী, অর্থ,
মালামাল ও যমএপাতি ও বাজার তৎপরতা ব্যবসহাপনার বিভিন্ন দিক যাচাই করা হয়। বিশেষ
করে উদ্যোক্তা, কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের
দক্ষতার বিষয়টিকে এ মূল্যায়নে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। ব্যবস্থাপনা
সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মীবাহিনীর সক্ষমতা, তাদের
কার্যকরী দক্ষতা এবং তাদের মধ্যেকার ব্যক্তিক সম্পক্য ইত্যাদি পর্যালোচনায় আনা
হয়। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার অক্ষমতার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্ল্যানিং অবাস্তব হওয়ার
সাথে সাথে সাংগঠনিক দূর্বলতা এবং কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়মএনে ফলপ্রসূ প্রভাবের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে
ভালো জ্ঞানসম্পন্ন/দক্ষতা সম্পন্ন ও প্রশিক্ষিত ব্যক্তি নিয়োগের পাশাপাশি যাদের
প্রশাসনিক দক্ষতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং আইনকানুন সম্পর্কে প্রচুর ধারণা আছে
তাদেরকে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হলে বিনিয়োগের উন্নয়ন ঘটতে পারে।
ঘ) আর্থিক সম্ভাব্যতা মূল্যায়নঃ আর্থিক সম্ভাব্যতা
মূল্যায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমান এবং এই অর্থের উৎসসমূহ
নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ যাচাইকল্পে বিনিয়োগের তহবিল প্রবাহ বিশ্লেষণ
এবং উদ্বৃত্তপত্রকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হয় এবং এখান থেকে বিভিন্ন আর্থিক
অনুপাত যেমন, ঋণ-সমমূলধন অনুপাত, ঋণ-নিরাপত্তার বিভিন্ন অনুপাত, ঋণ কৃত্যক আবরণ
অনুপাত, সিহরীকৃত আয় ও অসিহরীকৃত আয়ের ঋণপত্রাদির মূল্যের অনুপাত, ব্যবস্থাপনাগত
দক্ষতা অনুপাত, মুনাফা-ক্ষমতা অনুপাত ইত্যাদি জানা যায়।
আর্থিক সম্ভাব্যতা
মূল্যায়নে আরও যেসব গুরতত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয় সেগুলি হচ্ছে প্রকল্পের
না-লাভ না-লোকসান বিশ্লেষণ, অভ্যন্তরীণ আয় হার এবং প্রকল্পের সেনসিটিভিটির
মাত্রাসমূহ।
আর্থিক সম্ভাব্যতা
মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বের সাথে করতে হয়। এ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবচেয়ে বেশি
লাভজনক ও আকর্ষণীয় প্রকল্পটি নির্বাচন করা। যাতে করে বিনিয়োগের মাধ্যমে
প্রতিষ্ঠানের আর্থিক আয় সম্ভব হয়। এ জন্য আর্থিক সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের সময়
প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়াবলী ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
ঙ) অর্থনৈতিক দিক মূল্যায়নঃ অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা
বিচারের সময় বিনিয়োগ প্রকল্পটি সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির জন্য তথা সমাজের জন্য
কতখানি লাভজনক সেটি বিবেচনা করা হয়। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে
বিনিয়োগ প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে। বিনিয়োগ প্রকল্পের অর্থনৈতিক
সম্ভাব্যতাকে সামাজিক ব্যয়-আয় বিশ্লেষণও বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়
উপাদান ও সামগ্রীসমূহের মূল্য ব্যয় এবং উৎপাদিত পণ্য ও সেবাসামগ্রী থেকে প্রাপ্ত
আয় বাজার দরে না করে একটি সামাজিক হিসাব দরে গণনা করা হয়। অর্থনৈতিক
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কতগুলো পরীক্ষা বা বিশ্লেষণ করতে হয়। যেমন - ক)
অর্থনৈতিক উপযোগের হার খ) বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি গ) জিডিপি তে অবদান ঘ)
কর্মসংসহানের সুযোগ ঙ) সংযোগ প্রভাব ইত্যাদি।
বিনিয়োগ মূল্যায়ন একটি
অত্যমত গুরতত্বপূর্ণ বিষয়। এ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবচেয়ে বেশি লাভজনক ও
আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রকল্প নির্বাচন করা। যাতে করে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের
আর্থিক আয় সম্ভব হয়। এ জন্য বিনিয়োগ মূল্যায়নের সময় উপরোত্তু দিকগুলি সঠিকভাবে পরীক্ষা/বিশ্লেষণ
করে দেখতে হয়।
প্রশ্নঃ অনলাইন ব্যাংকিং বলতে কি
বুঝেন? অনলাইন ব্যাংকিং এর সুবিধা অসুবিধাসমূহ আলোচনা করুন, ক্রেডিট কার্ড ও
রেডিক্যাশ কার্ড এর কার্যাবলী আলোচনা করুন।
অনলাইন ব্যাংকিং: অনলাইন ব্যাংকিং বোঝার
আগে কম্পিউটার পরিভাষায় অনলাইন বলতে কি বুঝায় সেটি প্রথমে জানা দরকার। অনলাইন বলতে
এমন একটি ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে অনেকগুলো আন্তঃসংযোগকৃত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
কম্পিউটার সিস্টেম এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদন করে। যেমন কোন
কম্পিউটারে যখন কোন ব্যক্তি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ব্যবহার করে তখন ঐ কম্পিউটার
অনলাইনে রয়েছে বলা হয়।
ব্যাংকিং জগতে
কম্পিউটারাইজেশনের সাথে সাথে অনলাইন ব্যাংকিং এর কথাও প্রচলিত হয়ে পড়েছে। অনলাইন
ব্যাংকিং এর প্রধান উপাদান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। আমরা জানি, কোন ব্যাংক শাখার
অনেকগুলো কম্পিউটার ল্যান এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। আবার একটি ব্যঅংকের প্রধান
কার্যালয় এবং এর শাখাগুলোর ল্যান এর মধ্যে বেতার তরঙ্গ, অপটিক্যাল ফাইবার বা অন্য
কোন মাধ্যমের সাহায্যে গোটা দেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ হতে পারে। মাল্টিন্যাশনাল
ব্যাংকগুলো খুবই উন্নতমানের যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বিশ্বের শাখাগুলোর
মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। আমরা ব্যাংকে বিদ্যমান এই গোটা ব্যবস্থাটিকে ব্যাপক অর্থে
অনলাইন ব্যাংকিং বলতে পারি। অর্থাৎ ব্যাংকে ল্যান এবং ওয়ান এর সাহায্যে যে সমস্ত
ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হয় তাকে অনলাইন ব্যাংকিং বলে। অনলাইন ব্যাংকিং এর এমন
কতগুলো উদাহরণ হচ্ছে- এটিএম, অটোমেটেড ফান্ড ট্রান্সফার, ইলেকট্রনিক চেক,
ইলেকট্রনিক মানি ইত্যাদি। ক্ষুদ্র পরিসরে ল্যান এবং বৃহত্তর পরিসরে ওয়ান যে
ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করুক না কেন তা অনলাইন ব্যাংকিং এর আওতাভূক্ত।
অনলাইন ব্যাংকিং এর
সুবিধাঃ- অনলাইন ব্যাংকিং ব্যাংকিং জগতে আশীর্বাদ স্বরূপ। এটি ব্যাংকিং জগতে এক
বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। নিম্নে অনলাইন ব্যাংকিং এর সুবিধা উল্লেখ করা হল-
ক) চব্বিশ ঘন্টা অর্থাৎ যে কোন
সময়ে এটিএম এর সাহায্যে অর্থ উত্তোলন করা যায়। খ) অতি অল্প সময়ে যে কোন স্থানে যে
কোন পরিমান অর্থ প্রেরণ করা সম্ভব। গ) ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মান উন্নত করা যায়।
ঘ) আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। ঙ) ব্যাংকের
সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মুনাফাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। চ) অনলাইন
ব্যাংকিং চালুর ফলে গ্রাহকের অযথা হয়রানি বন্ধ করা যায়। ছ) আন্ত শাখা ও আন্ত
ব্যাংক লেনদেন সমন্বয় সহজতর হয়। জ) ইলেকট্রনিক ফান্ড ও ইলেকট্রনিক মানি ব্যবহারের
ফলে গ্রাহকের ব্যবসায়িক লেনদেন সহজতর হয়।
অনলাইন ব্যাংকিং এর
অসুবিধাঃ আমরা
জানি অনলাইন ব্যাংকিং পদ্ধতি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত কম্পিউটার
নেটওয়ার্ক এর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা। আজকাল আধুনিক মানের প্রত্যেকটি ব্যাংকই
অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দেবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই ব্যবস্থার অসংখ্য সুবিধার
পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
ক) যেহেতু এটি
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত একটি ব্যবস্থা তাই এর সংস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচও
অনেক বেশি যা আর্থিকভাবে দুর্বল কোন ব্যাংকের পক্ষে বহন করা কষ্টকর। খ) এই
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর
সাহায্য ছাড়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মীর অভাব এবং তাদের
বিরাট অংকের মাইনে প্রদান ব্যাংকের জন্য একটি অসুবিধার কারণ। গ) যেহেতু অনলাই
ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্বলিত একটি ব্যবস্থা তাই হ্যাকারদের আক্রমনের সম্ভাবনা থাকে।
এতে করে গোপনীয়তা যেমন প্রকাশ হতে পারে তেমনি কম্পিউটার সিস্টেমেও দেখা দিতে পারে
গোলযোগ। ঘ) প্রাকৃতিক অথবা অন্য কোন কারণে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এই
ব্যবস্থা অসুবিধাগ্রস্ত হয়।
ক্রেডিট কার্ডঃ ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর
মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এটি ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত এক
ধরণের প্লাস্টিক কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক তার লেনদেন পরিশোধের জন্য এটি
ব্যবহার করে থাকে। সাধারণত ব্যাংক কোন মূল্যবান গ্রাহককে কোন নির্দিষ্ট কিছু জমার
বিপরীতে(যেমন সঞ্চয়পত্র , এফটিআর,) একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের লিমিট এ কার্ড
সরবরাহ করে থাকে। কার্ডে গ্রাহকের ছবি, নমুনা স্বাক্ষর ইত্যাদি সংযোজিত থাকে। সাধারণত
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে দোকানী/ব্যবসায়ী কার্ড সম্পর্কে
পরিপূর্ণ নিশ্চিত হবার পর কার্ডধারীর নাম, কার্ড প্রতিষ্ঠানের নাম, কার্ড নম্বর
এবং অন্যান্য তথ্য সম্বলিত বিল তৈরি করে কার্ডধারীর কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়
এবং পরে দোকানী বিলের কপি তার ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে নেয়। এই
প্রক্রিয়ায় লেনদেন সহজতর ও জনপ্রিয় হলেও বর্তমানে এই কার্ডের নকল বের হওয়ায় অনেকেই
বিব্রত বোধ করছে।
রেডি ক্যাশ কার্ডঃ নগদ টাকার বিপরীতে
ব্যাংক হতে সরবরাহকৃত এক ধরণের প্লাস্টিক কার্ডকে রেডি ক্যাশ কার্ড বলে। এই
স্মার্ট কার্ডটি তৈরি করা হয়েছে সর্বাধুনিক মাইক্রো প্রসেসর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি
করে। নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি কার্ডে রয়েছে চার সংখ্যার একটি গোপন ব্যক্তিগত
নম্বর, এর ফলে কেবল গ্রাহকই পারবেন কার্ডটি ব্যবহার করতে। এছাড়াও কার্ডে রয়েছে
গ্রাহকের ছবি, নমুনা স্বাক্ষর ও মূদ্রিত নাম। ব্যাংকে জমা রাখা নগদ টাকা এই
কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা আর সেই সাথে ইউটিলিটি
বিল পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে রেডিক্যাশ কার্ডে। রেডিক্যাশ প্রতীক চিহ্ন সম্বলিত
দোকানপাট, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রতিষ্ঠানে এই কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটার পাশাপাশি
এসব বিল প্রদান করা যায় সংশ্লিষ্ট দোকান/প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত রেডিক্যাশ মেশিনের
মাধ্যমে। রেডিক্যাশ মেশিনে ইউটিলিটি বিল জমা দেয়ার পর মেশিন থেকে গ্রাহককে
প্রমাণস্বরূপ ছাপানো একটি রশিদ দেয়া হয়। মূলতঃ নির্দিষ্ট দোকান/প্রতিষ্ঠানের পণ্য
মূল্য পরিশোধের জন্য এই কার্ড ব্যবহার করা হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট
জায়গায় পণ্য বা সেবা ক্রয় করে বা অন্যান্যভাবে খরচ করে বিল পরিশোধ করা হয়। রেডি
ক্যাশ কার্ড হতে দোকানী মেশিনে ব্যালেন্স জানার পর কার্ডধারীর কাছ থেকে বিল এতে
স্বাক্ষর করে নেয় যা পরবর্তীতে দোকানী তার নিজেন হিসাবে জমা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে
নেয়।
প্রশ্নঃ মানি লন্ডারিং কি? কি কি
উপায়ে মানি লন্ডারিং হয়ে থাকে? সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত আইনের আওতায় একজন ব্যাংকার
কিভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ করতে পারে।
মানি লন্ডারিং: মানি লন্ডারিং হলো অবৈধ
বা কালো অর্থকে লেনদেন চক্রের মাধ্যমে বৈধ করা বা স্বচ্ছতাদান করার একটি
প্রক্রিয়া। অন্য কথায় সংগৃহিত অর্থের উৎস গোপন করে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
উক্ত তহবিলকে পর্যায়ক্রমে বৈধ আয় হিসেবে পরিগণিত করা। অর্থাৎ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে
যে সব অর্থ আসছে সেগুলিকে ব্যাংকের মাধ্যমে ডিডি, টিটি, এমটি করে অথবা বিভিন্ন
নামে এ্যাকাউন্ট খুলে তা পরবর্তীতে অন্য কোথাও বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করার যে
প্রক্রিয়া তাকে মানি লন্ডারিং বলে।
প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তাঃ এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন
যে যারা মানি লন্ডারিং করে থাকে তারা দেশ, অর্থনীতি তথা সমাজের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ফেলে। সাধারণত চোরাচালানী, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ট্যাক্স ফাঁকি, রাজনৈতিক দুর্নীতি,
অস্ত্র চোরাচালান ইত্যাদি মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে করা হয়। এতে দেশে আইন শৃংখলার
অবনতি ঘটে। চোরাচালানীর ফলে রাজস্ব আয় হ্রাস ঘটে এবং জনসাধারণ এ পথে আকৃষ্ট হয়,
অর্থনীতিতে কালো টাকার প্রভাবে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়, স্মাগলিং, বিনিয়োগে
অসন্তুষ্টি, ট্যাক্স ফাঁকি ইত্যাদির প্রভাবে অর্থনীতি দূর্বল হয়ে পড়ে। যা প্রতিরোধ
করা অবশ্যই প্রয়োজন।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে
ব্যাংকারের ভূমিকাঃ মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রনে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশই আইন প্রণয়ন করেছে।
বাংলাদেশ ও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ২০০২ সালের ৭ ই এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক মানি
লন্ডারিং সম্পর্কে গাইড লাইন তৈরি করে সমস্ত ব্যাংকগুলোকে তা মেনে চলার জন্য
পরামর্শ প্রদান করেছে। যেহেতু লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হয়ে থাকে সেজন্য
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী একজন ব্যাংক কর্মকর্তা
নিম্নোক্তভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
ক) গ্রাহকদের পরিচয়ের
সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করবেন। হিসাবধারী গ্রাহক ব্যতিত অন্য কারো অনুরোধে
অর্থ প্রেরণের জন্য কোন ড্রাফট/টিটি/এমটি ইস্যুর ক্ষেত্রে অনুরোধকারী পক্ষের পূর্ণ
নাম ও ঠিকানার সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত
নির্দেশক অনুসরণ করতে হবে। খ) গ্রাহকের হিসাবের লেনদেন বন্ধ হওয়ায়ার ক্ষেত্রে
উক্তরূপ বন্ধ হওয়ার দিন হতে অনূন্য পাঁচ বৎসরকাল বিগত সময়ের লেনদেন হিসাবে সংরক্ষণ
করবেন। গ) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে প্রত্যেক
ব্যাংক একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রধান কার্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় পরিপালন ইউনিট এবং
শাখা পর্যায়ে একজন কর্মকর্তা অভ্যন্তরীন পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা করবে।
এক্ষেত্রে শাখায় কর্মরত ব্যক্তি লেনদেন পরিবীক্ষণ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রন নীতি ও
পদ্ধতিসমূহ দেখবেন। ঘ) অস্বাভাবিক লেনদেন সনাক্তকরণ ও গ্রাহকের হিসাবের সম্ভাব্য
লেনদেনের অনুমিত মাত্রা সম্পর্কে গ্রাহকের ঘোষণা সংগ্রহ করবেন। ঙ) অস্বাভাবিক
লেনদেন সংঘটিত হচ্ছে মনে করলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জ্ঞাত করানো যেতে পারে। মনোনীত
