মুদ্রানীতিঃ যে নীতির সাহায্যে দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা পরিচালনা এবং মুদ্রার যোগান ও ঋণের
পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জন করা হয় তাকে মুদ্রানীতি
বলে। মুদ্রানীতি বলতে সংক্ষেপে সরকারের অর্থ সংক্রান্ত নীতিকেই বুঝায়। অধ্যাপক
আর.পি.কেন্ট বলেন, “ পূর্ণ নিয়োগের
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচলিত অর্থের যোগানের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধির
পরিচালনার নীতিকে মুদ্রানীতি বলা হয়। অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে মুদ্রানীতি একটি
অপরিহার্য্য হাতিয়ার। সকল দেশের মুদ্রানীতি একই রকম হয়না। মুদ্রানীতি প্রণয়ন দেশের
ক) ভৌগলিক অবস্থান খ) সমাজ কাঠামো গ) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাই
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রানীতির বিভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলেছেন।
মুদ্রানীতির লক্ষ্যসমূহঃ মুদ্রানীতি হল একটা দেশের অর্থনৈতিক নীতির অপরিহার্য অঙ্গ। দেশের অর্থনৈতিক
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আর্থিক নীতি প্রয়োগ করা হয়। মুদ্রা নীতির
স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রয়েছে। স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে সুষ্ঠু ও
সাবলীল অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্পাদনের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অর্থের মূল্যের
আকস্মিক পরিবর্তনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেন বিপর্যস্ত না হয় তা নিশ্চিত করা।
পক্ষান্তরে, মুদ্রানীতির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়তা করা। সার্বিকভাবে এই লক্ষ্যকে সম্মুখে রেখে অর্থনীতিবিদগণ
মুদ্রা নীতির যে উদ্দেশাবলী নির্ণয় করেছেন তা নিম্নরূপঃ
অর্থের বাহ্যিক মূল্য নিয়ন্ত্রণঃ যেকোন দেশের মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হারের ঘন ঘন পরিবর্তন অর্থনীতিতে
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই বৈদেশিক বিনিময় হারের উপর রপ্তানি ও
আমদানি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাছাড়া মুদ্রার আভ্যন্তরীণ মূল্যও তার বৈদেশিক
বিনিময়ের হার দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই মুদ্রার বাহ্যিক মূল্যকে স্থিতিশীল রাখা বা
প্রয়োজনে পরিবর্তিত করা মুদ্রা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
অর্থের আভ্যন্তরীন মূল্য নিয়ন্ত্রণঃ অর্থের আভ্যন্তরীণ মূল্য বলতে দেশের ভেতরে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা বা তার বিপরীতে
মূল্যস্তর বুঝায়। মূল্যস্তরের ব্যাপারে তিন প্রকারের নীতি হচ্ছেঃ স্থির মূল্যস্তর
নীতি,
ক্রমহ্রাসমান মূল্য স্তর নীতি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্তর নীতি। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনেকের মতে মৃদু
হারে ক্রম বর্ধমান মূল্যস্তর মুদ্রা নীতির উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্চনীয়। তাঁদের মতে, দামস্তর যদি ক্রমশ অল্প অল্প বাড়তে থাকে তবে ব্যবসায়িক গন অধিক মুনাফা অর্জন
করতে সক্ষম হয় । অধিক মুনাফা লাভের সম্ভাবনা থাকলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উৎসাহ
বাড়ে। ফলে শিল্পে ও বাণিজ্যে বিনিয়োগের পরিমান বাড়ে, দেশে কর্মসংস্থান ও আয়স্তর প্রভৃতি বৃদ্ধি পায় এবং জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়।
নিরপেক্ষ অর্থ নিশ্চিত করাঃ নিরপেক্ষ অর্থ বলতে অর্থের এমন একটা ভূমিকা বুঝায় যে ভূমিকাতে অর্থ নিজস্ব
কোন প্রভাব বিস্তার করবে না এবং অর্থের অনুপস্থিতিতে অনার্থিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর
প্রভাবে যেভাবে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ হওয়ার কথা ছিল তাই নিশ্চিত করবে। এই ভূমিকা
পালন করতে হলে অর্থের কার্যকর যোগান স্থির থাকতে হবে। তার জন্যে যখন অর্থের প্রচলন গতি বৃদ্ধি পাবে আনুপাতিক হারে
অর্থের পরিমাণ হ্রাস পেতে হবে বা প্রচলন গতি হ্রাস পেলে অর্থের পরিমাণ আনুপাতিক
হারে বৃদ্ধি পেতে হবে। আবার অর্থনীতির কাঠামো প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে
অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে হবে। এ ধরনের নিরপেক্ষ অর্থের পক্ষে অধ্যাপক হায়েক এবং
আরও কয়েকজন অর্থনীতিবিদ জোরালো যুক্তি দিয়েছেন। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন
অর্থের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, অর্থ কখনই
নিরপেক্ষ নয়।
পূর্ণ নিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঃ আধুনিককালে উপকরণের পূর্ণ নিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মুদ্রা নীতির অন্যতম
উদ্দেশ্য হিসাবে প্রায় সর্বত্র গৃহীত হচ্ছে। অনুন্নত দেশসমূহে অর্থনৈতিক অগ্রগতি
বা ক্রমোন্নতিই আর্থিক নীতির লক্ষ্য বলে গৃহীত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত
চাহিদার অভাবে উপকরণের পূর্ণ নিয়োগ ব্যাহত হয়। তখন অর্থের যোগান বাড়িয়ে সুফল পাওয়া
যায়। আবার উন্নয়নশীল দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য মুদ্রা নীতি উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপসংহারঃ সকল দেশের আর্থিক নীতির লক্ষ্য উদ্দেশ্য এক নয়। আর্থিক নীতির লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত তা মূলত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে
সাধারণভাবে আর্থিক নীতির লক্ষ্য হওয়া উচ্তি অর্থের যোগন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে
দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণ বৃদ্ধি করা। অধ্যাপক S. K. Basu মনে করেন যে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক নীতির মূল লক্ষ হওয়া উচিত অর্থ সৃষ্টি এবং
সঞ্চয় ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানিকরকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সাহায্য
করা।
Can't Read from Android
ReplyDeleteI am sorry for late but now you can read from android
ReplyDelete