১। হিসাববিজ্ঞান কি? ব্যাংকিং
ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞানের সুবিধা বা উপকারিতাসমূহ আলোচনা করুন ।
হিসাববিজ্ঞানঃ ‘হিসাব’ বলতে বুঝায় কোন বিষয় সম্বন্ধে সঠিক ও
নির্ভুল তথ্য এবং ‘বিজ্ঞান’ বলতে বুঝায় কোন বিষয় সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান বা কোন বিষয়ের পরীক্ষিত সত্যতাকে।
সুতরাং,
হিসাববিজ্ঞান হলো ‘হিসাব তথ্যের
বিজ্ঞান’।
কোন প্রতিষ্ঠানের কোন সময়কালে
সংঘটিত আর্থিক লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে সেগুলোর সামগ্রিক ফলাফল ও উক্ত
প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা নির্ণয় এবং পর্যালোচনা করে সবগুলো তথ্য ব্যবহারকারীর
নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়ার পদ্ধতিকে হিসাববিজ্ঞান বলা হয়।
অর্থাৎ, একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক উপাত্তসমূহের লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণীবদ্ধকরণ, প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং উহার
বিশ্লেষণের কৌশলই হলো হিসাববিজ্ঞান।
ব্যাংকিং ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞানের
সুবিধা বা উপকারিতাসমূহঃ ব্যাংক গ্রাহকের আস্থা
বা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা করে। তাই সঠিক হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে ব্যাংক
জনগণের আস্থা অর্জন করে।
ব্যাংকিং ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞানের
উপকারিতা বা সুবিধাসমূহ নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১। স্থায়ী হিসাবকরণঃ ব্যাংকিং
প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন সকল লেনদেনসমূহকে হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে স্থায়ী ও
সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এ রক্ষিত হিসাব ভবিষ্যতে উৎস হিসেবে কাজ করে।
২। আমানতকারীদের তাৎক্ষণিক তথ্য
প্রদানঃ ব্যাংকিং তহবিলের মূল উৎস আমানতকারীগণ। তাদের আস্থার উপর ব্যাংকের সাফল্য
নির্ভরশীল। সঠিক হিসাবরক্ষণের মাধ্যমে আমানতকারীদের হিসাবের সর্বশেষ তথ্য প্রদান
করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
৩। অগ্রিম গ্রহণকারীদের হিসাবরক্ষণঃ
হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে অগ্রিম বা ঋণগ্রহণকারীদের হিসাব সঠিকভাবে রাখা
যায়। ফলে ব্যাংকের মূল আয় সুদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
৪। লাভ-ক্ষতি নির্ণয়ঃ একটি
নির্দিষ্ট সময়ে বা এক বছরে ব্যাংক কী পরিমাণ লাভ করলো বা ক্ষতির সম্মুখীন হলো তা
হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে জানা যায়।
৫। আর্থিক অবস্থাঃ একটি নির্দিষ্ট
দিনে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অর্থাৎ দায় ও সম্পত্তির অবস্থা একমাত্র হিসাববিজ্ঞান
প্রয়োগের মাধ্যমেই জানা যায়।
৬। জালিয়াতি রোধঃ জালিয়াতি
ব্যাংকিং ব্যবসায়ের সুনাম নষ্ট করে। হিসাববিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে
জালিয়াতি রোধ করা যায়।
৭। সুদ ও বাট্টার হিসাবঃ
হিসাববিজ্ঞানের কৌশল অবলম্বন করে হিসাবকালের জন্য অর্জিত সুদ ও বাট্টার হিসাব করা
হয়।
৮। ব্যয় নিয়ন্ত্রণঃ ব্যাংক পরিচালনার
জন্য প্রতিটি ব্যাংককে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়। হিসাববিজ্ঞানের কৌশল
অবলম্বন করে এই খরচ হিসাবভুক্ত করা হয় এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৯। প্রমাণপত্র হিসাবে ব্যবহারঃ
আইনগত প্রয়োজনে রক্ষিত হিসাব প্রমাণপত্র হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
২। একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাববিজ্ঞানের
ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করুন।
কোনো প্রতিষ্ঠানে হিসাববিজ্ঞানের
ভূমিকাঃ আধুনিক হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায়ের সঙ্গে
জড়িত সঠিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তথা লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে
হিসাববিজ্ঞান যেসব ভূমিকা পালন করে তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
(১) সিদ্ধান্ত গ্রহণে
ভূমিকাঃ হিসাববিজ্ঞানের একটি ভূমিকা হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর ভূমিকা। সিদ্ধান্ত
গ্রহণ প্রক্রিয়া হলো সম্ভাব্য বিকল্পসমূহ থেকে সর্বোত্তম বিকল্পটি বেছে নেওয়া।
এক্ষেত্রে ‘কার্য নির্বাচন’ ও ‘তথ্য নির্বাচন’ এ দুটি সিদ্ধান্ত যাচাই করতে হয়।
(২) ব্যবস্থাপনার সহায়ক
হিসেবে ভূমিকাঃ এ ভূমিকা পালনের জন্য হিসাববিজ্ঞানের কাজ মূলত দু’টি। যথাঃ- (ক) মনোযোগ নির্দেশ এবং (খ) সমস্যা সমাধান।
(৩) বিনিয়োগকারীদের জন্য
ভূমিকাঃ একজন বিনিয়োগকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন কি-না তৎসম্পর্কে
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিনিয়োগ সুযোগ বিশ্লেষণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের
হিসাব সংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন হয়। হিসাববিজ্ঞান এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ
করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
(৪) পরিকল্পনা প্রণয়নে
ভূমিকাঃ পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞান যথার্থ তথ্য ব্যবস্থাপনা
কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করে ব্যবস্থাপকের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৫) নিয়ন্ত্রণমূলক ভূমিকাঃ
বাজেট নিয়ন্ত্রণ, ব্যয় হিসাব ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসায়ের
গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আরোপের ক্ষেত্রে
হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
(৬) মালিকানা স্বার্থ
সংরক্ষণে ভূমিকাঃ হিসাববিজ্ঞান একটি আর্থিক পদ্ধতির সাহায্যে ব্যবসায়ের সঠিক তথ্য
মালিকানা কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপনের মাধ্যমে মালিকানা স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা
পালন করে থাকে।
৩। হিসাববিজ্ঞান কীভাবে
প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনায় সাহায্য করে?
একটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও
পরিচালনায় হিসাববিজ্ঞানের ভুমিকাসমূহ নিচে আলোচনা করা হলোঃ
(১) আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হওয়ার
সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করা হয়, ফলে ১০০% আর্থিক
নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
(২) খতিয়ান তৈরির মাধ্যমে খাতওয়ারী
হিসাবের মোট পরিমাণ জানা যায়। ফলে হিসাবকাল শেষে প্রকৃত খরচের সাথে বাজেটের তুলনা
করে খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
(৩) রেওয়ামিল প্রস্তুতের মাধ্যমে
হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়। ফলে সহজেই ভুল-ত্র“টি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
(৪) সমন্বয় দাখিলার মধ্যে বাদ পড়া
হিসাবসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে আর্থিক ফলাফল সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়, যা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
(৫) Balance Sheet-এর মাধ্যমে কারবারের দায় এবং সম্পত্তি সঠিক ও যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়। ফলে
দায় ও সম্পত্তি নিয়ন্ত্রিত হয়।
৪। হিসাববিজ্ঞান এর ক্রিয়ামূলক এবং
পরিচালনামূলক সংজ্ঞা দিন।
হিসাববিজ্ঞানের ক্রিয়ামূলক (Functional) সংজ্ঞাঃ হিসাববিজ্ঞান যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণীকরণ, সংক্ষিপ্তকরণ, ফলাফল (লাভ/ক্ষতি) নির্ণয়, উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত,
নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত, ব্যবহারকারীদের
নিকট আর্থিক তথ্য জ্ঞাপন এবং আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণজনিত কার্যাবলির মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকে তখন তাকে ক্রিয়ামূলক হিসাববিজ্ঞান বলা হয়।
হিসাববিজ্ঞানের পরিচালনামূলক (Operational) সংজ্ঞাঃ হিসাববিজ্ঞান যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ, পরিচালনা প্রণয়ন, বাজেট তৈরিকরণ,
ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন,
ভুল ও জুয়াচুরি প্রতিরোধ এবং তহবিলের উৎস নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ
কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তখন তাকে পরিচালনামূলক হিসাববিজ্ঞান বলা হয়।
৫। Forensic হিসাববিজ্ঞান কী? এই
হিসাববিজ্ঞান কি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যায়?
Forensic হিসাববিজ্ঞানঃ হিসাব সংশ্লিষ্ট জটিলতা নিয়ে যখন কোর্টে কোনো মামলা হয় তখন কোর্ট হিসাববিষয়ক
জটিলতা নিরসনের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসাববিজ্ঞানী নিয়োগ করে তদন্ত করার মাধ্যমে
প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ সংগ্রহ করেন। এই তদন্ত প্রক্রিয়াকে Forensic Accounting বলা হয়। এক্ষেত্রে
মামলা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিগত হিসাববিষয়ক কর্মকান্ড যাচাই করা হয়। হিসাব
অসম্পূর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রেও দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসাবরক্ষক বা হিসাববিজ্ঞানী দ্বারা
হিসাবসম্পূর্ণ করা হয়। সুতরাং বলা যায় যে, হিসাববিষয়ক জটিলতা
নিরসনের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসাববিজ্ঞানীর তথ্য, উপাত্ত ও
দালিলিক মতামত গ্রহণকে Forensic Accounting বলে।
Forensic হিসাববিজ্ঞান ও
বাংলাদেশঃ বাংলাদেশে বেশির ভাগ অর্থনৈতিক খাত
দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি
হচ্ছে। সুতরাং Forensic Accounting প্রয়োগের মাধ্যমে এ দুর্নীতি রোধ করা যেতে পারে।
তবে Forensic Accounting প্রয়োগের পূর্বে ব্যয়
ও উপকার তুলনা (Cost Benefit Comparison) করে দেখতে হবে তা
ইতিবাচক কিনা।
No comments:
Post a Comment