কর্মকর্তা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট পেশ করবেন। মোট কথা
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সার্কুলার মোতাবেক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে উক্ত
বিধানসমূহ সুষ্ঠুভাবে পালন করাই একজন ব্যাংক কর্মকর্তার মূল দায়িত্ব।
টীকাঃ
১) অর্থসংস্থানকারী বিলঃ
কোন দেনার অবর্তমানে কোন প্রতিদান ছাড়াই অন্য কোন
ব্যত্তিকে সাময়িকভাবে আর্থিক সাহায্য প্রদান করার জন্য যে লিখিত স্বীকৃত বা
সত্ত্বান্তরিত হয় তাকে অর্থসংস্থানকারী বিল বলে।আর্থিক সুবিধা দানের জন্য সাধারণতঃ এ বিল তৈরি করা হয়। এরূপ
বিল পাবার পর গ্রাহক উক্ত বিল ব্যাংকের নিকট বাট্রার বিনিময়ে ভাঙ্গিয়ে নগদ অর্থ
গ্রহণ করেন। মেয়াদ শেষ হলে গ্রাহক বিলের স্বীকারকারীকে বিল এর অর্থ ফেরত দেয় এবং
বিলে স্বীকারকারী উক্ত বিল পরিশোধ করে দেন। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় উভয় পক্ষই
পরস্পরের উপর বিল লিখে থাকেন। এতে উভয়ের আর্থিক সাহায্য ঘটে। এজন্য একে
সাহায্যকারী বিলও বলা হয়।
২) অথরাইজড
ক্যাপিটালঃ একটি
কোম্পানী নিবন্ধন লাভের সময় মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন সর্বোচ্চ যে পরিমান শেয়ার
মূলধন নির্ধারণ করে থাকে তাকে কোম্পানীর অনুমোদিত মূলধন বলে। অনুমোদিত মূলধনের
অর্থ হচ্ছে কোম্পানীর জন্য উক্ত পরিমান মূলধন সংগ্রহের অনুমতি পাওয়া। উল্লেখ্য যে,
কোম্পানী একবারে এই মূলধন সংগ্রহ করে না, বিভিন্ন সময়ে শেয়ার ছেড়ে ধাপে ধাপে তা
সংগ্রহ করা হয়। অনুমোদিত মূলধনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, কোম্পানী সম্প্রসারণের
প্রয়োজনে এটি বাড়ানো যায়। তবে তার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট বিশেষ অনুমতি নিতে
হয়। অনুমোদিত মূলধনকে নামিক মূলধন নামে অভিহিত করা হয়।
৩) এসিড টেস্ট
অনুপাতঃ বিকল্পভাবে কুইক রেশিও নামে পরিচিত এই অনুপাতে একটি কোম্পানীর তারল্য যাচাই
এর জন্যে ব্যবহদত হয়। এই অনুপাতটি নির্ধারণের জন্য নিমণলিখিত সূত্রটি প্রয়োগ করা
হয়ঃ
তড়িৎ অনুপাত =
সহজলভ্য(তড়িৎ) সম্পদের পরিমান/ চলতি দায়সমূহ।
এখানে সহজলভ্য সম্পদ
বলতে চলতি সম্পদসমূহ থেকে মজুত মালামালের পরিমান বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদকে বোঝানো
হয়েছে।
এই
অনুপাত চলতি অনুপাতের চেয়ে অধিকতর সমেতাষজনক ব্যবসায়ের তারল্য প্রকাশ করে। কেননা
তড়িৎ অনুপাত থেকে ব্যবসায়ের মালামাল বিত্রিু না করেই তার চলতি দায় পরিশোধ ক্ষমতা
বোঝা যায়। সাধারনতঃ ১০০% বা ১ঃ১ কে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য আদর্শ তড়িৎ অনুপাত
হিসাবে ধরা হয়। ১০০% এর কম হলে তরল পরিসম্পদে ঘাটতি প্রকাশ করে আবার বেশি হলে
ব্যবসায় সাফল্যের চাইতে তরল পরিসম্পদের
অলসভাবে পড়ে থাকাকেই বেশি করে নির্দেশ করে।
৪) ব্যাক টু ব্যাক ত্রেুডিটঃ পণ্য আমদানীকারক কর্তৃক
ইস্যুকৃত প্রত্যয়পত্রকে সহযোগী জামানত হিসাবে গ্রহণপূর্বক পণ্য সরবরাহকারীর
অনুকূলে অতিরিত্তু ঋণপত্র ইস্যু বা প্রদান করার নিমিত্তে রপ্তানীকারক এ্যাডভাইজিং
ব্যাংক বা অন্য কোন ব্যাংককে অনুরোধ করতে পারেন। অতিরিত্তু প্রত্যয়পত্র প্রাপ্তির
বিনিময়ে প্রথম ইস্যুকৃত প্রত্যয়পত্রকে সহযোগী জামানত হিসাবে ব্যবহার করা হয় তখন
তাকে ব্যাক টু ব্যাক ত্রেুডিট বলা হয়।
রপ্তানী
বিলের বিনিময়ে ব্যাক টু ব্যাক ত্রেুডিট ঋণপত্র খোলা যেতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে মূল
রপ্তানী বিলের ডকুমেন্ট লিয়েন(জামানত) রেখে ঋণপত্র খুলতে হয়।
এ ধরণের ঋণপত্রের
সুবিধাসমূহ হচ্ছেঃ
ক) এরদপ ঋণপত্রের মূল্য এবং জাহাজীকরণের তারিখ
কোনটাই মূল রপ্তানীর তারিখ অতিত্রুম করতে পারে না।
খ) এই ব্যবসহায় ব্যাংকের সুবিধা হলো, যেহেতু
রপ্তানী বিলের বিনিময়ে ঋণপত্র খোলা হয় তাই রপ্তানীর মূল্য পরিশোধের সাথে সাথে তার
দায় পরিশোধের সম্ভাবনা থাকে।
গ) যদি ত্রেুতা মালপত্র গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে
চুত্তিু অনুসারে নির্দিষ্ট মেয়াদামেত ব্যাংক তার টাকা বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋণ করে
নিতে পারে।
ঘ) ব্যাক টু ব্যাক ত্রেুডিট এর অপর আর একটি সুবিধা
হলো এতে সরাসরি অর্থ প্রদান না করে ভবিষ্যতে প্রদানের আশ্বাস সৃষ্টি হয়।
৫) সম্ভাব্য দায়ঃ সম্ভাব্য দায় বলতে ঐ
সমসত দায়কে বুঝানো হয় যা এখনও সৃষ্টি হয় নাই অথচ ভবিষ্যতে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন
কোন দায় দেনার জন্য ব্যাংকের বিরতদ্ধে কোর্ট ডিত্রিু জারী করায় ব্যাংকের বিরতদ্ধে
উচ্চতর আদালতে আপিল করেছে। অর্থাৎ দায় এখনও
নিষ্পত্তি হয়নি, তবে দায় সৃষ্টি হবার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেশি। ভবিষ্যতে এ দায়
সৃষ্টি হতে পারে বলে ব্যাংক এই প্রকার দায়কে সিহতিপত্রের পার্শ্বে নোটে লিখে রাখে।
সম্ভাব্য দায়সমূহের
মধ্যে বাট্রার অধীনে বিল, সীমাবদ্ধ কোম্পানীর আদায়যোগ্য শেয়ার ইত্যাদি
উল্লেখযোগ্য। ইহা ছাড়াও ব্যাংকের বিপরীতে গ্রাহকের দাবী বা ঋণ হিসাবে স্বীকার করা
হয় নাই, পরিচালক বা ব্যাংকের পক্ষে প্রদত্ত গ্যারান্টি, ফরোয়ার্ড বিনিময় চুত্তিুর
দায় ইত্যাদিও সম্ভাব্য দায় বিশেষ।
৬) নগদ প্রবাহঃ এই প্রবাহ বিবরণীর
মাধ্যমে কারবারের নগদ অর্থের চলাচল দেখানো হয়। এই প্রবাহে কারবারে আয় ও ব্যয় খাতে
নগদ অর্থের আগমন ও নির্গমন হয়ে থাকে। যখন অর্থের আগমন হয় তখন তাকে বলে অর্থের
আমতপ্রবাহ আর যখন অর্থ ব্যয় হয় তখন তাকে বলে অর্থের বহিঃপ্রবাহ। এই দুই প্রবাহের
মধ্যে যা পার্থক্য থাকে তাকে বলে নগদ প্রবাহ। যদি নগদ প্রবাহের আগমন বেশি থাকে তখন
বলা যায় কারবারের অবসহা ভালো।
৭) নিকাশঘরঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি
অন্যতম কাজ হলো নিকাশ ঘর হিসাবে কাজ করা। অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসাবে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন আমতঃব্যাংক লেনদেনের নিষ্পত্তি সাধন করে। একটি ব্যাংকে
যখন অপর ব্যাংকের উপর ইস্যুকৃত কোন চেক বা নোট জমা দেয় হয় তখন তা নিকাশ গরে
উপসহাপনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দুটির মধ্যে লেনদেন সম্পাদিত হয়। এছাড়া,
অর্থনীতির অভিন্ন ইউনিট হিসাবে কাজ করতে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে
অসংখ্য আর্থিক লেনদেন সম্পাদিত করে। এসব লেনদেনের সুষ্টু ও নির্ভূল নিষ্পত্তি সাধন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। ক্লিয়ারিং হাউস বা নিকাশ ঘরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক এ জটিল কাজটি সম্পাদন করে থাকে। ইহাতে একটি ব্যাংক অপর ব্যাংকের জমা ও খরচ
উভয় হিসাবেরই নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। সাধারণভাবে নিকাশ ঘর এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে
চেক বা বিভিন্ন প্রকার বাণিজ্যিক বিল বিনিময় করা হয় এবং বিনিময়ের সময় চেক বা
বিলসমূহ লেনদেনের উদ্বৃত্ত পরিমান নগদে পরিশোধ করা হয়।
৮) ক্যামেলস্ রেটিং: আর্থিক খাত
সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রতিযোগিতামূলকভাবে
পরিচালিত হচ্ছে। এর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে এই খাতে সিহতিশীলতা ও
প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। এই পরিবর্তিত পরিসিহতিতে নিয়মএনকারী ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ
ব্যাংক এফএসআরপি এর পরামর্শত্রুমে তার তদারক ব্যবসহা জোরদার ও আধুনিকীকরণের
পদক্ষেপ নেয় এবং সে প্রেক্ষিতে ব্যাংক সমূহের কার্যত্রুম ও সার্বিক আর্থিক অবসহা
তথা পারফরমেন্স মূল্যায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আমর্তজাতিক মাপকাঠিতে ক্যামেল
রেটিং নামে নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যা
সংকুল ব্যাংক সমূহকে চিহিুত করে এদের কার্যত্রুম সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে এবং
প্রয়োজনীয় ব্যবসহা গ্রহণসহ ব্যাংক সম্পর্কেও সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণের
পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে এই লক্ষ্যে একটি প্রবলেম ব্যাংক মনিটরিং বিভাগ খোলা
হয়েছে। ক্যামেল রেটিং এর মাধ্যমে সমস্যাসংকুল ব্যাংক সমূহের সমস্যাসমূহ সমাধানে
যথাযথ ব্যবসহা নেওয়া হবে এই মর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সমূহের পরিচালক পর্ষদ হতে
অংগীকারনামা গ্রহণেরও ব্যবসহা চালু করা
হয়েছে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের অফ সাইট পরিদর্শনের দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় ব্যাংকসমূহ হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন
পরিসংখ্যানগত প্রতিবেদন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ক্যামেল রেটিং করা হয়। এখানে-
সি- ক্যাপিটাল এডিক্যুয়েসী
এ- এ্যাসেট কোয়ালিটি
এম- ম্যানেজমেন্ট
এ্যাবিলিটি
ই- আর্নিং ক্যাপাসিটি
এল- লিক্যুয়িডিটি।
এস-সেনসিটিভিটি টু
মার্কেট রিস্ক
এটি একটি অনুমোদিত
ফরমুলার আওতায় সি, এ, এম, ই, এল, এস এর সংশ্লিস্ট ব্যাংকের অবসহা আলাদা আলাদাভাবে
নির্ণয় করে রেটিং করা হয়। পরবর্তিতে এই রেটিংগুলোর গড় রেটিং বের করে ১, ২, ৩, ৪ ও
৫ এই ভাবে কম্পোজিট রেটিং করা হয়। এই কম্পোজিট রেটিং এর ১ হলো স্ট্রং, ২ হলো
স্যাটিসফেক্টরী, ৩ হলো ফেয়ার, ৪ মার্জিনাল ও ৫ আনস্যাটিসফেক্টরী মতামত গ্রহণ করা
হয়।
সাধারণত যে সমসত ব্যাংক
কম্পোজিট রেটিং এ ৪ ও ৫ এর মধ্যে থাকে তাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবলেম ব্যাংক
হিসাবে চিহিুত করে প্রয়োজনীয় ব্যবসহা দিয়ে থাকে।
৯) পারিপাসু চার্জঃ পারি পাসু শব্দটি
ল্যাটিন শব্দ থেকে আগত যার অর্থ সমান পদক্ষেপ। অর্থাৎ, যখন একটি বিষয় অন্য একটি
বিষয়ের সাথে সমানভাবে অগ্রসর হয় তখন একে পারিপাসু হিসাবে অগ্রসর হচ্ছে বলে অভিহিত
করা হয়। সাধারণতঃ কোম্পানীর ডিবেঞ্চার ইস্যু করার সময় এ কথাটি ব্যবহদত হয়ে থাকে।
এর অর্থ কোন নির্দিষ্ট সিরিজের ডিবেঞ্চার সমূহ একই হারে প্রদান করতে হবে।
১০) নির্দেশনামাঃ ব্যাংকের কোন গ্রাহক তার
হিসাব পরিচালনার জন্য অন্য লোককে যে দলিলের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রদান করেন তাকে
নির্দেশপত্র বলে। নির্দেশনামা পত্রে গ্রাহক যতটুকু ক্ষমতা প্রদান করে কেবল মাত্র
তার নির্দেশ থাকে।
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে
নির্দেশ প্রদানকারী প্রাপ্তকারীর স্বাক্ষর সত্যায়িত করে দেয় এবং নিজেও স্বাক্ষর
প্রদান করেন। নির্দেশনামা অনুযায়ী ব্যাংকার গ্রাহকের লেনদেন পরিচালনা করতে বাধ্য
থাকেন।
১১) রাইট অব সেট অফঃ এটি ব্যাংকারের একটি
আইনগত অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে ব্যাংকার ও ঋণ গ্রহীতার মধ্যে পূর্ব
নির্ধারিত চুত্তিু থাকতে পারে বা এর উল্টোভাবে চুত্তিুর অবর্তমানে ব্যাংকার একটি
নোটিশ প্রদান করে ঋণ গ্রহীতার ঋণ হিসাব সমন্বয়ের জন্য তার আমানত হিসাবে সেট অফ
প্রয়োগ করার অধিকার অর্জন করতে পারে।
অবশ্য এরদপ সেট অফ প্রয়োগের ক্ষেত্রে খতঢ়য়তর ইক্ষনধভঢ় থাকতে হবে এবং ঋণের অংক
সুনির্দিষ্ট হতে হবে। পূর্ব নির্ধারিত চুত্তিুর মাধ্যমে এই সেট অফ অধিকার অর্জন
বৈধ করার পক্ষে ব্যাংকারকে তার ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে লেটার অব সেট অফ নামে
মেমোরেন্ডাম নিয়ে নিতে হবে।
উল্লেখ্য
যে, সেট অফ শুধুমাত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ ঋণের বেলায় এবং সেট অফ প্রয়োগের দিন সেগুলো
আদায়যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
তবে নিমণলিখিত ক্ষেত্রে
সেট অফ স্বয়ংত্রিুয়ভাবে প্রযোজিত হয়।
ক) গ্রাহকের মৃত্যু হলে বা সে দেউলিয়া হলে।
খ) কোন কোম্পানীর বিলুপ্তিতে বা তার কোন অংশীদার
দেউলিয়া হলে।
গ) কোর্ট হতে গার্ণিশি আদেশপ্রাপ্ত হলে।
ঘ) ব্যাংকে রক্ষিত গ্রাহকের ঋণপত্রের উপর
দ্বিতীয়বার বন্ধকের নোটিশ পাওয়া গেলে।
ঙ) গ্রাহকের জমার উপর এ্যাসাইনমেন্ট নোটিশ প্রদত্ত
হলে।
১২) কার্জে হাছানাঃ প্রচলিত ব্যাংক ব্যবসহার সাথে ইসলামী ব্যাংক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
ও নীতিমালার দিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলামী ব্যাংক তার অর্থ বিনিয়োগকালে সমাজের
প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রাখে। তাই ইসলামী ব্যাংক বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনে
বিনা লাভে ঋণ প্রদান করে থাকে। ব্যত্তিুগত বা জনকল্যানমূলক এ বিশেষ ঋণকে কার্জে
হাছানা বা কল্যাণকর ঋণ বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, ইসলামী ব্যাংকে কার্জে হাছানা
ছাড়া অন্য কোন ঋণের ব্যবসহা নেই।
১৩) নিস্ক্রিয় হিসাব (ডরম্যান্ট এ্যাকাউন্ট)ঃ গ্রাহক বা হিসাবধারী
কর্তৃক তার হিসাব একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যমত লেনদেন বিহীন অবসহায় থাকলে তাকে
নিস্ক্রিয় হিসাব নামে চিহিুত করা হয়। চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে ৬ মাস এবং সঞ্চয়
হিসাবের ক্ষেত্রে ২ বৎসর যাবৎ যদি হিসাবটি লেনদেন বিহীন অবসহায় থাকে সে ক্ষেত্রে
হিসাবের খাতায় সাবধান নিস্ক্রিয় হিসাব লিখে রাখতে হবে।
ব্যবসহাপকের অনুমতি
ব্যতিত নিস্ক্রিয় হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা যায় না। কেননা গ্রাহকে স্বাক্ষর
সম্পর্কে ব্যবসহাপকের সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হতে হয়। স্বাক্ষর সম্পর্কে নিশ্চিত
হবার পর পরবর্তী লেনদেন সমূহ স্বাভাবিকভাবেই চলতে পারবে।
১৪) ভাসমান চার্জঃ ভাসমান চার্জ হচ্ছে এমন
এক ধরনের চার্জ যা কোন কোম্পানী উহার সম্পত্তির উপর প্রদান করে। ইহা অনেকাংশে
নিরপেক্ষ চার্জের মত। এই চার্জ নির্দিষ্ট কোন সময়ের জন্য সম্পূর্ণ বা আংশিক
সম্পত্তির উপর চলমান ধারণা নিয়ে আরোপিত হয়। ইহা এমনভাবে প্রদান করা হয় যে, মেয়াদ
পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যমত যে কোন চার্জকৃত সম্পত্তির পরিচালনা কোম্পানীর সাধারণ
ব্যবসা কালে করতে পারে। ভাসমান চার্জ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
। উল্লেখ্য যে, এ চার্জ ভাসমান চার্জ বলে ইহা সুপ্ত থাকে।
১৫) চলতি মূলধন বা কার্যকরী মূলধনঃ সাধারণ ব্যবসায়ের নিয়মিত কর্মকান্ডে যে মুলধন কার্যরত থাকে
তাকেই চলতি মূলধন বলে। তবে নতুন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়ী
সম্পত্তি ত্রুয়ের পর ব্যবসায়িক কার্য পরিচালনার জন্য যে অর্থ হাতে থাকে তাহাই চলতি
মূলধন। আর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে চলতি দায় অপেক্ষা চলতি
সম্পত্তির যে উদ্বৃত্ত থাকে তাহাই চলতি মূলধন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কার্যকরী মূলধন=
চলতি সম্পত্তি-চলতি দায়। চলতি সম্পত্তি বলতে ঐ সকল সম্পত্তিকে বোঝায় যা সহজেই
অর্থে পরিণত করা যায় বা শীঘ্রই অর্থে পরিণত হবে, যেমন নগদ অর্থ, মজুদ পণ্য,
দেনাদার, প্রাপ্য বিল, অগ্রীম খরচ, অনাদায়ী পাওনা ইত্যাদি। একইভাবে চলতি দায় বলতে
এমন দায় বোঝায় যা শীঘ্র পরিশোধ করতে হবে। যেমন-পাওনাদার, দেয় বিল, ব্যাংক ওভার
ড্রাফট, বকেয়া দায়সমূহ, অগ্রীম আয় ইত্যাদি।
একটি প্রতিষ্ঠানের চলতি
মূলধনের পরিমান তার অর্থনৈতিক অবসহার সূচক। চলতি মূলধন বেশি হলে প্রতিষ্ঠানের
অর্থনৈতিক অবসহান মজবুত বলে ধরা হয়।
১৬) ইউরোঃ ইউরো একটি মূদ্রার নাম। এটি কোন একক দেশের মূদ্রার নাম নয়।
ই, ই, সি ভুত্তু ১৫ টি সদস্য দেশের মধ্যে
১২ টি দেশের অভিন্ন একটি মূদ্রা যা ১৯৯১ সালে স্বাক্ষরিত মাসট্রিখট চুত্তিু
অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ১ লা জানুয়ারীতে আতণপ্রকাশ ঘটে এবং ২০০২ সালে নোট ও মূদ্রা
আকারে এটি বাজারে চালু হয়। ইউরো মূদ্রার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ
ক) ইউরোপীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনীতি শত্তিুশালী
করা।
খ) ব্যবসা-বাণিজ্য খরচ হ্রাস করা।
গ) ইউরোপীয় দেশগুলোতে শুল্কমূত্তু বাজার সৃষ্টি ও
বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা ।
ঘ) অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করা এবং পণ্যবাজার
বৃদ্ধি করা।
ঙ) ইউরোপীয় দেশগুলোর শত্তিু বৃদ্ধি করা এবং পুঁজি
বাজার সৃষ্টি করা।
১৭) ল্যানঃ এক বা একাধিক
প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় সাধন ও গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একই ভবন, পাশাপাশি
অবসিহত ভবন অথবা একই ক্যাম্পাসে অবসিহত কম্পিউটারসমূহের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক বা
আমতঃসংযোগ গড়ে তোলা হয় তাকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলা হয়।
যখন কোন ব্যাংকের শাখা
বা প্রধান কার্যালয়ের কোন বিভাগের বিভিন্ন সেকশনের পিসি সমূহকে ওয়্যারের মাধ্যমে
কিংবা ওয়্যার বিহীনভাবে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয় তখন ঐ সহানে লোকাল এরিয়া
নেটওয়ার্ক করা হয়েছে বলে বুঝায়।
ল্যান এর বৈশিষ্ট্যঃ
ক) ক্ষুদ্র অঞ্চলের
মধ্যে ল্যান এর পরিব্যপ্তি সীমাবদ্ধ থাকে।
খ) ল্যান এ হাই
ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের কারণে দ্রতত তথ্য পরিবহন সম্ভব হয়।
গ) ল্যান এর উপাত্ত
পরিবহনের হার সাধারণত ১ মেগাবাইট/সেকেন্ড থেকে ১০০ মেগাবাইট/সেকেন্ড হতে পারে।
ঘ) একটি একক সিরিয়াল
পরিবহন পথে ল্যান সংযোগ সহাপন করা হয়।
ঙ) সম্পূর্ণ স্বাধীন
সিস্টেমসমূহের মধ্যে ল্যান সংযোগ সহাপন করা হয়।
চ) ব্যবহারকারী ল্যান
ত্রুয়, সহাপন এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে ।
১৮) নন পারফরমিং এ্যাসেটঃ সাধারণতঃ ব্যবসা বা
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ হতে আয় সৃষ্টি হবে এটাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশা
করে থাকে। কিমও বাসতবে দেখা যায় সব ধরণের সম্পদ আয় অর্জনে সক্ষম হয় না। যে সম্পদ
ব্যবসায়িক কর্মকান্ড সম্পাদন করে না এবং কোন আয় উৎপন্ন করে না তাকেই নন পারফরমিং
এ্যাসেট বলা হয়।
আয়
অর্জনের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সম্পদকে প্রধানতঃ দুই ভাগে
ভাগ করা যায়। যথা- পারফরমিং এ্যাসেট ও নন পারফরমিং এ্যাসেট। এখানে পারফরমিং
এ্যাসেট বলতে অশ্রেণীকৃত ঋণ ও নন পারফরমিং এ্যাসেট বলতে শ্রেণীকৃত ঋণকে বুঝানো হয়। ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা মোতাবেক
নন পারফরমিং এ্যাসেট অর্থাৎ, শ্রেণীকৃত ঋণের সুদ আয় খাতে অমর্তভূত্তু হয় না।
পক্ষামতরে, ব্যাংকের আমানতকারী কিংবা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত হারে ব্যাংক
কর্তৃক সুদ প্রদান করতে হয়। তাই নন পারফরমিং এ্যাসেট ব্যাংকিং ব্যবসায় নেতিবাচক
প্রভাব পড়ে। এছাড়াও ঋণ শ্রেণীবিন্যাস নীতিমালা মোতাবেক শ্যেণীবিন্যাসিত ঋণের
সিহতির উপর নির্ধারিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। শ্রেণীকৃত ঋণের উপর প্রভিশনের
হার অশ্রেণীকৃত ঋণের তুলনায় অনেক বেশি। স্বভাবতই এতে ব্যাংকের লোকসান বৃদ্ধি পায়
এবং আয়ের উপর বিরদপ প্রভাব পড়ে।
১৯) আই পি ওঃ একটি পাবলিক লিমিটেড
কোম্পানী প্রথম পর্যায়ে উদ্যোত্তুাদের মূলধন দ্বারা শুরত করা হলেও মূলতঃ জনগণের
কাছে শেয়ার বিত্রিু করে মূলধন সংগ্রহ করে। কোম্পানী প্রথম যে শেয়ার বিত্রিুর
ব্যবসহা করে তাকে শেয়ার বিত্রিুর প্রাথমিক বা ভশভঢ়ভতর সয়থরভদ ষপপনক্ষভশফ (ঐঙঘ)
বলে। পূর্ববর্তী যে সকল শেয়ার বিত্রিু করে তাকে শেয়ার বিত্রিু প্রসতাব বা পাবলিক
অফারিং(পিও) বলে।
আই পি ও এর শুরততে
কোম্পানী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
ক) কোম্পানীর পরিচালক মন্ডলী এ সম্পর্কিত সিদ্ধামত
গ্রহণ করবে।
খ) শেয়ার ইস্যুর ব্যাপারে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড
এক্সচেঞ্জ কমিশন এর নিকট রেজিস্ট্রেশন স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
গ) সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন
রেজিস্ট্রেশন স্টেটমেন্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।
ঘ) পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিকিউরিটিজ এ্যান্ড
এক্সচেঞ্জ কমিশন কোম্পানীকে শেয়ার বিত্রিু করার প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদান করে।
ঙ) অনুমতি লাভের পর কোম্পানী শেয়ার বিত্রিুর
উদ্যোগ নেয় এবং সাধারণত বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে জনগণের নিকট শেয়ার বিত্রিুর
উদ্দেশ্যে প্রসপেক্টাস প্রচার করে। উল্লিখিত কার্যাবলী সম্পাদনের পর কোম্পানী
শেয়ার বিত্রুয়ের কাজ শুরত করে।
২০) নস্ট্র এবং ভস্ট্র হিসাবঃ নস্ট্র এবং ভস্ট্র এ
শব্দ দুটি ল্যাটিন শব্দ হতে গৃহীত হয়েছে। যার মূল অর্থ যথাত্রুমে আমাদের এবং
আপনাদের। অর্থাৎ, নস্ট্র হিসাব আমাদের হিসাব এবং ভস্ট্র হিসাব অন্যদের হিসাব
নির্দেশ করে। যেমন, বাংলাদেশের কোন ব্যাংক তার প্রতিনিধির নিকট যে হিসাব রক্ষা করে
তাকে নস্ট্র হিসাব বলে। আবার বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে বিদেশী ব্যাংক হিসাব রক্ষা
করলে বাংলাদেশের ব্যাংক তাকে ভস্ট্র হিসাব বলে চিহিুত করবে। আমর্তজাতিক ক্ষেত্রে অর্থ
পরিশোধ ও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উত্তু ব্যাংক হিসাব ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেন
নিষ্পত্তি করা হয়।
২১) অথরাইজড ক্যাপিটালঃ একটি কোম্পানী নিবন্ধন
লাভের সময় মেমোরেন্ডাম অব এ্যাসোসিয়েশনে সর্বোচ্চ যে পরিমান শেয়ার মূলধন নির্ধারণ
করে তাকে অনুমোদিত মূলধন বলে। অনুমোদিত মূলধনের অর্থ হচ্ছে কোম্পানী গঠনের জন্য
উত্তু পরিমান মূলধন সংগ্রহের অনুমতি পাওয়া। উল্লেখ্য যে, কোম্পানী একবারে এই মূলধন
সংগ্রহ করে না, বিভিন্ন সময়ে শেয়ার ছেড়ে ধাপে ধাপে তা সংগ্রহ করা হয়। অনুমোদিত
মূলধনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, কোম্পানী সম্প্রসারণের প্রয়োজনে এটি বাড়ানো যায়।
তবে তার জন্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। অনুমোদিত মূলধনকে
নামিক মূলধন নামে অভিহিত করা হয়।
২২) ইস্যুড ক্যাপিটাল(বিলিযোগ্য মূলধন)ঃ অনুমোদিত মূলধনের যে অংশ
জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বিত্রিুর জন্য ছাড়া হয় তাকে বিলিযোগ্য মূলধন বলা হয়। ভেন্ডর,
উদ্যোত্তু ও পরিচালকদের যে শেয়ার বরাদ্দ করা হয় তাও বিলিযোগ্য মূলধনের
অমতর্ভূত্তু। বিলিযোগ্য মূলদন অনুমোদিত মূলধনের সমান হতে পারে কিমত কখনই তা ছাড়িয়ে
যেতে পারে না। বিলিযোগ্য মূলধনকে নিবন্ধিত মূলধনও বলা হয়।
২৩) সাবস্ক্রাইবড ক্যাপিটাল(বিলিকৃত মূলধন)ঃ একটি কোম্পানীর
বিলিযোগ্য মূলধন অর্থাৎ মোট অনুমোদিত মূলধনের যে অংশ সাধারনের বিত্রিুর জন্য শেয়ার
হিসেবে ছাড়া হয় তার পুরোটাই বিত্রিু হতে পারে আবার কিছুটা অবিত্রিুত থাকতে পারে।
বিলিযোগ্য মূলধনের বিত্রিু হয়ে যাওয়া পরিমানকে অর্থাৎ জনসাধারণকে প্রদত্ত শেয়ার
এবং ভেন্ডর, উদ্যোত্তুা ও পরিচালকগণের বরাদ্দকৃত শেয়ারের মোট পরিমানকে বিলিকৃত
মূলধন বলে। বিলিকৃত মূলধন অনেক সময়ই এক সংগে সম্পূর্ণভাবে আদায় করা হয় না। যদি
শেয়ার মালিকদের প্রদেয় অর্থ বিভিন্ন কিসিততে দেবার অনুরোধ করে কোম্পানী বিলিকৃত
মূলধনের কোন অংশ নির্ধারিত প্রাপ্য হিসেবে ঘোষণা করেন তবে সে অংশকে তলবকৃত মূলধন
বলে। অপর যে অংশ দেবার জন্যে শেয়ার মালিকদের এখনও বলা হয়নি তাকে অতলবকৃত মূলধন
বলে।
২৪) মার্চেন্ট ব্যাংকিংঃ দেশের মূলধন বাজারে
প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সমসত ব্যাংক
খোলা অনুমোদন প্রদান করেন তাকে মার্চেন্ট ব্যাংক বলে। মার্চেন্ট ব্যাংক খোলার
পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রতিটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পুঁজি বাজার সংত্রুামত পৃথক
ইউনিট ব্যবসহাপনা এবং তাদের প্রয়োজনীয় জনবল থাকতে হবে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট
প্রতিষ্ঠানের কোন পরিচালক ঋণ খেলাপী থাকতে পারবে না। উন্নত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলি
দেশে পুঁজি বিনিয়োগের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। আভিধানিক অর্থে মার্চেন্ট
ব্যাংকিং হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা অবলিখন করে থাকে, যৌথভাবে ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান সহাপনের জন্য গ্রাহকদের পরামর্শ প্রদান করে।
মার্চেন্ট ব্যাংক মূলধন
বাজারকে জাগ্রত করার জন্য যে কাজগুলো করে থাকে সেগুলি হচ্ছে ক) ইস্যু ম্যানেজমেন্ট
খ) ত্রেুডিট সিন্ডিকেট গ) ইজারা ঘ) কর্পোরেট বডিকে উপদেশ প্রদান ঙ) পোর্ট ফলিও
ম্যানেজমেন্ট চ) মিউচুয়াল ফান্ড ছ) ত্রুয়কৃত চুত্তিু স্কীম ছ) প্রাথমিক মূলধন।
২৫) অবলিখনঃ কোন কোম্পানী শেয়ার
ইস্যুর পর তার ইস্যুকৃত সব শেয়ারের জন্য আবেদনপত্র না পড়লে এবং সে কারণে শেয়ার
অবিত্রিুত রয়ে গেলে এই সব অবিত্রিুত শেয়ার কিনে নেয়ার আগমন নিশ্চিতাদানের কাজকে
অবলিখন বলে। অবলিখনকারী সংসহা একটি নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে এই কাজ করে থাকে
এবং এই সংসহাও শেয়ারগুলি সহায়ীভাবে গ্রহণ করে না সময় ও সুযোগমত পরবর্তীতে বাজার
বিত্রিু করে দেয়। অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাংক, বীমা কোম্পানী বা বিশেষ
প্রতিষ্ঠানসমূহ অবলিখনের মাধ্যমে শেয়ার ত্রুয়ের পর নিজেদের সহায়ী সম্পদ বৃদ্ধির
জন্যও শেয়ারসমূহের অংশ ধরে রাখে। অবলিখন সুবিধা থাকলে নতুন কোম্পানীসমূহের জন্যে
বাজার শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমে আসে এবং এই সুবিধা পুঁজি বাজার গঠনে বিশেষ
ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সংসহা অবলিখন এর কাজ করে থাকে। এসবের মধ্যে
বিনিয়োগ সংসহা(আই সি বি), বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ, বীমা কর্পোরেশন ও স্টক দালাল
উল্লেখযোগ্য।
২৬) সিন্ডিকেশন ফাইন্যান্সঃ অনেক সময় দেখা যায় একক
কোন কোম্পানী বৃহৎ আকারে কাজ করতে গিয়ে অনেক মূলধন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়।
এক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকিং ঝুঁকি ও মূলধন হ্রাস করার নিমিত্তে মূলধন কয়েকটি
কোম্পানীর মধ্য হতে সংগ্রহ করে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য সহায়তা করে।
মূলতঃ এটিকেই ত্রেুডিট সিন্ডিকেট বা সিন্ডিকেশন ফাইন্যান্স বলে। এই প্রেক্ষিতে সে
আইনগত ভূমিকা অবলম্বন করে এবং কিছু কমিশন প্রাপ্ত হয়।
২৭) অফশোর ব্যাংকিংঃ অফশোর ব্যাংকিং
আমতর্জাতিক মুদ্রা বাজারের সাথে সম্পৃত্তু এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবসহা যে ব্যাংকিং
ব্যবসহায় বিদেশী সূত্র হতে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সৃষ্টি হয় এবং দেশীয় আইন কানুনের
বাহিরে আলাদা আইন কানুনের মাধ্যমে পরিচালিত ও হিসাব সংরক্ষণ করা হয় তাকে অফশোর
ব্যাংকিং বলে।
অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট
মূলতঃ অফশোর ব্যাংকিং জোনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই জোন মুত্তু বাণিজ্য জোনের মতোই
যার মাধ্যমে মুত্তু বাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা আহরণ করা সম্ভব হয়।
সাধারণ বাণিজ্যিক
ব্যাংকগুলোর ব্যবসার পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকের ব্যবসা পরিচালনা করা যেতে পারে।
সাধারণ ব্যাংকগুলোর মত আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদান অফশোর ব্যাংকিং এর কার্যত্রুম হলেও
এই জাতীয় ব্যাংকের আমানত এবং ঋণ প্রদান দুটিই যথাত্রুমে বৈদেশিক সূত্র হতে আগমন ও
বিদেশসহ গ্রাহকের অনুকূলে প্রদান করা হয়। অর্থাৎ এই জাতীয় ব্যাংকের কার্যকলাপ
শুধুমাত্র অনাবাসীদের মধ্যেই আবৃত থাকে।
সাধারণত কোন দেশের সরকার
যখন বিদেশী ব্যাংকিং এর সুযোগ সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে কর রেয়াত, মুনাফা প্রেরণে
নমনীয়তা, কম মূলধনের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা করে
তখন কোন বিদেশী ব্যাংক প্ররোচিত হয়ে তার কোন অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট সে দেশে সহাপন
করে।
*** পার্থক্য নির্ণয় ***
১) প্লেজ ও হাইপোথিকেশন
প্লেজঃ ঋণ চুত্তিু শর্তানুযায়ী
একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার জামানতকৃত মালামালের বা পণ্যদ্রব্যের
উপর যে স্বত্ব বা অধিকার লাভ করে তাকে পণ্যদ্রব্য বন্ধক বা প্লেজ বলে। ভারতীয়
চুত্তিু আইনের ১৭২ নং ধারায় প্লেজ এর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কোন প্রতিশ্রততি বা
ঋণ পরিশোধের হিসাবে ঋণ গ্রহীতার কোন অসহাবর সম্পত্তি ঋণদাতার নিকট গচ্ছিত রাখলে
তাকে প্লেজ বলে। উল্লেখ্য যে, সম্পত্তির উপর স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেও ঋণদাতা
সম্পত্তির মালিক হয় না এবং ঋণ পরিশোধ হলে ঋণ গ্রহীতার দায়বদ্ধতা থাকে না। কিমও
সময়মত ঋণ পরিশোধ না হলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে ও কোর্ট কর্তৃক
ডিত্রিু প্রাপ্তির পর উত্তু মালামাল বিত্রুয় করে দিতে পারে।
হাইপোথিকেশনঃ যখন ঋণগ্রহীতা ব্যাংকে সহাবর বা অসহাবর
সম্পত্তি বন্ধক রাখে কিমও এর দখল ঋণগ্রহীতার নিকট থাকে। এরদপ ক্ষেত্রে চার্জ
সৃষ্টির জন্য যে দলিল করা হয় তাকে লেটার অব হাইপোথিকেশন বলা হয় এবং চার্জকে
হাইপোথিকেশন বলা হয়। ঋণ গ্রহীতা হাইপোথিকেশন এর মাধ্যমে এমন চুত্তিু করে যে,
ব্যাংক চাইলে ঋণগ্রহীতা বন্ধকী সম্পত্তির দখল ব্যাংকের নিকট সমর্পণ করবে।
হাইপোথিকেশন হচ্ছে নির্দিষ্ট দেনার কারণে সম্পত্তির উপর সৃষ্ট চার্জ, যেখানে সম্পত্তির মালিকানা বা দখল
কোনটাই পাওনাদারের নিকট হসতামওরিত হয় না।
২) সি আর আর ও এস এল আর
ব্যাংক আমানতকারীদের কাছ
থেকে যে আমানত গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী মোট আমানতের ২০%
বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এই জমা নগদ আকারে এবং বন্ড ত্রুয়ের মাধ্যমে রাখতে
হয়। ধরা যাক, আমানত ১০০ টাকা হলে ২০% অর্থাৎ ২০ টাকা জমা রাখতে হবে। এই ২০% অর্থের
মধ্যে আবার ২০% অর্থাৎ ২০ টাকার মধ্যে ৪ টাকা নগদ আকারে এবং বাকী ১৬ টাকা বিভিন্ন
সিকিউরিটি বন্ড ত্রুয়ের মাধ্যমে রাখতে হয়। এই ক্ষেত্রে ৪ টাকা হচ্ছে সি আর আর এবং
২০ টাকা হচ্ছে এসএলআর। সিআরআর হচ্ছে এসএলআর এর একটি অংশ। এই হার ঠিকমত
রক্ষনাবেক্ষণ করা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক জরিমানা আরোপ করে।
৩) ইউরো ও এসডিআর
ইউরোঃ ইউরো একটি মুদ্রার নাম। এটি কোন একক দেশের
মুদ্রার নাম নয়। ইউরোপিয় ইউনিয়নভূত্তু ১৫ টি সদস্য দেশের মধ্যে ১২ টি দেশের অভিন্ন
একটি মুদ্রা যা ১৯৯১ সালে স্বাক্ষরিত মাসট্রিখট চুত্তিু অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ১ লা
জানুয়ারিতে আতণপ্রকাশ ঘটে এবং ২০০২ সালে নোট ও মুদ্রা আকারে এটি বাজারে চালু হয়।
ইউরো মুদ্রার মূল লক্ষ ও উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে ক) ইউরোপীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনীতি
শত্তিুশালী করা খ) ব্যবসা বাণিজ্য খরচ হ্রাস করা গ) ইউরোপীয় দেশগুলোতে শুল্কমূত্তু
বাজার সৃষ্টি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা ঘ) অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা এবং
পণ্যবাজার বৃদ্ধি করা ঙ) ইউরোপীয় দেশগুলোতে শত্তিু বৃদ্ধি করা পুঁজি বাজার সৃষ্টি
করা।
এসডিআরঃ বিশ্ব মুদ্রার তারল্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৯
সালের দিকে আইএমএফ নিজস্ব তহবিল হতে মুদ্রা তোলার একটি বিশেষ আইন পাশ করে। একে
স্পেশাল ড্রইং রাইট বলে। যুত্তুরাষ্ট্রের ডলার, জার্মানীর ডয়েস মার্ক, ফ্রান্সের
ফ্রাঙ্ক, যুত্তুরাজ্যের পাউন্ড স্টার্লিং এবং জাপানের ইয়েনসহ বিশ্বের এই পাঁচটি
মুদ্রার সমন্বয়ে এসডিআর গঠিত। প্রত্যেক সদস্য তহবিল হতে নিজ নিজ বরাদ্দ অনুযায়ী
মুদ্রা তুলতে পারে এবং তাদের প্রয়োজনীয় বিনিময়ের জন্য সদস্য দেশিয় যে কোন মুদ্রা
পেতে পারে। আবার তহবিলের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে তাদের লেনদেন
পরিচালনা করতে পারে। এসডিআর এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-ক) লেনদেনের ভারসাম্য ঘাটতি
মিটানো এবং খ) সদস্য দেশগুলোর মোট মজুদ সংরক্ষণের উন্নয়ন বিধান করা। অবশ্য আইএমএফ
এর কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য দেশগুলোর এসডিআর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি পরিমানগত নির্দিষ্ট
সীমা সিহর করে দেয়।
৪) সাইট বিল ও ইউসেন্স
বিলঃ
সাইট বিল বলতে এমন এক ধরনের আমদানী বা
রপ্তানী বিলকে বুঝায় যে বিল দেখামাত্র গ্রহণ অথবা গ্রহণীয় নয় বলে ফেরত প্রদান করা
হয়। সাইট বিল গ্রহণের অথবা অগ্রহণের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নাই। অর্থাৎ সময়
ক্ষেপনের কোন ব্যবসহা নাই। বিল তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ অথবা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণীয় না
হলেও এর কারণ বর্ণনা করতে হয়।
অপরদিকে ইউজেন্স বিল
বলতে এমন এক ধরণের আমদানী/রপ্তানী বিলকে বুঝায় যা বিলের গায়ে বর্ণিত সময়সীমা
পর্যমত মূল্য প্রদানের জন্য অপেক্ষা করা হয় এবং এই ঋণ বিলে মূল্য প্রদানের
ক্ষেত্রে সময় গণনার জন্য গ্রহীতার স্বীকৃতি গ্রহণ করতে হয়। শর্তভেদে দিনকাল গণনা
শুরত করা যায়। অর্থাৎ স্বীকৃতির দিন হতে বিল প্রদানের সময় গণনা শুরত হয়। সাইট
বিলের ক্ষেত্রে মূল্য প্রদান পূর্বক বিল আমদানীকারককে গ্রহণ করতে হয় আর ইউজেন্স
বিলের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্বীকৃতি প্রদান করেই বিল গ্রহণ করা হয়। আমদানীর
ক্ষেত্রে বিলের বিপরীতে পণ্য খালাস/ছাড় করিয়ে এটি বিত্রুয়পূর্বক বিলের দায পরিশোধ
করা যায়। সাইট বিলের ক্ষেত্রে আমদানীকারক/রপ্তানীকারকদের জন্য এই সুবিধা নাই।
এলসি এর বিপরীতে ড্র করা যে কোন বিল অর্থাৎ সাইট/ইউজেন্স
বিল যাই হোক না কেন এলসি এর শর্ত পরিপালিত হলে এলসি ইস্যুয়িং ব্যাংককে এটির মূল্য
প্রদান করতে হয়।
৫) মন্দ ঋণ ও প্রভিশন
৬) ব্রীজ অর্থায়ন ও লীজ
অর্থায়নঃ
মূলধন
বাজারে সকল কোম্পানীর সমান আধিপত্য থাকে না। প্রতিষ্ঠিত কিছু কিছু কোম্পানীর শেয়ার
বাজারে ব্যাপক সংখ্যক ত্রেুতা বিত্রেুতাকে আকৃষ্ট করে রাখে। অর্থাৎ বড় বড় ও
প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে ছোট ছোট নতুন কোম্পানীগুলো
শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ার বিত্রিু করতে গিয়ে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। এমনকি
নতুন শেয়ার ইস্যু করতে গিয়ে শেয়ারের ত্রেুতাদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে তাদেরকে
শেয়ারের অবমূল্যায়নও করতে হয়। এ সকল কোম্পানীর শেয়ার ও সিকিউরিটি বাজারজাতকরণের এ
সমস্যা দূরীকরণে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মধ্যসহতার ভূমিকা পালন করে।
যে প্রত্রিুয়ার মাধ্যমে একটি অর্থলগ্ণী
প্রতিষ্ঠান শেয়ারের ত্রেুতা ও ইস্যুকারী কোম্পানীর মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে
ইস্যুকারী কোম্পানীর কাছ থেকে শেয়ার ও সিকিউরিটি শেয়ারের ত্রেুতাদের কাছে এবং
শেয়ার ত্রেুতাদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করে শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানীর কাছে পৌঁছে
দেয়া তাকে ব্রীজ ফাইন্যান্সিং বলে। এ প্রত্রিুয়ায় শেয়ারের ত্রেুতা ও ইস্যুকারী
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি সংযোগ থাকে না। মধ্যসহতাকারী প্রতিষ্ঠান ইস্যুকারী
কোম্পানীর কাছে নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ার বা সিকিউরিটি ত্রুয় করে নেয় এবং এগুলি
নিজস্ব পোর্টফলিও অনুযায়ী সম্ভাব্য ত্রেুতাদের কাছে থেকে বিত্রিু করে দেয়। এভাবে
ব্রীজ ফাইন্যান্সিং উদ্যোত্তুাদের ইক্যুইটির অংশ মেটাতে তাদের সাময়িক অসুবিধা
দূরীকরণের একটি গুরতত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ সংসহা সেতু
অর্থায়ন করছে।
লীজ হলো এমন একটি চুত্তিু যার
মাধ্যমে একপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার সম্পত্তি ব্যবহারের অনুমতি দেয় বংং অপরপক্ষ
ঐ সম্পত্তি ব্যবহারের জন্য কিসিততে টাকা প্রদান করে। এখানে প্রথম পক্ষকে ইজারা
দানকারী এবং দ্বিতীয় পক্ষকে ইজারা গ্রহণকার বলে।
কারবার
প্রতিষ্ঠান যদি কোন সম্পত্তি ত্রুয় না করে আর্থিক ইজারার মাধ্যমে ব্যবহার করে তবে
সেক্ষেত্রে আর্থিক বিবরণীতে তার নগদ প্রবাহে প্রভাব গড়ে। এতে প্রতিষ্ঠানটি তার নগদ
অন্যদিকে ব্যবহদত করতে পারে। ইজারা গ্রহীতা ইজারার মাধ্যমে সম্পত্তি বা যমএপাতি
ত্রুয় না করে আর্থিক দিক থেকে ইজারা গ্রহণের মাধ্যমে কতগুলি সুবিধা পেয়ে থাকে।
৭) মুদারাবা ও মুশারাকা
মুদারাবাঃ ইহা ইসলামী ব্যাংকের
বিনিয়োগ নীতিমালার একটি ভিত্তি। এ ব্যবসহায় ব্যাংক একই ব্যবসায়ে বা প্রকল্পে সমুদয়
অর্থ সরবরাহ করে এবং অর্থ গ্রহণকারী ব্যবসায়ের যাবতীয় কার্যত্রুমের ভার গ্রহণ করে।
ব্যবসায়ের লাভের অংশ বিনিয়োগ নীতি অনুযায়ী উভয়ের মধ্যে বন্টন হয়। তবে ব্যবসায়ে বা
প্রকল্পে সত্যিকারভাবে লোকসান হলে ব্যাংক একাই উত্তু লোকসান বহন করে। এই ব্যবসহায়
যে সমসত শর্তাদি বিদ্যমান আছে তা সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত হলঃ
ক) প্রশাসন ও ব্যবসহাপনা
উদ্যোত্তুাকে পরিচালনা করতে হয়
খ) চুত্তিুর শর্তানুযায়ী
ব্যাংক নীট মুনাফা/লোকসানের অংশীদার হবে তবে
গ) চুত্তিুর কোনরদপ
বরখেলাপের বিরতদ্ধে ব্যাংক স্বনিয়োজিত উদ্যোত্তুার নিকট হতে পারফরমেন্স গ্যারান্টি
গ্রহণ করা
ঘ) প্রকৃত লোকসান ব্যতিত
ব্যাংক অন্য কোন কারণে লোকসানের দায়িত্ব বহন করে না।
ঙ) অর্থ গ্রহণকারী
ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিত অন্য কোথা হতে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে না।
মুশারাকাঃ
এটি একটি অংশীদার কারবার
যেখানে সকল অংশীদার কম-বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করবে। কারবারের লাভ পারস্পরিক সম্মতির
ভিত্তিতে বন্টিত হবে আর লোকসান হলে তা মূলধনের অানুপাতিক হারে বন্টন করা হবে। এর
বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি নিমণরদপঃ
1) এটি
দ্বিপাক্ষিক/বহুপাক্ষিক অংশীদারী কারবার।
2) মুশারাকা বিনিয়োগের
ক্ষেত্রে ব্যবসার লাভ পূর্ব নির্ধারিত হারে এবং লোকসান মূলধনের আনুপাতিক হারে
বন্টিত হয়।
3) মুশারাকা বিনিয়োগে সকল
পক্ষ কারবারে সত্রিুয় অংশগ্রহণ করতে পারে যদিও তা অপরিহার্য নয়।
4) মুশারাকা সহায়ী বা
অসহায়ী হতে পারে।
পুঁজির প্রকৃতি অনুসারে
মুশারাকা বিনিয়োগকে চারভাগে বিভত্তু করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে যথাত্রুমে ১) শিরকাত
আল ইনান ২) শিরকাত আল মুফাবাদা ৩) শিরকাত আল ওয়াজুহ।
৮) নোটিং ও প্রটেস্টিংঃ
কোন
বিনিময় বিল অস্বীকৃতি বা অপরিশোধের জন্য অমর্যাদাকৃত হলে, উত্তু বিলের ধারক এরদপ
অমর্যাদার বিষয়টি ""নোটারী
পাবলিক'' দ্বারা উত্তু বিলের উপর বা তৎসংলগ্ণ কোন কাগজের উপর বা উভয়ের উপর
লিপিবদ্ধ করতে পারেন এরদপ লিপিবদ্ধকরণকে নোটিং বলা হয়। লিপিবদ্ধকরণ বিল
অমর্যাদাকৃত হবার পর পরই যুত্তু সংগত সময়ের মধ্যে নোটিং করাতে হবে। এবং এতে
প্রত্যাখ্যানের তারিখ বা এর জন্য কোন কারণ দর্শানো হলে, উহা এবং নোটারীর খরচ লিখতে
হবে। নথিভূত্তু খরচ মিটানোর জন্য বিলের বা উপসহাপনকারীর নিকট হতে যে ফিস গ্রহণ করা
হয় তাকে নোটিং চার্জ বলে। পরে ড্রয়ি এর নিকট হতে বিলের টাকা সমেত এই নোটিং চার্জ
বিলের ড্রয়ি আদায় করে নেন। অপরপক্ষে বিনিময় বিল অস্বীকৃতি বা অপরিশোধের দরতন
প্রত্যাখ্যাত হলে যুত্তিুসংগত সময়ের মধ্যে এর ধারক প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নোটিং
করিয়ে নোটারী পাবলিকের সরকারী সীল এবং স্বাক্ষরযুত্তু সার্টিফিকেটকে প্রতিবাদকরণ
বা প্রোটেস্টিং বলে।
৯) পেমেন্ট অর্ডার ও গার্ণেশী অর্ডার
পেমেন্ট অর্ডারঃ কোন নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রাপকের নিকট
পরিশোধ্য বলে ব্যাংকের একই শাখা হতে ইহা ইস্যু করা হয় এবং প্রদান করা হয়। প্রাপকের
নিকট পরিশোধ্য বলে ইহা হসতামতর অযোগ্য দলিল হিসেবে চিহিুত। ব্যাংকের একই শাখা হতে
পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু এবং প্রদান করা হয় বলে বিদেশে এর মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করা যায়
না। পেমেন্ট অর্ডারের ব্যবহার সীমিত। সাধারণতঃ এটি কোন জামানত হিসেবে ব্যবহদত হয়।
গার্ণেশী অর্ডারঃ গার্ণেশী আদেশ হচ্ছে এমন
একটি আদেশ যার মাধ্যমে আদালত গার্ণেশীকে রায় গ্রহীকার(পাওনাদার) প্রাপ্য ঋণ
পরিশোধের জন্য গার্ণেশীর নিকট জমাকৃত দেনার সকল জমাকৃত অর্থ আটক করার একটি
নির্দেশনামা বুঝায়। যে সব দেনা আদেশের দিন সংঘটিত হয়েছে কিমও ভবিষ্যৎ এ কোন
নির্দিষ্ট তারিখে পরিশোধ্য সে সমসত দেনার ক্ষেত্রেই কেবল গার্ণেশী আদের্শ প্রয়োগ
করা হয়। গার্ণেশী আদের্শ দু ধরণের হতে পারে। যথাঃ সীমাহীন ও সীমাবদ্ধ। আদেশ যদি
সম্পূর্ণ অর্থের উপর হয় তবে তাকে সীমাহীন আদেশ বলে। নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের উপর
হলে তাকে সীমাবদ্ধ আদেশ বলে। উল্লেখ্য যে, গার্ণেশীকে কোর্টে তার বত্তুব্যের সুযোগ
প্রদান বা কারণ দর্শানোর পরই কোর্ট গার্ণেশী আদেশ প্রদান করতে পারে। এই আদেশ
ডিত্রিুর ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ইহা আপীল ও অন্যান্য ব্যাপারে ডিত্রিুর মতই
শর্তের অধীনে চালিত।
১০) মাইত্রেুা ত্রেুডিট ও ক্যাশ ত্রেুডিটঃ
মাইত্রেুা ত্রেুডিটঃ দরিদ্র লোকদের সাবলম্বী
করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তথা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতিকরণের জন্য অর্থ সংসহানকারী
প্রতিষ্ঠান যখন দরিদ্র লোকদের তাদের নিজেদের প্রয়োজনে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ
প্রদান করে থাকে তখন তাকে ক্ষুদ্র ঋণ বলে। দারিদ্রতা নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা
আজ পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। পৃথিবীর বহু দেশে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তাদের দেশ হতে
দারিদ্রতা মুত্তু করেছে। ক্ষুদ্র ঋণের গুরতত্ব অনুধাবন করে পাশ্চাত্য অর্থনীতিবিদগণ
মনে করেন, দারিদ্র থেকে অসমেতাষ এবং অসমেতাষ থেকে যাতে বিপ্লব সৃষ্টি না হয় তার
একটি সফল পরীক্ষিত পমহা হচ্ছে মাইত্রেুা ত্রেুডিট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি
আনান এর মতে, মাইত্রেুা ত্রেুডিট হচ্ছে গরিবী হটানোর একটি যমএ এবং মানব পুঁজির
ক্ষেত্রে একটি ভালো বিনিয়োগ। উল্লেখ্য যে, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীর মাধ্যমে একজন
বিত্তহীন ভূমিহীনের সম্পদে প্রথম প্রবেশাধিকার ঘটে। অর্থাৎ এশিয়া, আফ্রিকা ও
ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশে মাইত্রেুা ত্রেুডিট ঋণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে
দ্রতত চমক সৃষ্টি করছে। এ ঋণ সাধারণতঃ একটি গ্রতপকে দেয়া হয়। গ্রতপের কোন সদস্য
খেলাপী হলে অন্যরা দায়বদ্ধ থাকে। সপ্তাহ অমতর ঋণের টাকা আদায় করা হয় একটি
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ এজন্য মনিটরিং করে থাকে।
ক্যাশ ত্রেুডিটঃ যে ব্যবসহার মাধ্যমে ব্যাংক তার মক্কেলকে অগ্রিম
ঋণ মঞ্জুর করে কিমও সরাসরি নগদে ঐ টাকা উঠাবার অনুমতি দেয় না তাকে নগদ ঋণ বলে। নগদ
ঋণের বৈশিষ্টগুলি হচ্ছে-
1) এ ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদে
পরিশোধ করতে হয়।
2) এ ঋণ স্বল্পমেয়াদী ও
দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।
3) মক্কেল বা ঋণগ্রহীতা যে
কোন ব্যাংক হতে এ সুবিধা নিতে পারে।
4) নগদ ঋণের বেলায় একটি
নির্দিষ্ট সুদের হার থাকে। যা সকলের ক্ষেত্রে সমান।
5) এ ঋণ ব্যাংকের চলতি
হিসাব বা চেকের আলাদাভাবে নগদ ঋণ হিসাব নামে মক্কেলের হিসাবে ত্রেুডিট করে দেয়া
হয়।
6) নগদ ঋণের টাকা চেকের
মাধ্যমে ঋণগ্রহীতা যে কোন সময় তুলতে পারে। যা ঋণ সীমার মধ্যে থাকে।
7) নগদ ঋণের ক্ষেত্রে শুধু
যত টাকা উঠানো হয় তার উপর সুদ দিতে হয়।
১১) বিড বন্ড ও পারফরমেন্স গ্যারান্টিঃ
বিড বন্ডঃ এটি আমতর্জাতিক
টেন্ডারে অংশগ্রহণের নিমিত্তে ব্যাংক কর্তৃক তার কোন মক্কেল(সাধারণতঃ ঠিকাদার) এর
পক্ষে ইস্যুকৃত একপ্রকার ব্যাংক গ্যারান্টি অথবা আন্ডারটেকিং।
যদি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার
সর্বনিমণ বিডার হিসেবে দরপত্র কৃত কর্ম/প্রকল্প/সরবরাহের দায়িত্ব পাবার পরও তা হতে
প্রত্যাখ্যাত হন, তবে বিড বন্ডের নগদায়ন করা যাবে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কিংবা
গ্যারান্টিদাতাকে সর্বনিমণ এবং নিকটতম সর্বনিমণ বিডের মধ্যকার পার্থক্য অপসরণের
জন্য বলা যাবে, অবশ্য যদি বিড বন্ডে উত্তু ক্লজ সমূহ অমর্তভূত্তু থাকে। বিড বন্ড
ইস্যু করার পূর্ব শর্ত হিসেবে ব্যাংক সাধারণতঃ ঠিকাদার বা মক্কেলের কাছ থেকে নগদ
সীমা এবং /অথবা পাল্টা গ্যারান্টি সংগ্রহ করে থাকে।
পারফরমেন্স গ্যারান্টিঃ
কোন কার্য সম্পাদনের
উদ্দেশ্যে ব্যাংকার যে গ্যারান্টিপত্র কোন ব্যত্তিু বা প্রতিষ্ঠানকে ইস্যু করে
তাকে পারফরমেন্স গ্যারান্টি বলে। নির্দিষ্ট সময়ে চুত্তিু মোতাবেক ব্যত্তিু কার্য
সম্পাদন করতে ব্যর্থ হলে সে কাজের জন্য ব্যাংকার দায়ী হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে
বাধ্য থাকবে। ব্যত্তিু বা প্রতিষ্ঠানের পারফরমেন্স এর উপর ব্যাংক এই গ্যারান্টি
ইস্যু করে বলে ইহাকে পারফরমেন্স গ্যারান্টি বলে। যেমনঃ একজন ঠিকাদার যদি কোন একটি
রাসতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেরামত কার্য শেষ করবে বলে ব্যাংক গ্যারান্টি নেয় এবং
সে যদি তার কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হয় তবে ব্যাংক তার জন্য দায়ী থাকবে।
১২) তলবী ঋণ হার এবং ব্যাংক হারঃ
তলবী ঋণ হারঃ যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কোন প্রতিষ্ঠান
বা ব্যত্তিুকে ঋণ প্রদান করে তাকে ঋণের নুন্যতম হার বলে।
ব্যাংক হারঃ ব্যাংক হার বলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার
বুঝায়। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে ঋণ দেয় তাকে
ব্যাংক রেট বলে। ব্যাংক হার যদি বৃদ্ধি পায় হবে বাজার হারও বৃদ্ধি পায়। আবার
ব্যাংক হার হ্রাস পেলে বাজার হারও হ্রাস পায়। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রা
বাজার নিয়মএনে ব্যাংক হারকে কঠোরভাবে নিয়মএন করে থাকে।
১৩) কোর ক্যাপিটাল ও সাপ্লিমেন্টারী ক্যাপিটালঃ
কোর ক্যাপিটালঃ একটি ব্যাংকের কোর
ক্যাপিটাল হচ্ছে ব্যাংকের ক্যাপিটাল গঠনের ঐ অংশ যা ব্যাংকের ঝুঁকি সম্বলিত
সম্পদের সুনির্দিষ্ট পরিমান থাকতে হয়। ঝুঁকি সম্বলিত এবং বর্ণিত সম্পদের চেয়ে কোর
ক্যাপিটাল ঘাটতি থাকলে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তির দূর্বলতাকে নির্দেশ করে। কোর
ক্যাপিটাল এর মূল অংশগুলো হচ্ছে ক) পেইড আপ ক্যাপিটাল খ) স্ট্যাট্যুটরী রিজার্ভ গ)
জেনারেল রিজার্ভ ঘ) রিটেইন্ড আর্নিংস।
সাপ্লিমেন্টারী
ক্যাপিটালঃ এটি ক্যাপিটাল গঠনের সহায়ক অংশকে বুঝায়। সাধারণত এই ক্যাপিটাল এর
অমর্তভূত্তু মূল অংশগুলো হচ্ছে ক) সর্বমোট অশ্রেণীভূত্তু ঋণের নূন্যতম ১% খ)
সম্পদের পুনঃমূল্যায়ন গ) এক্সচেঞ্জ গেইন।
ব্যাংকের ক্যাপিটাল
গঠনের ক্ষেত্রে উপরোত্তু দুটি অংশই অপরিহার্য। প্রথমোত্তুটিকে আমরা মালিকের মূলধন
এবং দ্বিতীয়টিকে পরিচালন কর্মকান্ড থেকে উদ্ধৃত মালিকের প্রাপ্তি হিসাবে গণ্য করা
হয়।
ব্যাংকের ক্যাপিটাল
গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ বিপিআরডি সাকুর্লার অনুযায়ী মোট
ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের নূন্যতম ৯% ব্যাংকের ক্যাপিটাল থাকতে হবে এর মধ্যে আবার
নূন্যতম ৪.৫% কোর ক্যাপিটাল হতে হবে। বর্ণিত ৯% এর কম হলে ব্যাংকের প্রয়োজনীয়
ক্যাপিটাল এর ঘাটতি রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চিহিুত করা হয়। এ ক্ষেত্রে
ব্যাংকের যত বেশি মূলধন ঘাটতি থাকবে কেন্দ্রিয়
ব্যাংকের কাছে সেই ব্যাংকের মূল্যায়ন তত বেশি ঋণাতণক হবে। এর প্রভাবে
ব্যাংক নিমেণাত্তু সমস্যায় পতিত হতে পারেঃ-
ক) ব্যাংকটি প্রবলেম
ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক চিহিুত হতে পারে।
খ) ব্যাংকের কার্যত্রুম
বিশেষ করে পরিচালনা কর্মকান্ডের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ধরণের নিয়মএনমূলক
বিধি নিষেধ আরোপের সম্ভাবনা থাকে।
গ) গ্রাহকের নিকট
ব্যাংকের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে।
ঘ) ব্যাংকের ভবিষ্যৎ ঋণ বিতরণের
প্রবাহ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে প্রভাব পরে এতে ব্যাংকের ত্রুমবর্ধমান লোকসানের
সম্ভাবনা থাকে।
ঙ) সর্বোপরি গ্রাহকের
অাসহা হারানোর মাধ্যমে ব্যাংক দেউলিয়া হতে পারে।
১৪) কারেন্ট রেশিও এবং কুইক রেশিও
কারেন্ট রেশিওঃ কোন ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠানের চলতি সম্পদ ও চলতি দায়ের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশের যে অনুপাত থাকে তাকে
চলতি অনুপাত বলে। অর্থাৎ, চলতি অনুপাত=চলতি সম্পদ/চলতি দায়
এই অনুপাত প্রতিষ্ঠানের
তারল্য পরিমান করার জন্যে ব্যবহদত হয় এবং এটি তার চলতি দায় পরিশোধ করার ক্ষমতা
সম্পর্কে ধারণা দেয়। উচ্চতর চলতি অনুপাত আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করলে এটি কোম্পানী বা
প্রতিষ্ঠানের মূলধনের আধিক্যেরও একটি নির্দেশক এবং সেক্ষেত্রে তা মূলধন
ব্যবসহাপনায় দূর্বলতা প্রকাশ করে।
চলতি সম্পদের উপাদান
হিসেবে হাতে নগদ, ব্যাংক জমা, কাঁচামাল ও মজুদ পণ্য, বিবিধ দেনাদার, অগ্রিম
প্রদত্ত ব্যয় ইত্যাদিকে ধরা হয় এবং চলতি দায়সমূহের মধ্যে থাকে বিবিধ পাওনাদার,
ব্যাংক থেকে জমাতিরিত্তু বকেয়া দাবী ইত্যাদি। সাধারণত এই অনুপাতের জন্যে ২ঃ১ কে
স্ট্যান্ডার্ড মাত্রার বলে ধরা হয়।
কুইক রেশিওঃ এই অনুপাত একটি
কোম্পানীর তারল্য যাচাইয়ের জন্য ব্যবহদত হয়। এই অনুপাতটি নির্ধারণের জন্যে নিমণলিখিত
সূত্রটি প্রয়োগ করা হয়ঃ তড়িৎ অনুপাত = তড়িৎ সম্পদের পরিমান/ চলতি দায়িত্ব।
এখানে সহজলভ্য সম্পদ
বলতে চলতি সম্পদসমূহ থেকে মজুত মালামালের পরিমান বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদকে বুঝানো
হয়েছে।
এই অনুপাত চলতি অনুপাতের
চেয়ে অধিকতর সমেতাষজনকভাবে ব্যবসায়ের তারল্য প্রকাশ করে। কেননা তড়িৎ অনুপাত থেকে
ব্যবসায়ের মালামাল বিত্রিু না করেই তার চলতি দায় পরিশোধ ক্ষমতা বোঝা যায়। সাধারণতঃ
১০০% বা ১ঃ১ কে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্যে আদর্শ তড়িৎ অনুপাত হিসেবে ধরা হয়। ১০০%
এর কম হলে তরল পরিসম্পদে ঘাটতি প্রকাশ করে আবার বেশি হলে ব্যবসায় সাফল্যের চাইতে তরল পরিসম্পদের অলসভাবে পড়ে থাকাকেই বেশি
করে নির্দেশ করে।
১৫) রাইট শেয়ার এবং বোনাস শেয়ার
বোনাস শেয়ারঃ নগদে লভ্যাংশ প্রদানের
পরিবর্তে বা লভ্যাংশের পাশাপাশি মুনাফার একটি অংশ আলাদাভাবে নতুন শেয়ার হিসাবে
কোম্পানীর শেয়ার মালিকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করলে সে ধরণের শেয়ারকে বোনাস
শেয়ার বলে। এতে কোম্পানীর শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং এভাবে মূলধনীকরণের কারণে
সঞ্চিতি ও উদ্বৃত্ত হ্রাস পায়। বোনাস শেয়ার বিতরণের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শেয়ার
হোল্ডারদের মধ্যে এগুলি আনুপাতিক বন্টন। বোনাস শেয়ার ঘোষণা ও বন্টনের মাধ্যমে
কোম্পানীর ইক্যুইটি মেয়ার মূলধন বৃদ্ধি পায় এবং তা কোম্পানীর ভাল অবসহাকেই নির্দেশ
করে। বোনাস শেয়ারকে ভিন্ন নামে স্টক ডিভিডেন্ড হিসাবেও অভিহিত করা হয়।
রাইট শেয়ারঃ কোন কোম্পানী তার
পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নতুন শেয়ার বিলির সময় যদি তা সাধারণভাবে বাজারে
না ছেড়ে কোম্পানীর পুরাতন বা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিলি করে তবে এসব
শেয়ারকে রাইট শেয়ার বলে। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে বিদ্যমান শেয়ার
হোল্ডারদের এ ধরণের অগ্রাধিকার দিয়ে কোম্পানীর মালিক সংখ্যা সীমিত রাখা হয়। তবে
শেয়ার হোল্ডারদের জন্যে এ ধরণের শেয়ার ত্রুয় ঐচ্ছিক মাত্র, বাধ্যতামূলক নয়।
সাধারণতঃ রাইট শেয়ার যে মূল্যে ত্রুয়ের জন্যে ছাড়া হয় তা বাজার মূল্য অপেক্ষা অনেক
কম। একজন শেয়ার মালিক এ জাতীয় শেয়ার ত্রুয়ের অধিকার নিজে ব্যবহার করে শেয়ার কিনতে
পারে, এ অধিকার বিত্রিু করে দিতে পারে অথবা এ ব্যাপারে নিস্ক্রিয় থাকতে পারে।
১৬) প্যাকিং ত্রেুডিট ও ক্যাশ ত্রেুডিটঃ
প্যাকিং ত্রেুডিটঃ রপ্তানীকারককে পণ্য
দ্রব্যাদি বিদেশে রপ্তানী করার উদ্দেশ্যে পণ্য ত্রুয় বা পণ্য উৎপাদন ছাড়াও রপ্তানী
পণ্য প্যাকিং, পরিবহন, বীমাকরণ ইত্যাদির জন্য প্রচুর পরিমানে অর্থের প্রয়োজন হয়।যা
একজন রপ্তানীকারকের পক্ষে অনেক সময় জোগাড় করা সম্ভবপর নাও হতে পারে। এমতাবসহায়
ব্যাংক রপ্তানীকারককে বন্দরে পরিবহনের প্রমাণাদি সাপেকে।ষ (যেমন রেলওয়ে রিসিট,
স্টীমারস রিসিট) যে ঋণ প্রদান করে তাকে প্যাকিং ত্রেুডিট বলে। পরিবহণের রিসিটগুলো পণ্যের
মালিকানা স্বত্তব নির্দেশ করে বলে ব্যাংক তার দখল সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হতে
পারে।
এ জাতীয় ঋণ সাধারণতঃ
স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে তিন থেকে চার মাস সময়সীমা পর্যমত প্রদান করা হয় এবং রপ্তানী
পণ্যের শ্রেণী অনুযায়ী ৭% থেকে ১২% পর্যমত সুদে দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, গ্রাহক
ব্যাংকারের নিকট সুপরিচিত হলেই কেবল এরদপ ঋণ প্রদান করা উচিত।
ক্যাশ ত্রেুডিটঃ ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধন
অর্থায়নে ব্যাংক এক প্রকার ঋণ প্রদান করে থাকে যা সাধারণ ঋণের মতই চলতি হিসাব
খতিয়ানে পোস্টিং করা হয় তবে তাতে উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এতে করে
গ্রাহক তার প্রয়োজন মতো সীমার মধ্যে বা সীমা পর্যমত অর্থ উত্তোলন করতে পারে। এই
সীমা নির্ধারণকে ড্রইং লিমিট বলে। তবে এই হিসাবের মূল বৈশিষ্ট হলো যে গ্রাহক
যতটুকু টাকা উত্তোলন করতে পারে শুধুমাত্র ততটুকু অর্থের উপর সুদ নির্ণয় করা হয়। এ
জাতীয় ঋণকেই নগদ ঋণ বা ক্যাশ ত্রেুডিট বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, ব্যাংক যে
কোন গ্রাহককেই এই নগদ ঋণ প্রদান করে না। যাকে ব্যবসায়িকভাবে স্বচ্ছল বা নিশ্চিত
মনে হয় শুধুমাত্র তাকেই ব্যাংক এই ঋণ প্রদান করে থাকে। সাধারণতঃ এক বছরের জন্য এই
ঋণ প্রদান করা হয় তবে তা বছরামেত নবায়ন করা যায় এবং নবায়নের সময় এর সীমা ও
উত্তোলনের সীমা উভয়ই কমানো বা বাড়ানো যায়। তবে একইভাবে বা বছরের পর বছর এই ঋণ ভোগ
করা যায়। সাধারণতঃ মাল প্লেজ বা হাইপোথিকেশন ও ব্যত্তিুগত জামানত এর বিপরীতে নগদ
ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
১৭) প্রত্যাহারযোগ্য এবং অপ্রত্যাহারযোগ্য ঋণপত্রঃ
প্রত্যাহারযোগ্য
প্রত্যয়পত্রঃ ইস্যুয়িং ব্যাংক, রপ্তানীকারককে জ্ঞাত না করে যে প্রত্যয়পত্র যে কোন সময়
ব্যবহারের পূর্বে বাতিল বা সংশোধন করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে তাকে প্রত্যাহারযোগ্য
প্রত্যয়পত্র বলে। এরদপ প্রত্যয়পত্র যেহেতু রপ্তানীকারককে না জানিয়ে যে কোন সময়
সংশোধন বা বাতিল করা যায়, তাই এক্ষেত্রে ব্যাংকার এবং রপ্তানীকারকের মধ্যে কোন
প্রকার আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে না। এ ধরণের প্রত্যয়পত্র ব্যাংকে যখনই পাঠানো হয়
তখন থেকেই তা কার্যকরী হয় অর্থাৎ যদি উত্তু প্রত্যয়পত্রে অর্থ পরিশোধ করা না হয়ে
থাকে বা ব্যঅংক যদি তা পরিশোধ করার পূর্বে এ সম্পর্কে প্রেরণকারী ব্যাংকের নিকট
হতে যথাযথ নোটিশ পায় তখন থেকেই তা কার্যকরী হয়। এ জাতীয় প্রত্যয়পত্রের মূল
বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছেঃ ১) এরদপ প্রত্যয়পত্র বাতিল ঘোষণা বা সংশোধনের পূর্ব পর্যমত
যে কোন তারিখে বিনিময় বিল উপসহাপন করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাতে স্বীকৃতি প্রদান
করতে বাধ্য থাকবে। ২) বাতিল করার পর পরবর্তী পর্যায়ে এই প্রত্যয়পত্রের ভিত্তিতে
যদি কোন বিনিময় বিল প্রসতুত হয় তবে তাতে স্বীকৃতি প্রদান বা পরিশোধের জন্য
ইস্যুকারী ব্যাংক আইনতঃ বাধ্য নয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইস্যুকারী ব্যাংকের কোন দায়
দায়িত্ব থাকে না। ৩) এ ধরণের প্রত্যয়পত্র বাতিল করা যেতে পারে বিধায় রপ্তানীকারককে
অনেক সময় পণ্য প্রেরণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বহন করতে হয় বলে এর প্রচলন তেমন নেই।
অপ্রত্যাহারযোগ্য
প্রত্যয়পত্রঃ নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে গ্রহীতার অনুমতি ব্যতিত ব্যাংক যে প্রত্যয়পত্র
বাতিল বা সংশোধন করতে পারে না তাকে অপ্রত্যাহারযোগ্য প্রত্যয়পত্র বলে।
অপ্রত্যাহারযোগ্য প্রত্যয়পত্রের ক্ষেত্রে গ্রহীতা ও ব্যাংকের মধ্যে আইনগত
বাধ্যবাধকতা থাকে। এজন্য গ্রহীতার মৃত্যু হলে বা দেউলিয়া ঘোষিত হলে এই
প্রত্যয়পত্রের আওতাধীনে ব্যাংককে বিলের মর্যাদা প্রদান করতে হয়। রপ্তানীকারকের
দৃষ্টিকোন হতে একটি অপ্রত্যাহারযোগ্য প্রত্যয়পত্র হলো তার বিত্রিুত পণ্যের মূল্য
প্রাপ্তি সম্পর্কে সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা, কারণ সে জানে যে সে যদি প্রত্যয়পত্রের
শর্তসমূহ সঠিকভাবে মেনে চলে তাহলে সে অবশ্যই তার পণ্যের মূল্য পাবে।
১৮) ব্যাড ডেট প্রভিশন ও রিজার্ভঃ
ব্যাড
ডেট প্রভিশনঃ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞাত ক্ষতি বা দায় মেটানোর
জন্য সাধারণত প্রভিশন রাখা হয়। লাভক্ষতি হিসাবের খরচ দেখিয়ে এ ব্যবসহার সৃষ্টি হয়।
ভবিষ্যত দায় মেটানোর জন্য এরদপ ব্যবসহা অবশ্যই রাখতে হবে। ভবিষ্যত ব্যবসহা
শুধুমাত্র দায় বা ক্ষতি মেটানোর কাজে ব্যবহদত হয়। সাধারণতঃ প্রভিশন হতে লভ্যাংশ
বন্টন করা যায় না। একটি কোম্পানীর বছর শেষে উদ্বৃত্তপত্রে সম্পত্তি পার্শ্বে
দেনাদার হতে প্রভিশন বাদ দিয়ে দেখাতে হয়। নীতিমালা অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানে লাভ না
হলেও প্রভিশন রাখতে হয়। কোন কারণে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য
কখনই সুখকর হতে পারে না।
রিজার্ভঃ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে
অজ্ঞাত ক্ষতি বা দায় মেটানোর জন্য সঞ্চিতি সৃষ্টি করা হয়। সাধারণতঃ লাভ হতে অর্থ
সরিয়ে সঞ্চিতি সৃষ্টি করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সঞ্চিতি সৃষ্টি করা বাধ্যতামূলক
নয়। সঞ্চিতি ব্যবসায়ের কার্যকরী মূলধন বাড়ায়। দায় মেটানোর পর সঞ্চিতির উদ্বৃত্ত
সঞ্চিতি লভ্যাংশ হিসেবে বন্টন করা যেতে পারে। একটি কোম্পানীর বছর শেষে
উদ্বৃত্তপত্রে সঞ্চিতি দায় পার্শ্বে দেখানো হয়। সঞ্চিতির কোন নির্দিষ্ট পরিমান
নেই। লাভ সৃষ্টি না হলে সঞ্চিতি রাখার প্রয়োজনই আসে না।
১৯) মাইত্রেুা ত্রেুডিট ও কনজ্যুমার ত্রেুডিটঃ
মাইত্রেুা
ত্রেুডিটঃ দরিদ্র লোকদের সাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে
তথা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতিকরণের জন্য অর্থ সংসহানকারী প্রতিষ্ঠান যখন দরিদ্র লোকদের
তাদের নিজেদের প্রয়োজনে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে থাকে তখন তাকে ক্ষুদ্র
ঋণ বলে। দারিদ্রতা নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা আজ পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। পৃথিবীর
বহু দেশে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তাদের দেশ হতে দারিদ্রতা মুত্তু করেছে। ক্ষুদ্র
ঋণের গুরতত্ব অনুধাবন করে পাশ্চাত্য অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, দারিদ্র থেকে অসমেতাষ
এবং অসমেতাষ থেকে যাতে বিপ্লব সৃষ্টি না হয় তার একটি সফল পরীক্ষিত পমহা হচ্ছে
মাইত্রেুা ত্রেুডিট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান এর মতে, মাইত্রেুা ত্রেুডিট
হচ্ছে গরিবী হটানোর একটি যমএ এবং মানব পুঁজির ক্ষেত্রে একটি ভালো বিনিয়োগ।
উল্লেখ্য যে, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীর মাধ্যমে একজন বিত্তহীন ভূমিহীনের সম্পদে প্রথম
প্রবেশাধিকার ঘটে। অর্থাৎ এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশে মাইত্রেুা
ত্রেুডিট ঋণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রতত চমক সৃষ্টি করছে। এ ঋণ
সাধারণতঃ একটি গ্রতপকে দেয়া হয়। গ্রতপের কোন সদস্য খেলাপী হলে অন্যরা দায়বদ্ধ
থাকে। সপ্তাহ অমতর ঋণের টাকা আদায় করা হয় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। ব্যাংকের
কর্মকর্তাগণ এজন্য মনিটরিং করে থাকে।
কনজ্যুমার ত্রেুডিটঃ ভোগ্য পণ্য ত্রুয়ের
জন্য যেমন টেলিভিশন, ভিসিআর, ফ্রিজ, সেলাই মেশিন, মোটর সাইকেল ঋণ ইত্যাদির জন্য
ভোত্তুাদেরকে প্রদেয় ঋণকে সাধারণতঃ ভোত্তুা ঋণ বলে। ভাড়ায় বিত্রুয় ভোত্তুা ঋণের
একটি প্রধান মাধ্যম। আজকাল ভোগ্য পণ্য ত্রুয়ে অর্থ সংসহানের জন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ
নেয়া যায়। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ভোগ্য পণ্যাদির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বিশেষ
স্কীমের অধীনেও ভোত্তুা ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
২০) বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব ল্যাডিং
বিল অব ল্যাডিংঃ জাহাজী দলিল বৈদেশিক
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি অতি প্রয়োজনীয় দলিল। জাহাজে পণ্য বোঝাইয়ের পর জাহাজ
কর্তৃপক্ষ পণ্য বোঝাই বা ভাড়া চুত্তিু স্বীকার করে রপ্তানীকারককে যে রশিদ প্রদান
করে তাকে বিল অব ল্যাডিং বলে। এই দলিলে জাহাজী কোম্পানী এই মর্মে প্রতিশ্রততি
প্রদান করে যে, দলিলে লিখিত ব্যত্তিুকে এবং দলিলের শর্ত মোতাবেক মালামাল খালাস করা
হবে। আমদানীকারক এই দলিলের বলে তার আমদানীকৃত পণ্যের উপর স্বত্তবাধিকার লাভ করে।
এই দলিলের গুরতত্ব এত বেশি যে, আমদানীকারক তা দাখিল না করে কখনও বন্দর থেকে মাল
খালাস করতে পারে না। জাহাজী দলিলে মালের বিবরণ, পরিমান, মূল্য, মাল সনাত্তুকরণ
চিহু, রপ্তানীকারকের নাম, জাহাজের কোম্পানীর না, মাল বোঝাইকরণ বন্দর ও গমতব্য
বন্দরের নাম, প্রদেয় ভাড়া এবং যার নিকট মাল খালাস করা হবে তার নাম ঠিকানা ইত্যাদি
সন্নিবেশিত থাকে।
বিল অব এন্ট্রিঃ বিল অব এন্ট্রি হচ্ছে
এমন এক ধরণের আমদানী দলিল যা আমদানীকারকদের পক্ষে ক্লিয়ারিং এজেন্ট প্রসতুত করে
থাকে এবং শুল্ক প্রাধ্যক্ষের নিকট পেশ করে। এই বিলে আমদানীকৃত দ্রব্যের পূর্ণ
বিবরণ থাকে। চার প্রসেহ এটি প্রসতুত করা হয়। এটি দেখে শুল্ক বিভাগ আমদানীকারকের
আমদানীকৃত পণ্যের উপর শুল্ক ধার্য্য করে।
২১) ইনডেমনিটি ও গ্যারান্টিঃ
ইনডেমনিটিঃ
১)এক পক্ষের কোন দোষে বা
তৃতীয় কোন পক্ষের ক্ষতিপূরণ করার জন্য দ্বিতীয় পক্ষ ইনডেমনিটি চুত্তিু করে।
২) ইনডেমনিটি চুত্তিুতে
দুটি পক্ষ থাকে।
৩) ইনডেমনিটিতে
কেবলমাত্র একটি চুত্তিু হয়ে থাকে।
৪) ইনডেমনিটি চুত্তিুতে
প্রধান অঙ্গীকার দাতার উপর সমসত দেনা বর্তায় এবং সিকিউরিটির উপর কেবলমাত্র দ্বিতীয়
পক্ষের বা আনুষঙ্গিক দেনা বর্তায়।
৫) ক্ষতির পুনর্ভরণের
জন্যই ইনডেমনিটি চুত্তিু করা হয়।
গ্যারান্টিঃ
১) তৃতীয় পক্ষের কোন
ব্যত্তিুর অসমর্থনে কোন কিছু অঙ্গীকার বা কার্যের জন্য গ্যারান্টি চুত্তিু করা হয়।
২) গ্যারান্টি চুত্তিুর
তিনটি পক্ষ থাকে।
৩) গ্যারান্টি চুত্তিুতে
তিনটি পক্ষ থাকে।
৪) গ্যারান্টি
চুত্তিুতের প্রধান দেনাদারের উপর প্রধান
দেনা থাকে।
৫) পাওনাদারের নিশ্চয়তার
জন্যই গ্যারান্টি চুত্তিু গ্রহণ করা হয়।
ডেট সার্ভিস কভারেজ
রেশিওঃ
একটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ
ও স্বল্পমেয়াদী ঋণগ্রহণ ক্ষমতা যাচাই এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছলতা বিচার
করার জন্য এই অনুপাত ব্যবহার করা হয়। নিমণলিখিত সূত্র প্রয়োগ করে এ অনুপাত নির্নয়
করা যায়ঃ
ডেট সার্ভিস কভারেজ
রেশিও = কর পরবর্তী নীট মুনাফা + দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সুদ/ পরিশোধ্য ঋণের আসল +
দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সুদ। অন্য কথায় কর-উত্তর ও সুদ-পূর্ব নীট আয়কে ঋণ জনিত দায়ের
পরিমান দিয়ে ভাগ করলে এই অনুপাত পাওয়া যায়। এই অনুপাত যত বেশি হবে প্রতিষ্ঠানকে তত
স্বচ্ছল হিসেবে ধরা যায় যায় এবং তার ঋণ ধারণ ক্ষমতাও তত বেশি বলা যায়। ফলে যেসব
প্রতিষ্ঠানের জন্য এই হার অধিক সেগুলিকে নিরাপদে এবং অধিক নিশ্চয়তার সঙ্গে ঋণ
প্রদান করা যায়।
কারিগরী সম্ভাব্যতাঃ
একটি প্রকল্পের কারিগরী
সম্ভাব্যতা বিচারের সময় তা প্রকৌশল ও প্রযু¤ুত্তুগত বিবেচনায় যথার্থ কিনা তা
পরীক্ষা করা হয়। এখানে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ধরণ ও পরিমান, উৎপাদনের বিভিন্ন
প্রত্রিুয়া, উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল, যমএপাতি ইত্যাদি এবং ভৌত সুবিধাদি, ভবনাদি ও
তদভ্যমতরে যমএসরঞ্জামাদি বিন্যাস, আমদানীকৃত কাঁচামাল ও যমএপাতির সঙ্গে সহানীয়
প্রযুত্তিু ও কর্মীদক্ষতার সমন্বয় ইত্যাদি পর্যালোচনা প্রধান বিষয়। কারিগরী
সম্ভাব্যতা যাচাই এর সময় মোট উৎপাদন ক্ষমতা এবং তার সম্ভাব্য ব্যবহারের মাত্রা এবং
বিদ্যুৎ, জ্বালানী, পানি, গ্যাস ইত্যাদি সরবরাহের নিশ্চয়তা, কাঁচামাল ও উৎপাদিত
পণ্য সামগ্রী পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা, উৎপাদিত উপজাত দ্রব্যাদি এসবও বিবেচন্য বিষয়।
মোট কথা কারিগরী সম্ভাব্যতা পরীক্ষা অর্থ হচ্ছে প্রকল্পটি প্রযুত্তিুগত ও কারিগরী
দিক থেকে সহানীয় পরিবেশে যতদূর যথাযথ ও উপযোগী, বাসতবায়নযোগ্য এবং লাভজনক তা যাচাই
করে দেখা।
বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকি
ব্যবসহাপনাঃ
ঝুঁকি হলো আর্থিক ক্ষতি
সংত্রুামত অনিশ্চয়তা। অপরদিকে ব্যবসহাপনা হলো এমন একটি সাফল্য প্রত্রিুয়া যার
মাধ্যমে কোন উদ্যোগকে সফল করা অথবা কোন উদ্দেশ্যকে অর্জন বা বাসতবায়ন তথা কোন
কার্যত্রুমকে সুসম্পন্ন করা বুঝায়। সুতরাং যে প্রত্রিুয়ার মাধ্যমে ক) ঝুঁকি
চিহিুতকরণ খ) ঝুঁকি তথা ক্ষতির পরিমান নিরদপন গ) ঝুঁকি মোকাবেলা করার সর্বাধিক
কার্যকর ও উপযোগী পমহা নির্বাচন করা যায় তাকে ঝুঁকি ব্যবসহাপনা বলে। ব্যবসায়ে বা
বিনিয়োগকৃত প্রকল্পে সাধারণতঃ নিমণলিখিত ঝুঁকিসমূহ দেখা যায়ঃ ক) অর্থনৈতিক ঝুঁকি
খ) প্রযুত্তিুগত ঝুঁকি গ) প্রতিযোগিতার ঝুঁকি ঘ) রাজনৈতিক ঝুঁকি ঙ) মুদ্রাস্ফীতি
জনিত ঝুঁকি চ) ভোত্তুার অধিকারজনিত ঝুঁকি ছ) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অভ্যমতরীণ উপাদান
সম্পর্কিত ঝুঁকি জ) প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত ঝুঁকি ইত্যাদি।
ঋণ অবলোপনঃ
সহজ অর্থে অবলোপন হচ্ছে
প্রদানকৃত ঋণের একটি অংশ গুণগত মান হ্রাস পেয়ে যখন আদায়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তখন
হিসাবের খাত অনাবশ্যকভাবে স্ফীত না করে এর বিপরীতে পর্যাপ্ত সংসহান করে ঋণ হিসাবটি
সিহতিপত্র থেকে বাদ দেয়ার নিয়মকে ঋণ অবলোপন বলে। ঋণ অবলোপন আমতর্জাতিকভাবে স্বীকৃত
ও প্রচলিত একটি পদ্ধতি। ঋণ অবলোপন অর্থ ঋণের দায় হতে ঋণ গ্রহীতাকে মুত্তিু দেয়া
বুঝায় না। বরং বলা যেতে পারে ব্যালান্স শীট এর আকার অনাবশ্যক ও কৃত্রিমভাবে স্ফীত
না করে এর বিপরীতে সংসহানের ব্যবসহা করে ব্যালান্স শীট থেকে একে মুত্তিু দেয়াকে
বুঝায়। অবলোপনের পরও সংশ্লিষ্ট ঋণের উপর ব্যাংকের দাবী বহাল রাখার লক্ষ্যে ২০০১
সালে ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ধারা ২৮ তে নতুন ভাবে সন্নিবেশিত করে আদায় বিষয়ক
সম্ভাব্য আইনগত জটিলতা নিরসন করা হয়েছে।
০১। ঋণ ঝুকি বিশ্লেষণ (Landing Risk Analysis)
x-
ঋণ প্রদানের পূর্বে ঋণের
অর্থ ফেরত পাবার ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা কতটুকু আছে তা বিভিন্ন প্রকার ঝুঁকি বিশ্লেষণের
~~বজ্ঞানিক ও তথ্যগত পদ্ধতিকে ঋণ ঝুঁকি
বলে । ঋণ ঝুঁকি বিশ্লেষণে ব্যবসহাপনা জানতে পারে।
-
ঝুঁকির মাত্রা কতটুকু জড়িত আছে
-
ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক অর্থ ফেরত পাবার সম্ভাবনা কতটুকু
-
ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া সাপেক্ষে কতটুকু ঋণ মঞ্জুর করা যাবে।
-
ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক অর্থ ফেরত পাবার নিশ্চয়তা আছে কিনা বর্ণিত অবসহায়
প্রেক্ষিতে তা জানা যায়।
-
কছঅ মূলত অর্থ প্রাপ্তির সম্পর্ক নিয়েই বিশ্লেষণ করে এবং মূলত ১ কোটি টাকার ঋণের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার
গ্রহণযোগ্য। প্রোজেক্ট নিয়ে এটি তেমন একটি বিশ্লেষণ করে না। এই জন্য কছঅ বিশ্লেষণে
নিমেণাত্তু ক্ষেত্রকে ইতিবাচক হিসাবে চিহিুত করা হয়।
(a) Project
stay & Money comes = i.e. Project is viable
(b) Project
not stay but money comes = i.e. Project is viable
(c) Project stay but money not return = i.e.
Project is not viable
০২। রেজিষ্টার্ড মর্টগেজ বা আইনগত বন্ধক ঃ-
রেজিষ্টার্ড মর্টগেজ বা আইনগত বন্ধক হলো
সে বন্ধক যেখানে ঋণগ্রহীতার জামানতের সহায়ী সম্পত্তির দলিল পত্রাদি রেজিষ্ট্রি করে
ব্যাংকের নিকট প্রদান করা হয়। আইনগত বন্ধকের ক্ষেত্রে যেহেতু সম্পত্তির মালিক
ব্যাংক তাই এক্ষেত্রে সম্পত্তি বিত্রিুসহ সবরকম ক্ষমতরা ব্যাংকের অনুকূলে থাকে বলে
ব্যাংক ঋণ প্র¡াপ্তর শেষ প্রচেষ্টা
হিসাবে বন্ধকীকৃত সম্পত্তির বিবরণ পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিত্রিু করে
ঋণের অর্থ আদায় করতে পারে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ব্যাংককে কোর্টের ঝামেলা সহ দীর্ঘ
দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কাজেই ব্যাংকের স্বার্থ চিমতা করলে এবং ব্যাংকের
ঋণ অাদায়কে নিশ্চিত করতে হলে রেজিষ্টি মর্টগেজ বা আইনগত বন্ধক অধিকতর শ্রেয়।
০৩। বিল অব লেডিং ঃ-
জাহাজী দলিল ~~বদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি অতি প্রয়োজনীয় দলিল। জাহাজে
পন্য বোঝাইয়ের পর জাহাজ কর্তৃপক্ষ পণ্য বোঝাই বা ভাড়া চুত্তিু স্বীকার করে
রপ্তানিকারককে যে রশিদ প্রদান করে তাকে বিল অব লেডিং বলে। এই দলিলে জাহাজী
কোম্পানী এই মর্মে প্রতিশ্রততি প্রদান করে যে, দলিলে লিখিত ব্যত্তিুকে এবং দলিলের
শর্তাদি মোতাবেক মালামাল খালাস করা হবে। আমদানিকারক এই দলিলের বলে তার আমদানিকৃত
পণ্যের উপর স্বত্বাধিকার লাভ করে। এই দলিলের গুরতত্ব এত অধিক যে, আমদানিকারক তা
দাখিল না করে কখনও বন্দর থেকে মাল খালাস করতে পারে না। জাহাজী দলিলে মালের বিবরণ,
জাহাজের কোম্পানীর নাম, মাল বোঝাইকরণ বন্দর ও গমতব্য বন্দরের নাম, প্রদেয় ভাড়া এবং
যার নিকট মাল খালাস করা হবে তার নাম ঠিকানা ইত্যাদি সন্নিবেশিত থাকে।
০৪। ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন (আভ্যমতরীণ
উপার্জন হার) ঃ-
একটি প্রকল্পের প্রকৃত উপার্জন হার বাহির
করিতে হইলে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। যে বাট্রার হার প্রয়োগ করিলে প্রকল্পের
আভ্যমতরীণ নগদ প্রবাহের বর্তমান মূল্য এবং প্রকল্পের নগদ বহিঃপ্রবাহের সমান হইবে
সেই হারকে প্রকল্পের আভ্যমতরীণ উপার্জন হার বা ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন বলা হয়।
এই বাট্রার হার দ্বারা প্রকল্পের নীট বর্তমান মূল্য শূন্য হইবে। আভ্যমতরীন উপার্জন
হার বাহির করা বিশেষ কষ্টকর। বারবার বিভিন্ন হার প্রয়োগ করিয়া অনুশীলনের মাধ্যমে
আভ্যমতরীন উপার্জন হার বাহির করার চেষ্টা করা হয়। Trial and Error পদ্ধতির মাধ্যমে এই
প্রত্রিুয়া চলিতে থাকে। আভ্যমতরীণ উপার্জন হারকে অনেক ক্ষেত্রে সময় সমন্বিত হারও (Time
adjusted rate of return) বা বাট্রাকৃত হার (Discounted rate
of return) বলা
হয়ে থাকে।
০৫। Bill of Exchange (বিনিময় বিল)ঃ-
সাধারণ অর্থে বিনিময় বিল হচ্ছে নির্দিষ্ট
তারিখে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদানের জন্য একজন কর্তৃক আরেকজনের উপর একটি লিখিত
শর্তহীন আদেশ।
১৮৮২ সালের ইংল্যান্ডের বিনিময় বিল আইনের
৩(১) ধারানুযায়ী বিনিময় বিল হচ্ছে প্রসওুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত
শর্তহীন আদেশপত্র যাতে কোন নির্দিষ্ট ব্যত্তিুকে বা তার প্রতিনিধিকে নির্দিষ্ট
তারিখে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ উল্লিখিত সংজ্ঞাটি বিশেণষন করলে দেখা
যায় যে, বিনিময় বিলে টাকার পরিমাণ, টাকা পরিশোধের সময়, তারিখ ও সহান লিপিবদ্ধ থাকে
এবং এতে তিনটি পক্ষ যথা Drawer, Drawee এবং প্রাপক থাকে ।
০৬। ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট ঃ-
যে বিবরণীর মাধ্যমে বিভিন্ন উৎস থেকে নগদ
অর্থের প্রাপ্তি ও বিভিন্ন খাতে ব্যবহার দেখানো হয় তাকে নগদ প্রবাহ বিবরণী বা
ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট বলা হয়। নগদ অর্থের চলাচল প্রধানতঃ তিনটি ক্ষেত্রে বিভত্তু
- ১) অপারেশনাল কার্যকলাপ-এর অধীনে সকল ধরণের অপারেশনাল কার্যাবলী সংত্রুামত নগদ
অর্থের চলাচল প্রদর্শিত হয়। ২) বিনিয়োগ কার্যকলাপ- বিনিয়োগ খাতে অর্থের চলাচল এর
অধীনে লিপিবদ্ধ করা হয় ৩) অর্থ সংসহানকারী কার্যকলাপ- প্রতিষ্ঠানের অর্থ
সংসহানকারী উৎসগুলোতে অর্থের যে চলাচল হয় তা এর অধীনে লিপিবদ্ধ হয়। সুতরাং যে
বিবরণী অধীনে উত্তু তিন ধরণের কার্যকলাপ পরিচালনায় অর্থের যে চলাচল হয় তা
শ্রেণীবিভত্তু করে উপসহাপন করাকে নগদ প্রবাহ বিবরণী বলে।
নগদ প্রবাহের ব্যবহারঃ
নগদ অর্থ হচ্ছে সবচেয়ে তরল সম্পদ এবং কারবারের জীবনীশত্তিু। এর চলাচল সম্পর্কে
স্বচ্ছ ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। নগদ অর্থের অনিয়মিএত ব্যবহার প্রতিষ্ঠানের জন্য
ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। সুতরাং নগদ অর্থের গতিবিধি এবং ব্যবহার পরিকল্পিত উপায়ে
পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নদ অর্থ বিবরণীর মাধ্যমে নগদ অর্থের চলাচল সম্পর্কে
স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায় এবং এর কোন ত্রতটি বিচ্যুতি দেখা দিলে সহজেই জ্ঞাত হওয়া
যায় অর্থাৎ ভয়াবহ পরিসিহতির মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই নিয়মএনে আনার জন্য প্রচেষ্টা
গ্রহণ করা যায়। কারবারের তারল্যতা বজায় রাখা, নগদ অর্থের অবসহা ও এর প্রয়োজনীয়তা
সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ও পরিকল্পিত নিয়মএনের জন্য পূর্ব জ্ঞান অর্জন করার মানসে
তহবিল প্রবাহ বিবরণী ব্যবহার করা হয়।
০৭। ব্রেক-ইভেন পয়েন্ট (সমচ্ছেদ বিন্দু)ঃ-
কোন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের যে পরিমান তা সমুদয়
বিত্রিু হলে কোন লাভ বা লোকসান হয় না তাকে প্রতিষ্ঠানের না-লাভ-না লোকসান বিন্দু
বলে। লেখ~~চত্রিক (graphical)
অর্থে
যদি উৎপাদন ব্যয় রেখা এবং বিত্রুয়লব্দ আয় রেখা অংকন করা হয় তবে যে বিন্দুতে
রেখাদ্বয় পরস্পরকে ছেদ করে সেটিই না লাভ-না লোকসান বিন্দু। এই বিন্দুতে উৎপাদন বা
বিত্রুয়ের পরিমানকে উৎপাদন বা বিত্রুয়ের না লাভ-না লোকসান বলে। এই পরিমাণ
নির্ধারনের জন্য নিমণলিখিত সূত্রটি ব্যবহার করা হয়ঃ-
|
|
F
|
|
|
|
B E P
|
=
|
--------------
|
|
যেখানে BEP না লাভ-না
লোকসান পরিমান
V = পণ্যের একক
প্রতি পরিবর্তনশীল ব্যয়
P = একক প্রতি
বাজার ব্যয়
|
|
|
1
|
-
|
V
|
|
|
|
P
|
|
|
V = মোট সিহর ব্যয়
|
একটি কোনপানীর উৎপাদন ও
বিত্রুয় পরিকল্পনা এবং তদনুযায়ী ব্যবসহাপনা সম্পর্কে আগে থেকেই সঠিক ও কার্যকর
সিদ্ধামত গ্রহণের জন্যে না লাভ-না লোকসান বিন্দু নির্ধারন খুবই গুরতত্বপূর্ণ।
কোম্পানীর মূল লক্ষ্য মুনাফা সর্বোচ্চকরণ হলেও অমততঃ ন্যূনতম কি পরিমাণ উৎপাদন
করলে কোম্পানীর ব্যয় উঠে আসবে সেটিও জানা দরকার। আবার কোম্পানী সম্প্রসারনের সময়
তার উৎপাদনও ন্যূনতম কতখানি বাড়াতে হবে সেটিও হিসাব করে নিতে হয়। বাজেট নিয়মএণ,
মুনাফা পরিকল্পনা, উৎপাদন, পদ্ধতি নির্ধারণ, বিপননে কৌশল ইত্যাদির জন্যে এ পরিমান
নির্ধারন করা প্রয়োজন।
০৮। মূলধন বাজেটিং (ইতসভঢ়তর আয়ধফনঢ়ভশফ)ঃ-
মূলধন জাতীয় বিনিয়োগ
অর্থাৎ যেসব বিনিয়োগ থেকে দীর্ঘমেয়াদে আয় অর্জন হয়ে থাকে তার জন্য ব্যয় পরিকল্পনার
প্রকিয়াকে মূলধন বাজেটকরণ বলে। এটি একটি কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী
বিনিয়োগের সিদ্ধামত গ্রহণ প্রত্রিুয়ার অন্যতম গুরতত্বপূর্ণ অঙ্গ। কেউ কেউ
দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্যে কোম্পানীর দীর্ঘমেয়াদী তহবিল বরাদ্দকরনের মূলধন
বাজেটকরণ নামে অভিহিত করনে। মূলধন বাজেটকরনকে বিনিয়োগ সিদ্ধামত গ্রহনও (ঐশৎনড়ঢ়লনশঢ়
ধনদভড়ভষশ লতযভশফ) বলা হয়। কোম্পানীর সম্প্রসারনের সঙ্গে জড়িত চলতি মূলধনের সহায়ী
বৃদিধ বা জমি, ভবন ও যমএপাতি ত্রুয়ে ব্যয় বরাদ্দ ও মূলধন বাজেটকরনের আওতায় পড়ে।
মূলধন বাজেটকরণের
বিভিন্ন দিকসমূহ হচ্ছেঃ-
১। বিনিয়োগ প্রসতাব প্রনয়ন করা,
২। প্রসতাবিত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তহবিলের
অমতঃপ্রবাহ ও বহিপ্রবাদ করা,
৩। তহবিল প্রবাহ বিশেণষণের মাধ্যমে প্রকল্প
নির্বাচন করা,
৪। বিনিয়োগ সিদ্ধামত গ্রহনের প্রকল্প বাসতবায়ন
সম্পূর্ণ হওয়া পর্যমত অবিরাম, বিনিয়োগ
যোগ্যতা বিচারে প্রকল্পে মূল্যায়ন অব্যাহত
রাখা।
০৯। কনজিউমার ঋণঃ-
ভোগ্য পন্য ত্রুয়ের জন্য যেমন টেলিভিশন,
কম্পিউটার, ডিভিডি, ফ্রিজ, সেলাই মেশিন, মোটর সাইকেল ইত্যাদির জন্য ভোত্তুাদেরকে
প্রদেয় ঋণকে সাধারণতঃ ভোত্তুা ঋণ বলে। ভাড়ায় বিত্রুয় ভোত্তুা ঋণের একটি প্রধান
মাধ্যম। আজকাল ভোগ্য পণ্য ত্রুয়ে অর্থ সংসহানের জন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নেয়া যায়। দীর্ঘমেয়াদী
ব্যবহারের ভোগ্য পণ্যাদির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বিশেষ স্কীমের অধীনেও ভোত্তুা
ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
১০। আর্থিক সম্ভাব্যতা ঃ-
কোন প্রকল্পের আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাই-এর
মূল লক্ষ্য হচ্ছে (১) প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ
করা, (২) প্রকল্পটি উৎপাদনে যাবার পর তা থেকে প্রাপ্ত আয়ের হিসাব করা এবং (৩)
প্রকল্পটির পুরো মেয়াদের আয়-ব্যয়ের তুলনা করে তার মুনাফা যোগ্যতা নির্ধারণ করা।
আর্থিক সম্ভাব্যতা পরীক্ষাকালে প্রকল্পের তহবিল প্রবাহ বিবরণী এবং উদ্ধৃত্তপত্রকে
ভালভাবে বিশেণষণ করতে হয় এবং এখান থেকে বিভিন্ন আর্থিক অনুপাত যেমন-ঋণ সমমূলধন
অনুপাত, ঋণ-নিরাপত্তার বিভিন্ন অনুপাত, তারল্য অনুপাত, ঋণ কৃত্যক আবরণ অনুপাত,
সিহরীকৃত আয় ও অসিহরীকৃত আয়ের ঋণ পত্রাদির মূল্যের অনুপাত, ব্যবসহাপনাগত দক্ষতা
অনুপাত, মুনাফা-ক্ষমতা অনুপাত ইত্যাদি জানা যায়।
অার্থিক সম্ভাব্যতা পরীক্ষায় আরও যেসব
গুরতত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয় সেগুলি হচ্ছে প্রকল্পের না-লাভ না-লোকসান
বিশেণষণ, অভ্যমতরীণ আয় হার এবং প্রকল্পের সেনসিটিভিটির মাত্রাসমূহ।
১০। প্যারিপাসু চার্জ ঃ-
প্যারিপাসু শব্দটি ল্যাটিন শব্দ থেকে আগত
যার অর্থ সমান পদক্ষেপ। অর্থাৎ যখন একটি বিষয় অন্য একটি বিষয়ের সাথে সমানভাবে
অগ্রসর হয় তখন একে প্যারিপাসু হিসেবে অগ্রসর হচ্ছে বলে অভিহীত করা হয়। সাধারণতঃ
কোম্পানীর ডিবেঞ্চার ইস্যু করার সময় একথাটি ব্যবহদত হয়ে থাকে। এর অর্থ কোন
নির্দিষ্ট সিরিজের ডিবেঞ্চার সমূহ একই হারে প্রদান করতে হয়।
১১। কনটিনজেন্ট লায়াবিলিটি ঃ-
সম্ভাব্য
দায় কোন দায়ই নহে। যে দায় কখনো সৃষ্ট হয়নি অথচ দায় সৃষ্টি হলেও হতে পারে তাহাকে
সম্ভাব্য দায় বলে। যেমন কোন ক্ষতিপূরণ মামলা যদি আদালতে থাকে তবে আদালত যদি
কোম্পানীর বিপক্ষে রায় দেন তাহলে কোম্পানীকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে অন্যথায়
নহে। তাই এ ধরনের পেন্ডিং কেসের জন্যে কোন দায় সৃষ্টি হয় না বা লেনদেন হয় না বলে
তা হিসাবে অমতর্ভূত্তু করা হয় না। শুধুমাত্র শেয়ার হোল্ডার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট
ব্যত্তিুদের জ্ঞাতার্থে এ সম্ভাব্য দায় ব্যালেন্স সীটের দায় পার্শ্বের একেবারে
নীচের দিকে ভিতরের কলামে উল্লেখ করা হয়। রাষ্ট্রের অধীনে বিল, সীমাবদ্ধ কোম্পানীর
আদায়যোগ্য শেয়ার ইত্যাদি। এছাড়াও ব্যাংকের বিপরীতে গ্রাহকের দাবী-যাহা ঋণ হিসাবে
স্বীকার করা হয় নাই, পরিচালক বা ব্যাংকের পক্ষে প্রদত্ত গ্যারান্টি, বিনিময় চুত্তিুর
দায় ইত্যাদি সম্ভাব্য দায় বিশেষ।
১২। সিহতিপত্র (আতরতশদন জবননঢ়) ঃ-
উর্দ্বতপত্র হচ্ছে কোন কোম্পানী বা ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানের সমসত দায়-দেনা ও সম্পদের খাতওয়ারি খতিয়ান প্রকাশের একটি সংক্ষিপ্ত
হিসাব। এর একদিকে দায়-দেনা এবং অপরদিকে সম্পদের বিবরণ থাকে এবং পরিমাণগতভাবে উভয়
পার্শ্বকে সমান হিসাব দেখানো হয়। কোন প্রতিষ্যানের আর্থিক অবসহা বোঝার জন্যে
উর্দ্বতপত্র খুবই উপযোগী। এখানে প্রতিষ্ঠানের মূলধন ও তার উৎসভিত্তিক গঠন, মূলধনের
খাতওয়ারি বিনিয়োগ, বিভিনণ সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণ, পরিচালনগত খরচ ও লাভ-লোকসান, নগদ
অর্থের হিসাব, রিজার্ভ ও মজুত মালামালের পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট
চিত্র দেয়া হয়। উদ্বর্তপত্র কোন একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিষ্ঠানের দায় ও সম্পদ প্রকাশ করে এবং সুনির্দিষ্ট সময় (সাধারণত এক
বছর) পর পর ~~তরী করা হয়।
১৩। দেউলিয়া আদালত ঃ-
দেউলিয়া আইনে দেউলিয়ার কোন সংজ্ঞা দেয়া
হয়নি। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী দেউলিয়া বলতে এমন একজন ঋণগ্রসত ব্যত্তিুকে বুঝায় যিনি
ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। এক্ষেত্রে ঋণগ্রসত ব্যত্তিুর ঋণ প্রদানের অক্ষমতা হেতু
পাওনাদার তাহার পাওনা ত্বরান্বিত করার জন্য বা ঋণগুসত ব্যতিক নিজের নিরাপত্তা বা
স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হতে রক্ষার জন্য দেউলিয়া ঘোষণা করার নিমিত্তে দেউলিয়া
আদালতে মামলা পেশ করতে পারেন। তখন উত্তু মামলা দেউলিয়া আইনের অধীনে নিস্পত্তি করা
হয়। দেউলিয়া ঘোষিত ব্যত্তিু সমাজের বিভিন্ন অধিকার যেমন-কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা
ভোটধিকার, সরকারী চাকুরী, ব্যাংক ঋণ গ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। উল্লেখ্য যে,
কোর্ট কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষণাদেশ প্রদত্ত হলে দেউলিয়া ঘোষিত ব্যত্তিুর নূন্যতম
প্রয়োজনীয় সম্পত্তি বাদে তাহার সকল সম্পত্তি কোর্ট কর্তৃক মনোনীত রিসিভারের উপর
ন্যসত হয়। রিসিভার পাওনাদারদের মধ্যে বন্টন করে।
বাংলাদেশ ১৯২০ সালে প্রযোজ্য দেউলিয়া আইন
পুনঃসংশোধন করে ১৯৯৭-এর ১১ই মার্চ তারিখে জারি করা হয়। ঋণ খেলাপীদের বিরতদ্ধে
আইনগত ব্যবসহা গ্রহণের জন্যেই মূলতঃ আইনটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনের মূল ~~বশিষ্ট হচ্ছে নূন্যতম পাঁচ লক্ষ টাকার উপরে
পাওনার ক্ষেত্রে এই আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। এই আদালতে দেওয়ানী কার্যবিধির
১১-এর বিধান ব্যতির অন্য কোন বিধান আদালতের কোন কার্যধারার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে
না এবং দেউলিয়া আপীল করা হলে ৬০ দিনের মধ্যে উহার নিস্পত্তি করা হবে।
১৪। মাইত্রেুা ত্রেুডিটঃ-
দরিদ্র লোকদের সাবলম্বী করে গড়ে তোলার তথা
অর্থনেতিকভাবে উন্নতিকরণের জন্য অর্থ সংসহানকারী প্রতিষ্ঠান যখন দরিদ্র লোকদেরকে
তাদের নিজেদের প্রয়োজনে যে ক্ষূদ্র ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে থাকে তখন তাকে মাইত্রেুা
ত্রেুডিট বা ক্ষুদ্র ঋণ বলে। দারিদ্রতা নিরসনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা আজ
পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। পৃথিবীর বহু দেশ ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তাদের দেশ হতে
দারিদ্রতা মুত্তু করেছে। ক্ষুদ্র ঋণের গুরতত্ব অনুধাবন করে পাশ্চাত্য
অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, ""দারিদ্র্য
থেকে অসমেতাষ এবং অসমেতাষ থেকে যাতে বিপ্লব সৃষ্টি না হয় তার একটি সফল পরীক্ষিত
পমহা হচ্ছে মাইত্রেুা ত্রেুডিট''। জাতিসংগের মহাসচিব কফি আনান এর মতে, ""মাইত্রেুা ত্রেুডিট হচ্ছে গরিবী
হটানোর একটি যমএ এবং মানব পুঁজির ক্ষেত্রে একটি ভালো বিনিয়োগ''। উল্লেখ্য যে,
ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীর মাধ্যমে একজন বিত্তহীন ভূমিহীনের সম্পদে প্রথম প্রবেশাধিকারটি
ঘটে। অর্থাৎ দারিদ্রের দুষ্টঅত্রু ভেঙ্গে ফেলতে ক্ষুদ্র ঋণ তাকে প্রাথমিক সাহসটি
যোগায়। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশই মাইত্রেুা ত্রেুডিট ঋণের
মাধ্যমে আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রতত চমক সৃষ্টি করেছে।
১৫। ব্রিজ লোন (আক্ষভধফন ঊভশতশদন)ঃ-
মূলমন বাজারে সকল কোম্পানীর সমান আধিপত্য
থাকে না। প্রতিষ্ঠিত কিছু কিছু কোম্পানীর শেয়ার বাজারে ব্যাপক সংখ্যক ত্রেুতা ও
বিত্রেুতাকে আকৃষ্ট করে রাখে। অর্থাৎ বড় বড় ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীগুলোর সাথে
প্রতিযোগিতা করে ছোট ছোট ও নতুন কোম্পানীগুলো শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ার বিত্রিু
করতে গিয়ে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। এমনকি নতুন শেয়ার ইস্যু করতে গিয়ে শেয়ারের
ত্রেুতাদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে তাদেরকে শেয়ারের অবমূল্যায়নও করতে হয়ে। এ সকল
কোম্পানীর শেয়ার ও সিকিউরিটি বাজারজাতকরণের এ সমস্যা দূরীকরণের বিভিন্ন আর্থিক
প্রতিষ্ঠান মধ্যসহতার ভূমিকা পালন করে।
যে প্রত্রিুয়ার মাধ্যমে একটি অর্থলগ্ণী
প্রতিষ্ঠান শেয়ারের ত্রেুতা ও ইস্যুকারী কোম্পানীর মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে
ইস্যুকারী কোম্পানীর কাছ থেকে শেয়ার ও সিকিউরিটি শেয়ারের ত্রেুতাদের কাছে মূলধন
সংগ্রহ করে শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানীর কাছে পৌঁছে দেয় তাকে ব্রিজ ফাইন্যান্স বলে।
এই প্রত্রিুয়ায় শেয়ারের ত্রেুতা ও ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি সংযোগ থাকে
না। মধ্যসহতাকারী প্রতিষ্ঠান ইস্যুকারী কোম্পানীর কাছে নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ার বা
সিকিউরিটি ত্রুয় করে নেয় এবং এগলি নিজস্ব পোর্টফলিও অনুযায়ী সম্ভাব্য ত্রেুতাদের
কাছ থেকে বিত্রিু করে দেয়। এভাবে ব্রিজ ফাইন্যান্স উদ্যোত্তুাদের ইকুইটির অংশ
মেটাতে তাদের সাময়িক অসুবিধা দূরীকরণের একটি গুরতত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে কাজ করে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সংসহা (ঐইআ) সেতু অর্থায়ন করছে।
১৬। চলতি মূলধন (ঠষক্ষযভশফ ইতসভঢ়তর)ঃ-
চলতি বা কার্যকরী মূলধন বলতে বিনিয়োগের বা
কারবারের সেই অংশকে বুঝায় বা ব্যবসায়ের ~~দনন্দিন
কার্যাবলী পরিচালনায় প্রয়োগ করা হয়। অর্থাৎ কোন প্রকল্প সহাপন করার পর তা পরিচালন
করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেটাই চলতি মূলধন। কারবারের ~~দনন্দিন কার্যপরিচালনা, উৎপাদন পরিচালনা এবং উৎপাদিত পণ্য
বিত্রিুর জন্য যে মূলধন ব্যয় করা হয় তা চলতি মূলধনেরই অংশ। অন্যভাবে বলা যায় কোন
প্রকল্পের জন্য যে সকল চলতি সম্পদের প্রয়োজন হয় তাহাই চলতি মূলধন। কাঁচামাল ত্রুয়
ও সেগুলি থেকে পণ্য উৎপাদন, মজুত গঠন, পণ্য বাজারজাতকরণের আনুষঙ্গিক ব্যয়সমূহ বহন
এবং ~~দনন্দিন লেনদেন সমূহ মেটানোর
তহবিল যোগানের উদ্দেশ্যে সাধারণত এক বছরের কম মেয়াদী সকল সম্পদের সমষ্টিকে চলতি
মূলধন বলে। চলতি মূলধন কারবারের তারল্য বা স্বল্পমেয়াদী স্বচ্ছলতা বজায় রাখে। চলতি
মূলধন কারবারের মধ্যে পুনঃ পুনঃ রদপামতরিত হয়ে
থাকে। এ জন্য একে পরিবর্তনশীল মূলধনও বলে। চলতি মূলধনের জন্য ব্যাংক যে ঋণ প্রদান
করে তাকে চলতি মূলধন বলে।
১৭। সি,আই,বি (CIB) x-
কোন প্রকল্পে বড় ধরনের অর্থায়নের ক্ষেত্রে
ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান তার ঋণের ঝুঁকি বিশেণষনকল্পে উদ্যোত্তুার কার্যকলাপ সামাজিক
অবসহান ও আর্থিক স্বচ্ছলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়। ঋণ ঝুঁকি আচ্ছাদনের
উদ্দেশ্যে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার উর্দ্ধে প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি
থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান / ব্যাংক সমূহ উদ্যোত্তুার সম্পর্কে তথ্য অর্থাৎ
উদ্যোত্তুা ঋণ খেলাপী কিনা তার বিরতদ্ধে মামলা আছে কি-না ইত্যাদি গ্রহণ করা
বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক উদ্যোত্তুার সম্পর্কে রিপোর্ট পেতে হলে তার
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে যথাযথ প্রকিয়ায় উদ্যোত্তুার নাম-ঠিকানাসহ বাংলাদেশ
ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ সহাপন করতে হয়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি-তে
বৃহৎ ঋণ গ্রহণকারীর রিপোর্ট / তথ্য সংরক্ষিত থাকে। উল্লিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে
উদ্যোত্তুার আর্থিক স্বচ্ছলতা, ঋণ সম্পর্কিত কার্যকলাপ ও উদ্যোত্তুার আচরণ বিধি
সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে ঋণ প্রদানকারী সংসহা প্রকল্প অর্থায়নের লক্ষ্যে উদ্যোত্তুা
সম্পর্কে ত্রেুডিট রিপোর্ট প্রণয়ন করে থাকে।
১৮। ঋণপত্র (Letter of Credit)x-
আমতর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক
দেশের ব্যবসায়ী অপর দেশের ব্যবসায়ীর নিকট তার রপ্তানীকৃত পণ্য মূল্য প্রাপ্তি
সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে প্রত্যয়পত্রের প্রচলন করেছে। প্রত্যয়পত্রের
মাধ্যমে আমদানিকারকের দেশের কোন ব্যাংক আমদানিকারকের পক্ষে বিদেশের রপ্তানিকারককে
এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, আমদানিকারক পণ্য মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে বা
পরিশোধ করতে অস্বীকার করলে উত্তু ব্যাংক আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য রপ্তানিকারককে
পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। ব্যাংকের এই প্রতিশ্রততির উপর ভিত্তি করেই রপ্তানিকারক
আমদানিকারকের অনুকূলে পণ্য প্রেরণ করে থাকে। প্রত্যয়পত্রে ব্যবসার ধরন, টাকার
পরিমাণ, সময় ও বিভিন্ন প্রকার দলিলের নাম উল্লেখ থাকে। উল্লেখ্য যে, প্রত্যয়ন
পত্রে বর্ণিত শর্তাদি পূরণ সাপেক্ষে যে সমসত দলিল পত্রাদি রপ্তানিকারক কর্তৃক
আমদানিকারকের ব্যাংকে উপসহাপন করতে হয় তার মধ্যে (ক) বিনিময় বিল (খ) জাহাজী দলিল
বা এয়ার বিল (গ) বাণিজ্যিক চালান (ঘ)
প্রভব লেখ ও (ঙ) বীমা পলিসি ।
প্রত্যয় পত্রের গুরতত্ব বিশ্লেষণ করলে দেখা
যায় যে, এটি আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যে সেতু বন্ধন সৃষ্টি করতে সাহায্য
করে। কেননা রপ্তানিকারকও প্রত্যয় পত্রের মাধ্যমে তাহার পণ্য মূল্য প্রাপ্তি
সম্পর্কে যেমন নিশ্চিত হতে পারে, তেমনি আমদানিকরাকও পত্রের বিপরীতে ব্যাংক হতে ঋণ
সুবিধাসহ পণ্য প্রাপ্তির পর রপ্তানিকারকের পণ্য মূল্য (ব্যাংক) পরিশোধ করতে পারে। এদিক
থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, আমতর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যে আমদানিকারক ও
রপ্তানিকারকের নিকট বাণিজ্যিক প্রত্যয়পত্রের গুরতত্ব অপরিসীম।
১৯।ডেট সার্ভিস কভারেজ
রেশিওঃ
একটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ
ও স্বল্পমেয়াদী ঋণগ্রহণ ক্ষমতা যাচাই এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছলতা বিচার
করার জন্য এই অনুপাত ব্যবহার করা হয়। নিমণলিখিত সূত্র প্রয়োগ করে এ অনুপাত নির্নয়
করা যায়ঃ
ডেট সার্ভিস কভারেজ
রেশিও = কর পরবর্তী নীট মুনাফা + দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সুদ/ পরিশোধ্য ঋণের আসল +
দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সুদ। অন্য কথায় কর-উত্তর ও সুদ-পূর্ব নীট আয়কে ঋণ জনিত দায়ের
পরিমান দিয়ে ভাগ করলে এই অনুপাত পাওয়া যায়। এই অনুপাত যত বেশি হবে প্রতিষ্ঠানকে তত
স্বচ্ছল হিসেবে ধরা যায় যায় এবং তার ঋণ ধারণ ক্ষমতাও তত বেশি বলা যায়। ফলে যেসব
প্রতিষ্ঠানের জন্য এই হার অধিক সেগুলিকে নিরাপদে এবং অধিক নিশ্চয়তার সঙ্গে ঋণ
প্রদান করা যায়।
২০। কারিগরী সম্ভাব্যতাঃ
একটি প্রকল্পের কারিগরী
সম্ভাব্যতা বিচারের সময় তা প্রকৌশল ও প্রযু¤ুত্তুগত বিবেচনায় যথার্থ কিনা তা
পরীক্ষা করা হয়। এখানে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ধরণ ও পরিমান, উৎপাদনের বিভিন্ন
প্রত্রিুয়া, উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল, যমএপাতি ইত্যাদি এবং ভৌত সুবিধাদি, ভবনাদি ও
তদভ্যমতরে যমএসরঞ্জামাদি বিন্যাস, আমদানীকৃত কাঁচামাল ও যমএপাতির সঙ্গে সহানীয়
প্রযুত্তিু ও কর্মীদক্ষতার সমন্বয় ইত্যাদি পর্যালোচনা প্রধান বিষয়। কারিগরী
সম্ভাব্যতা যাচাই এর সময় মোট উৎপাদন ক্ষমতা এবং তার সম্ভাব্য ব্যবহারের মাত্রা এবং
বিদ্যুৎ, জ্বালানী, পানি, গ্যাস ইত্যাদি সরবরাহের নিশ্চয়তা, কাঁচামাল ও উৎপাদিত
পণ্য সামগ্রী পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা, উৎপাদিত উপজাত দ্রব্যাদি এসবও বিবেচন্য বিষয়।
মোট কথা কারিগরী সম্ভাব্যতা পরীক্ষা অর্থ হচ্ছে প্রকল্পটি প্রযুত্তিুগত ও কারিগরী
দিক থেকে সহানীয় পরিবেশে যতদূর যথাযথ ও উপযোগী, বাসতবায়নযোগ্য এবং লাভজনক তা যাচাই
করে দেখা।
২১। বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকি
ব্যবসহাপনাঃ
ঝুঁকি
হলো আর্থিক ক্ষতি সংত্রুামত অনিশ্চয়তা। অপরদিকে ব্যবসহাপনা হলো এমন একটি সাফল্য
প্রত্রিুয়া যার মাধ্যমে কোন উদ্যোগকে সফল করা অথবা কোন উদ্দেশ্যকে অর্জন বা বাসতবায়ন
তথা কোন কার্যত্রুমকে সুসম্পন্ন করা বুঝায়। সুতরাং যে প্রত্রিুয়ার মাধ্যমে ক)
ঝুঁকি চিহিুতকরণ খ) ঝুঁকি তথা ক্ষতির পরিমান নিরদপন গ) ঝুঁকি মোকাবেলা করার
সর্বাধিক কার্যকর ও উপযোগী পমহা নির্বাচন করা যায় তাকে ঝুঁকি ব্যবসহাপনা বলে।
ব্যবসায়ে বা বিনিয়োগকৃত প্রকল্পে সাধারণতঃ নিমণলিখিত ঝুঁকিসমূহ দেখা যায়ঃ ক)
অর্থনৈতিক ঝুঁকি খ) প্রযুত্তিুগত ঝুঁকি গ) প্রতিযোগিতার ঝুঁকি ঘ) রাজনৈতিক ঝুঁকি
ঙ) মুদ্রাস্ফীতি জনিত ঝুঁকি চ) ভোত্তুার অধিকারজনিত ঝুঁকি ছ) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের
অভ্যমতরীণ উপাদান সম্পর্কিত ঝুঁকি জ) প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত ঝুঁকি ইত্যাদি।
২২।ঋণ অবলোপনঃ
সহজ অর্থে অবলোপন হচ্ছে
প্রদানকৃত ঋণের একটি অংশ গুণগত মান হ্রাস পেয়ে যখন আদায়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তখন
হিসাবের খাত অনাবশ্যকভাবে স্ফীত না করে এর বিপরীতে পর্যাপ্ত সংসহান করে ঋণ হিসাবটি
সিহতিপত্র থেকে বাদ দেয়ার নিয়মকে ঋণ অবলোপন বলে। ঋণ অবলোপন আমতর্জাতিকভাবে স্বীকৃত
ও প্রচলিত একটি পদ্ধতি। ঋণ অবলোপন অর্থ ঋণের দায় হতে ঋণ গ্রহীতাকে মুত্তিু দেয়া
বুঝায় না। বরং বলা যেতে পারে ব্যালান্স শীট এর আকার অনাবশ্যক ও কৃত্রিমভাবে স্ফীত
না করে এর বিপরীতে সংসহানের ব্যবসহা করে ব্যালান্স শীট থেকে একে মুত্তিু দেয়াকে
বুঝায়। অবলোপনের পরও সংশ্লিষ্ট ঋণের উপর ব্যাংকের দাবী বহাল রাখার লক্ষ্যে ২০০১
সালে ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ধারা ২৮ তে নতুন ভাবে সন্নিবেশিত করে আদায় বিষয়ক
সম্ভাব্য আইনগত জটিলতা নিরসন করা হয়েছে।
২৩) ব্যাংক রেটঃ
ব্যাংক হারের পরিবর্তন দ্বারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ নিয়মএন করতে
পারে। যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনিময় বিলের পরিবর্তে ঋণ
দেয় তাকে ব্যাংক রেট বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক হারের সাথে বাণিজ্যিক
ব্যাংকের সুদের হারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। সমাজে ঋণের পরিমান কমাতে হলে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক ব্যাংক হার বাড়িয়ে দেয়। এতে বাজারে সুদের হার বেড়ে যায় ও ঋণ গ্রহণের ব্যয়
বৃদ্ধি পায়। ফলে বিনিয়োগ হ্রাস পায় এবং সমাজে আর্থিক স্রোতের ভাটা পড়ে। পক্ষামতরে
ব্যাংক হার হ্রাস করলে ঋণ গ্রহণের ব্যয় কমে আসে। ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় এবং সমাজে
আর্থিক স্রোতে জোয়ার আসে।
২৪) ঋণের মূল্য
নির্ধারণঃ ব্যাংক ব্যবসার সাফল্য বা ব্যাংকের সবচেয়ে জটিলতম বিষয় হলো ব্যাংক ঋণের
মূল্য নির্ধারণ। যে হারে ব্যাংক তার মক্কেলদেরকে বিভিন্ন খাতে ঋণ দিতে প্রসতুত
থাকে তাকে ব্যাংকের ভাষায় মূল্য নির্ধারণ বলে। মূল্য নির্ধারণের সময় ব্যাংককে
বিভিন্ন ব্যয় পরিমাপ করতে হয় এবং বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে এটি করা হয়। ঋণ
গ্রহণকারী মক্কেলগণ অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী থাকে যাতে মেয়াদামেত
মক্কেলের পক্ষে ঋণ পরিশোধ কষ্টকর না হয়। মক্কেল কর্তৃক ব্যাংকের সুদ বহন কষ্টকর বা
বৃদ্ধি পেলে বিকল্প উৎস সন্ধানে তারা তৎপর হয়। এমনকি তখন মুদ্রা বাজারের অন্যান্য
উৎস থেকেও যুত্তিুযুত্তু মূল্যে ঋণ গ্রহণে সচেষ্ট হতে দেখা যায়। এরদপ ঋণদাতা ও
গ্রহীতার দর কষাকষিতে বাজারে ঋণের মূল্য বা সুদ নির্ধারণ হয়ে থাকে। এটি ব্যাংকের
সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়।
২৫) কোম্পানী নীট
ওয়ার্থঃ এ অনুপাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ মেয়াদী সামর্থসহ কোম্পানীর শেয়ার
স্টকের মূল্য নির্বাচন করে থাকে। নিমেণাত্তু হিসাবের মাধ্যমে এ অনুপাত করা হয়ঃ নীট
মূল্য অর্থাৎ মূলধন + সঞ্চিত মুনাফা/ মোট সম্পত্তি
উল্লেখ্য যে, অনুপাতের
হার বেশি হলে বাজারে শেয়ার ও স্টকের দাম বৃদ্ধি পাবে। স্বভাবতঃই তখন কারবারও
আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল হবে।
২৬) প্রকল্প মূল্যায়নঃ প্রকল্পের সাথে বিপুল
পরিমান অর্থ জড়িত। প্রকল্প লাভজনক হলেই ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত ঋণের অর্থ ফেরত
পাবার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য ব্যাংক কর্তৃক কোন প্রকল্পে অর্থায়নের পূর্বে
প্রকল্পটি লাভজনক হবে কিনা বা ব্যাংক কর্তৃক গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সে বিবেচনা করে
থাকে। এজন্য প্রকল্প নির্বাচন বা অর্থায়নের পূর্বে ব্যাংককে প্রকল্প সম্পর্কে
বিশদভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। প্রকল্প মূল্যায়নের বিষয়টিকে কেউ কেউ খুব বেশি গুরতত্ব
দিতে চান না। তাদের যুত্তিু হচ্ছে উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলেই যথেষ্ট, বড়
জোড় তার ব্যবসহাপনা শত্তু করে অপচয় রোধ করলেই বিনিয়োগ লাভ দিতে পারে। প্রকল্প
মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবচেয়ে বেশি লাভজনক ও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রকল্পটি
নির্বাচন করা যাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার মূল লক্ষ অর্জনে সহায়ক হতে
পারে। এই মূল্যায়নের কতগুলি পদ্ধতি আছে ১) সনাতন পদ্ধতি-পে ব্যাক সময় পদ্ধতি খ) গড়
মুনাফা হার পদ্ধতি ২) বাট্রাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতি-ক) নীট বর্তমান মূল্য খ)
অভ্যমতরীন মুনাফা হার গ) মুনাফা অর্জন ক্ষমতার সুচক পদ্ধতি
২৭) ব্যাংক গ্যারান্টিঃ ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের
জন্য ঋণ গ্রহীতার পক্ষে কোন তৃতীয় পক্ষ দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাকে ব্যাংক গ্যারান্টি
বলে। ভারতীয় চুত্তিু আইনের ১৮৭২ এর ৯ নং চুত্তিুর ১২৬ ধারায় গ্যারান্টি সম্পর্কে
বলা হয়েছে যে, গ্যারান্টি হলো এমন একটি চুত্তিু যেখানে তৃতীয় পক্ষ দেনাদারের
অক্ষমতায় দেনা বা ঋণ পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে। সুতরাং ব্যাংকের গ্যারান্টি হলো
এমন একটি গ্যারান্টি যাতে ব্যাংক তার কোন মক্কেলের অসমর্থনে তার দায়দেনা পরিশোধের
অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়। এরদপ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ত্রেুতার কাছে ব্যাংক জামিনদাতা
হিসেবে কাজ করে।
ব্যাংক গ্যারান্টি
পত্রের বেলায় দেনাদার ও পাওনাদার উভয় হতে পারে। যদি নিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে
পাওনাদার এবং গ্রাহকের অনুকূলে ব্যাংক কোন গ্যারান্টি পত্র প্রদান করলে সে দেনাদার
হিসেবে চিহিুত হয়।
২৮) বিনিময় বিল (বিল অব
এক্সচেঞ্জ)ঃ সাধারণ অর্থে বিনিময় বিল হচ্ছে নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ
প্রদানের জন্য একজন কর্তৃক আরেকজনের উপর একটি লিখিত শর্তহীন আদেশ। ১৮৮২ সালের
ইংল্যান্ডের বিনিময় বিল আইনের ৩(১) ধারানুযায়ী বিনিময় বিল হচ্ছে প্রসতুতকারক
কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত শর্তহীন আদেশপত্র যাতে কোন নির্দিষ্ট ব্যত্তিুকে বা
তার প্রতিনিধিকে নির্দিষ্ট তারিখে একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদান করতে হয়।
অর্থাৎ উল্লেখিত সংগাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিনিময় বিলে টাকার পরিমান,
টাকা পরিশোধের সময়, তারিখ ও সহান লিপিবদ্ধ থাকে এবং এতে তিনটি পক্ষ-আদেষ্টা, আদিষ্ট
ও প্রাপক থাকে। বিনিময় বিল ভাঙ্গানো বা বাট্রাকরণ আধুনিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি
লাভজনক ব্যবসা হিসেবে স্বীকৃত। প্রয়োজনবোধে ব্যাংক বা বিলের ত্রুয়সূত্রে মালিক
বিলটি পুনঃবাট্রাকরণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন আইনগত বাধা নেই বলে বাট্রাকরণ এক
ধরণের হসতামতর বিধায় যথানিয়মে বিলটি ব্যাংকের নিকট হসতামতর করতে হয়।
২৯) অপ্রত্যাহারযোগ্য
প্রত্যয়পত্রঃ নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে গ্রহীতার অনুমতি ব্যতিত ব্যাংক
যে প্রত্যয়পত্র বাতিল বা সংশোধন করতে পারে না তাকে অপ্রত্যাহারযোগ্য প্রত্যয়পত্র
বলে। অপ্রত্যাহারযোগ্য প্রত্যয়পত্রের ক্ষেত্রে গ্রহীতা ও ব্যাংকের মধ্যে আইনগত
বাধ্যবাধকতা থাকে। এজন্য গ্রহীতার মৃত্যু হলে বা দেউলিয়া ঘোষিত হলে এই
প্রত্যয়পত্রের আওতাধীনে ব্যাংককে বিলের মর্যাদা প্রদান করতে হয়। রপ্তানীকারকের
দৃষ্টিকোন হতে একটি অপ্রত্যাহারযোগ্য প্রত্যয়পত্র হলো তার বিত্রিুত পণ্যের মূল্য প্রাপ্তি
সম্পর্কে সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা, কারণ সে জানে যে সে যদি প্রত্যয়পত্রের শর্তসমূহ
সঠিকভাবে মেনে চলে তাহলে সে অবশ্যই তার পণ্যের মূল্য পাবে।
৩০) তারল্য ব্যবসহাপনাঃ ব্যাংক যে অর্থ হাতে
রাখে তা তরল সম্পদ নামে পরিচিত। আর তারল্যতা বলতে বিনিয়েঅগ বা সম্পদকে নগদ টাকায়
রদপামতরিত করা সুবিধাকে বুঝায়। ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তারল্যতা
ব্যাংকের কাছে সবচেয়ে গুরতত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ এই সমস্যা নিয়ে ব্যাংককে প্রায়শঃই
বিচলিত থাকতে হয়। তারল্যতা বজায় রাখার জন্য অধুনা তাই ব্যাংক ব্যবসহাপনাকে নব নব
নির্ণয় করতে হচ্ছে। এই সমসত কৌশলগুলো হচ্ছেঃ ক) সম্পত্তি রদপামতর কৌশল- এ কৌশলের
মূল উদ্দেশ্য হল নগদ অর্থ বা নগদে রদপামতরিত করা যায় এমন সব সম্পত্তি সহজেই তারল্য
সংরক্ষণে ব্যবহদত হয়। খ) দায় ব্যবসহাপনা কৌশল- এ কৌশলটিকে কোন কোন ব্যাংক বিশেষজ্ঞ
বা ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ ত্রুয় করা তারল্য অথবা ধার করা তারল্য বলে অভিহিত করে
থাকেন। এক্ষেত্রে ধার করে তহবিল সংসহান
করা হয় তখনই যখন তারল্য প্রয়োজন আসন্ন। এতে সম্পত্তি রদপামতর কৌশলের মত
অনুপার্জনশীল বা স্বল্প উপার্জনশীল খাতে প্রায় অলসভাবে তহবিল ধরে রাখতে হয় না। গ)
ভারসাম্যপূর্ণ তারল্য ব্যবসহাপনা কৌশল -তারল্যের ব্যবসহাপনায় সম্পত্তি ও রদপামতর
কৌশল অবলম্বনে স্বল্প উপার্জনক্ষম সম্পত্তিতে তহবিল ধরে রাখা অলস তহবিলেরই
নামামতর। এতে তারল্য ব্যবসহাপনা খরচ যথেষ্ট বেশি। অপরপক্ষে ধার করা তহবিলের
মাধ্যমে সংগৃহিত তারল্যের প্রদেয় সুদ খরচও নিতামত কম নয়। এই উভয় কৌশলের কোনটি
এককভাবে অবলম্বন না করে বরং এই দুটো কৌশলের যুত্তিুযুত্তু সমন্বয়ের মাধ্যমে তারল্য
ব্যবসহাপনা করার নামই হলো ভারসাম্যপূর্ণ তারল্য ব্যবসহাপনা কৌশল।
৩১) ঋণ পুনঃতফসিলীকরণঃ
মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ
পুনঃতফসিলীকরণ বিষয়টি প্রায়ই শোনা যায়। কোন ঋণের মেয়াদ নির্ধারিত থাকলে নির্দিষ্ট
মেয়াদামেত ঋণ পরিশোধ না হলে যদি সেই মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করা হয় তবে বিষয়টিকে ঋণ
পুনঃতফসিলীকরণ নামে অভিহিত করা হয়। ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে কিছু শর্তাদি
অবশ্যই মেনে চলতে হয়। তদুপরি বাংলাদেশে ব্যাংকিং ক্ষেত্রে পুনঃ তফসিলীকরণ ব্যবসহায়
খেলাপী ঋণ আদায়ে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। কারণ শ্রেণীকৃত ঋণকে অশ্রেণীকৃত
বা নিয়মিত দেখানোর ক্ষেত্রে কোন কোন ব্যবসহাপনা কর্তৃপক্ষ ঋণকে পুনঃ তফসিল করে
থাকেন যে প্রেক্ষিতে সেই ঋণকে শ্রেণীকৃত হিসেবে দেখানো যায় না। বর্ণিত সমস্যা
সার্বিকভাবে পর্যালোচনাপূর্বক ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার
ইতিপূর্বেকার সার্কুলার বাতিল কলে ১৩ জানুয়ারি, ২০০৩ ইং তারিখ বিআরপিডি সার্কুলার
নং-১ জারী করে এবং সকল তফসিলী ব্যাংককে উত্তু সার্কুলারের নীতিমালা অনুসরণ করতে
বলে।
৩২) তহবিল ব্যবসহাপনাঃ ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং কোম্পানী
অধ্যাদেশের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, ১) তফসিলী ব্যাংক ব্যতীত প্রতিটি ব্যাংক
কোম্পানী বাংলাদেশে সংরক্ষিত নগদ তহবিল হিসাবে ইহার মেয়াদী ও তলবী দায় এর ৫% এর
সমপরিমান নগদ অর্থ নিজের কাছে বা বাংলাদেশ ব্যাংক বা উহার প্রতিনিধিত্বকারী
ব্যাংকে বা উভয় ব্যাংকে সমান অংশে মওকুফ রাখিবে।
উপধারা ৪ এ বলা হয়েছে
যে, ব্যাংক কোম্পানী মওজুদ অর্থ উপধারা ৯১) এর অধীন নূন্যতম নগদ অর্থ অপেক্ষা কম
হলে বাংলাদেশ ব্যাংক উত্তু কোম্পানীকে উত্তু ঘাটতির উপর উহাকে ব্যাংক রেট অপেক্ষা
৩% বেশিহারে উত্তু দিবসের জন্য জরিমানামূলক সুদ প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারবে এবং
অনুরদপ পরবর্তী কোন বিবরণী হতেও যদি দেখা যায় যে, উহা দাখিলের জন্য নির্ধারিত
দিবসের পূর্বে যে কোন দিবসের কাজের সমাপ্তিতে উত্তু কোম্পানীর মওজুদ উপ-ধারা(১) এর
অধীন নির্ধারিত নূন্যতম নগদ অপেক্ষা কম ছিল, তা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক উত্তু কোম্পানীকে
উত্তু ঘাটতির উপর তাকে ব্যাংক রেট অপেক্ষা ৫% বেশি হারে দিনগুলির জন্য জরিমানামূলক
সুদ প্রদানের আদেশ দিতে পারে।
এ আদেশ অমান্য করলে
অমান্যকারী ব্যাংককে নুতন আমানত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উত্তু
আদেশ প্রতিপালন করে ব্যাংকের অসিতত্ব রক্ষা এবং আমানতকারীদের আমানতের টাকা
চাহিদামাত্র ফেরত দেয়া এবং উদ্বৃত্ত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে অধিক পরিমান মুনাফা
অর্জন এ সকল কার্য সুষ্ঠভাবে ও দক্ষতার সাথে করা হচ্ছে ব্যাংকের তহবিল ব্যবসহাপনা।
তহবিল হচ্ছে ব্যাংকের প্রাণ এবং এর সুষ্ঠ ব্যবহার ব্যাংকের শ্রীবৃদ্ধির জন্য
অপরিহার্য।
৩৩) লোন প্রভিশনিংঃ ব্যাংক ব্যবসহায়
গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত নিয়ে তা ব্যাংক বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করে। এই
বিনিয়োগ মাধ্যম হলো সাধারণতঃ ঋণ-অগ্রিম প্রদান। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু
অবশ্যম্ভাবী নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। যার মধ্যে লোন প্রভিশনিং সর্বাধিক
গুরতত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক ১৯৮৯ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর
মেয়াদোত্তীর্ণ, খেলাপী, মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ঋণের নিরাপত্তাজনিত কারণে
ব্যাংকগুলোর উপর সঞ্চিতি ইসেতহার জারী করে। ঋণকে সাধারণতঃ দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
ক) অশ্রেণীকৃত খ)
শ্রেণীকৃত
শ্রেণীকৃত ঋণকে আবার
তিনভাগে ভাগ করা যায়।
ক) সাব-স্ট্যান্ডার্ড,
এক্ষেত্রে সঞ্চিতি রাখতে হয় মূল ঋণের ২৫%
খ) ডাউটফুল, এক্ষেত্রে
সঞ্চিতি রাখতে হয় ৫০%
গ) ব্যাড/লস, এক্ষেত্রে
১০০% প্রভিশন রাখতে হয়।
৩৪)
অভ্যমতরীন নিয়মএন ব্যবসহাঃ অভ্যমতরীন নিয়মএন বলতে কারবারের
আর্থিক এবং সাংগঠনিক সকল প্রকার নিয়মএনকে বুঝায়। যে ব্যবসহা অনুযায়ী কারবারের
কর্মচারীগণের মধ্যে এমনভাবে কার্যের বন্টন করা হয় যে, কোন একজন কর্মচারীকে একটি
লেনদেন সংত্রুামত প্রথম হতে শেষ পর্যমত সকল কার্য সম্পন্ন করতে দেওয়া হয় না এবং
একজন কর্মচারী কার্য আর একজন কর্মচারী কর্তৃক নিরপেক্ষভাবে আপনা হতে পরীক্ষিত হয়ে
যায়। এ ব্যবসহাকে অভ্যমতরীন নিবারণ ব্যবসহা বলা যায়। অভ্যমতরীণ নিবারণ অভ্যমতরীণ
হিসাব পরীক্ষা এবং অন্যান্য সকল প্রকার নিয়মএনই অভ্যমতরীন নিয়মএনের অমতর্ভূত্তু।
অভ্যমতরীণ নিবারণ অভ্যমতরীণ নিয়মএন ব্যবসহারই অংশবিশেষ। অভ্যমতরীন নিবারণ
অভ্যমতরীন নিয়মএন ব্যবসহারই অংশ বিশেষ সুতরাং কার্যের পরিধির দিক হতে অভ্যমতরীণ
নিয়মএনের পরিধি অভ্যমতরীণ নিবারণ অপেক্ষা ব্যাপক। কারবারের সম্পত্তির যথাযথ রক্ষণ
অর্থাৎ কারবারের সম্পত্তি সংত্রুামত জুয়াচুরি যথাসাধ্য নিবারণ করা এবং নির্ভূল
হিসাবাদি রক্ষা করারই অভ্যমতরীণ নিবারণের মূখ্য উদ্দেশ্য। এক কথায় কারবারের আর্থিক
দিকের যথাযথ নিয়মএনই অভ্যমতরীন নিবারণ ব্যবসহার মূল লক্ষ্য। কিমও, অভ্যমতরীন
নিয়মএন ব্যবসহার দ্বারা কারবারের আর্থিক দিক ছাড়া কারবারের পরিচালনা ও সংগঠনের
নিয়মএন ব্যবসহাও করা হয়।
No comments:
Post a Comment